‘মাত্র ছয় মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। সংসার চালানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন আমার স্বামী। সেই রাতে তাঁর জন্য রান্না করে বসে ছিলাম। বাড়ি এলে একসঙ্গে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হলো না। কী দোষ করেছি, জানি না। আমার স্বামীকে কোন দোষে মরতে হলো? আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী, আল্লাহ তাদের বিচার করবে।’
৩ ডিসেম্বর সকালে বিলাপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন সাতকানিয়া উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের চাঁদেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমানের (২৮) স্ত্রী ফরিদা বেগম। গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় ১৮ দলের ডাকা অবরোধ চলাকালে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মারা যান মফিজুর রহমান। সাতকানিয়ার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নয়খাল নামক স্থানে ধাওয়া খাওয়া পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় তাঁর সঙ্গে পটিয়ার নিমাই নাথও (৪৫) নিহত হন।
মফিজুরের বাড়িজুড়ে এখন কেবলই শোকের মাতম।
স্থানীয় পুলিশ ও মফিজুরের আত্মীয়স্বজন জানান, ১৮ দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে গত শনিবার সন্ধ্যায় মফিজুর তাঁর কর্মস্থল কেরানীহাট থেকে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে মহাসড়ক হয়ে চাঁদেরপাড়া গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। মহাসড়কের নয়াখাল নামক এলাকায় অবরোধকারীরা চট্টগ্রামের দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানকে ধাওয়া করলে সেটি দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারী মফিজুর রহমান ও নিমাই নাথকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে উভয়ের মৃত্যু হয়। পরদিন রোববার ভোরে দোহাজারী হাইওয়ে থানার পুলিশ সড়কের পাশের খাদ থেকে পিকআপ ভ্যানটি সরালে চাপা পড়া মফিজুর রহমানের লাশ পাওয়া যায়।
মফিজুর রহমানের বড় ভাই মাহামুদুল হক (৩৬) বলেন, ‘আমরা চার ভাইবোনের মধ্যে মফিজ ছিল তৃতীয়। অভাবের সংসারে আমরা বড় দুই ভাই ছোট ভাইবোনদের অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। মফিজ এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। একটি তামাক কোম্পানির সহকারী বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করত সে। কী দোষ করেছিল আমার ভাই?’
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের বলেন, অবরোধ চলাকালে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় পিকআপ ভ্যান ধাক্কা দিলে মফিজুর রহমান ও নিমাই নাথের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার আগ্রহী নয় বলে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।