কিডনি বিকল প্রতিরোধে যা করবেন ডায়াবেটিস রোগীরা

ডায়াবেটিস বিশ্বজুড়ে কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালির সমস্যা হয়, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি। ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি ডায়াবেটিসের অন্যতম গুরুতর জটিলতা। এতে রোগীর প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন যেতে থাকে, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় এবং কিডনির কার্যকারিতা ক্রমেই কমতে থাকে। এটি এক ধরনের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। অর্থাৎ এ সমস্যায় দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকল হয়ে যায়।

টাইপ-১ কিংবা টাইপ-২ ডায়াবেটিস—উভয় রোগীরাই এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে কোনো কোনো ডায়াবেটিসের রোগীর ক্ষেত্রে এ সমস্যা হতে দেখা যায় না। এর পেছনে বংশগত কারণের ভূমিকা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত ডায়াবেটিসের শুরু থেকে ১০-২৫ বছর পর ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি জটিলতার সূত্রপাত হয়।

এ সমস্যায় শুরুর দিকে কিডনির আকার কিছুটা বড় হয়, তারপর প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ সময় রক্তচাপ এবং রক্তে নাইট্রোজেন বর্জ্য জমার হার বাড়তে থাকে। এভাবে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার শেষ ধাপে কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। এই সময় ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র চিকিৎসা।  

কাজেই ডায়াবেটিস নির্ণয়ের প্রথম দিন থেকেই কিডনি বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কিডনি সুস্থ রাখার প্রধানতম উপায় হলো ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ সুনিয়ন্ত্রণে রাখা। তা ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীকে প্রতিবছর এক বা দুবার কিডনির সার্বিক অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা নির্ধারণসহ কিডনির অবস্থাও জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য প্রস্রাবে প্রোটিনের মাত্রা, ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবে জমাকৃত মোট প্রোটিনের (আমিষ) পরিমাণ, রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন এবং রক্তের খনিজ বা ইলোকট্রোলাইট পরীক্ষা করতে হবে। কিডনি সমস্যা বাড়ায় এমন অন্য কোনো রোগ যেমন সংক্রমণ, পাথর, প্রোস্টেট বৃদ্ধি প্রভৃতির দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

ডায়াবেটিসের শুরু থেকেই কিডনি সুরক্ষাকারী কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সঠিকভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখা। রক্তের গড় শর্করার মাত্রা এইচবিএওয়ানসি ৮ শতাংশের কম রাখতে পারলে কিছুটা নিরাপদ থাকা যায়। যাঁরা কঠোরভাবে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাঁরা ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথির ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে পারেন। আর নেফ্রোপ্যাথি হয়ে গেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে পুরোনো অবস্থায় ফেরা না গেলেও জটিলতা বৃদ্ধির গতি ধীর করা সম্ভব।

রক্তচাপও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ডায়াবেটিস রোগীর নিরাপদ রক্তচাপ হলো ১৩০/৮০ মিলিমিটার পারদ। এর বেশি হলেই কিডনি ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কাজেই ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে প্রোটিন খেতে হবে। লবণ কম খেতে হবে। এ ছাড়া এই রোগীদের যতটা সম্ভব ব্যথানাশক ও অন্যান্য নেফ্রটক্সিক ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা ভালো। যাঁদের প্রস্রাবে প্রোটিন অধিক পরিমাণে পাওয়া গেছে অথবা রক্তে বেশি ইউরিয়া বা ক্রিয়োটিনিন আছে, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

* ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়