টেকসই ফ্যাশনের পতাকাবাহী তারকারা: পর্ব দুই
প্রথা ভেঙে ব্রিটিশ রাজবধূর পরনে এক দশকের পুরোনো পোশাক
২০২১ সালটা ছিল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ফেরার বছর। আর সেটা সফলভাবেই হয়েছে বললে বাড়াবাড়ি হবে না। গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ফ্যাশন উইক আবার ‘ভার্চ্যুয়াল’ থেকে ‘ফিজিক্যালে’ ফিরেছে। পুরস্কার বিতরণী, সিনেমার প্রিমিয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের লালগালিচায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফ্যাশন আর বিউটি মোমেন্ট। এরই মধ্যে ফ্যাশনের রথী–মহারথীরা জানান দিয়েছেন, ফ্যাশনের জন্য পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়, তা কমিয়ে আনতে তাঁরা বদ্ধপরিকর, প্রতিশ্রুতিশীল। আজ থাকছে টেকসই ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের নিয়ে লেখার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। সমস্ত ছবি ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া।
মহামারিকালে হলিউড তারকা জেন্ডায়া হয়ে উঠেছেন অনেক বড় তারকা। এই তো, দেশে চলছে জেন্ডায়া আর টম হল্যান্ড অভিনীত ‘স্পাইডারম্যান: নো ওয়ে হোম’। দুদিন ঢুঁ মেরেও যে ছবির টিকিট পাননি এই প্রতিবেদক। সব ‘সোল্ড’। এদিকে ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১১ কোটি ৬০ লাখ। সহশিল্পী টমের সঙ্গে প্রেম করছেন বলে গুঞ্জন। সেই গুঞ্জনের গোড়ায় নিজেরাই নিয়মিত পানি ঢালেন। ইনস্টাগ্রামে সম্প্রতি টমের একটি ছবি শেয়ার করেছেন জেন্ডায়া। সেই ছবির নিচে জড়ো হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ভক্তের ভালোবাসা। ফ্যাশন মুহূর্ত তৈরি করেও নিয়মিত আলোচনায় থাকেন জেন্ডায়া। ‘ভোগ ইউ’কে ২০২১ সালের সেরা ১০ ফ্যাশন মোমেন্টের যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে দুবার জায়গা করে নিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ সুপারস্টার।
জেন্ডায়া যে পোশাকই পরেন, সেখানে তিনি ফ্যাশনের মোমেন্ট তৈরির সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চান। ভারসাচি থেকে শুরু করে নটিস রবার্টো ক্যাভালির রেট্রো লুকের নব্বই দশকের ভিনটেজ কালেকশনের পোশাক চাপিয়ে রাস্তায় হেঁটেছেন তিনি। এভাবেই ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য থেকে বেরিয়ে পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে ফ্যাশনেবল জীবন যাপন করতে উৎসাহিত করেছেন জেন্ডায়া। ব্রিটিশ ‘ভোগ’–এর অক্টোবর ইস্যুর প্রচ্ছদকন্যা হয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি কথা বলেছেন, কীভাবে পুরোনো ফ্যাশন, টেকসই ফ্যাশন গায়ে চাপিয়ে একটি চমৎকার রেড কার্পেট মোমেন্ট তৈরি করা যায়।
হলিউড তারকা টিমোথি চালামেটও কম বয়সের বড় তারকা। ফ্যাশনের সবচেয়ে আজগুবি আর আকর্ষণীয় আয়োজন মেট গালায় উপস্থাপক হিসেবে বিলি আইলিশদের সঙ্গে দেখা দিয়েছেন। হাজির হয়েছেন ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। ফ্যাশন মোমেন্ট তৈরিতে তাঁরও আছে অবদান। লালগালিচায় তিনি হাজির হয়েছেন প্রাদার নাইলনের পোশাকে, যে পোশাক ৫০ বছর পরও থাকবে একই আবেদন নিয়ে। অস্কারের মঞ্চে দেখা দিয়েছেন নাটালি পোর্টম্যানের হাত ধরে। ৫০ বছর বয়সী ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনিকে টিমোথি রেখেছেন প্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনারের তালিকায়। স্টেলা কোনো কার্বন উৎপাদন না করেই পোশাক তৈরি করেন। ‘জিরো কার্বন’ ছাড়া তাঁর ফ্যাশনেবল পোশাক তৈরির আরেকটি মূলমন্ত্র হলো স্থায়িত্ব। স্টেলার তৈরি পোশাক টেকসই।
এ ছাড়া ২৫ বছর বয়সী টিমোথি এমন সব পোশাকের ব্র্যান্ড বাছাই করেছেন, যারা পোশাকের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। মার্কিন ফ্যাশন ডিজাইনার হিলারি টেমরের ব্র্যান্ড কলিনা স্ট্রাডার ১৮৯০–এর দশকের পোশাকের কালেকশন থেকে তিনি আধুনিককালের পার্টিতে পরার পোশাক নিয়েছেন। ‘সোলার পাওয়ার’ গানের ভিডিওতে ব্যবহৃত সব পোশাক এই ব্র্যান্ড থেকে নেওয়া। আর বলা বাহুল্য, সেগুলো টেকসই। ৩২ বছর বয়সী এমিলি অ্যাডামস বোডের ডিজাইন করা টেকসই পোশাকও পরেন তিনি।
মার্কিন ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার (প্রভাবক), ব্যবসায়ী জেমি শিয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলার বা ৪২৮ কোটি টাকা। জেমির বাবা কেন জি সিলিকন ভ্যালির ‘ফর্নিনেট’ কোম্পানির মালিক। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করে এই প্রতিষ্ঠান। ধনী এই নারীও ২০২১ সালে একাধিকবার দেখা দিয়েছেন ভিনটেজ লুকে। ব্যালেনসিয়াগা থেকে তিনি নতুন কালেকশন কেনেননি, বরং তুলে নিয়েছেন ২০০৮ সালের স্প্রিং–সামার কালেকশনের পোশাক। বসন্তে পরেছেন ভারসাচির ২০০৫ সালের স্প্রিং–সামার কালেকশন থেকে। এ বছর ডিওরের ২০০৪ সালের সিল্কের পোশাকও পরেছেন তিনি।
দ্য ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনও আছেন এই তালিকায়। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ডিজাইনারদের একজন জেনি প্যাকহামের বানানো গাঢ় সবুজ একটি গাউন তিনি প্রথা ভেঙে দুবার পরেছেন। প্রথমবার পরেছিলেন প্রায় এক দশক আগে। আর্থশট অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে। আর এ বছর পরলেন রয়্যাল ভ্যারাইটি শোতে। রাজপরিবারের বউ হয়ে রেড কার্পেট থেকে দূরে থেকেও কেট নিয়মিত রিসাইকেল করা পোশাক পরেছেন। এ বছর তিনি ব্রিটিশ ক্লোদিং ব্র্যান্ড টাস্টিং থেকে বেশ কিছু পোশাক নিয়েছেন। কপ ২৬–এ তিনি অংশ নিয়েছেন আপসাইকেল (পুরোনোকে নতুনভাবে ব্যবহার করে) করা নীল রঙের পোশাকে আর রিসাইকেলড (পুনর্ব্যবহৃত) উপাদানে তৈরি কালো একটি পার্স হাতে।