গরমেও আরামে ঘুম
গরমে দেশের প্রায় সব প্রান্তের মানুষ অস্থির। একই ব্যাপার ঘটছে যুক্তরাজ্যেও। এই গরমে কীভাবে আরাম করে ঘুমাবেন, অনেকেরই মাথায় সেটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু কারিকুরি মাথায় রাখলে তীব্র দাবদাহকেও টেক্কা দিয়ে নিয়মমতো ঘুমিয়ে যেতে পারবেন। যুক্তরাজ্যের লাউবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল স্লিপ রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক কেভিন মরগ্যানের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। তারই উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশিত হলো এখানে।
কম ঘুমে কী হয়?
একটা মানুষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার জন্য দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। দু–এক দিন এর কমবেশি হতেই পারে। তাতে স্বাভাবিক কাজের খুব একটা হেরফের হয় না। তবে নিয়মিত কম ঘুমালে নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। কম ঘুমের সঙ্গে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়া রোগ), বদমেজাজ, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, টিকার কার্যকারিতা কমে যাওয়া, শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, ঠান্ডা-কাশি ও মোটা হয়ে যাওয়া–সম্পর্কিত।
দিনের ঘুমকে বিদায় দিন
অন্য সময়ের তুলনায় গরমের দুপুরে আমাদের বেশি ক্লান্ত লাগে। কেননা শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকটা এনার্জি খরচ হয়ে যায়। তাই সূর্যটা একটু হেলে পড়লেই মন চায় শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিই। কিন্তু মন যতই চাক, আপনার যদি রাতে ঠিকমতো ঘুম না হয়, তাহলে দিনে ঘুমাবেন না। সারা দিনের ঘুমটা আপনি রাতের জন্য তুলে রাখুন।
রুটিন ঠিক রাখুন
বাইরের তাপমাত্রা চাইবে আপনার দৈনন্দিন রুটিন এলোমেলো করে ফেলতে। কিন্তু আপনি তা হতে দেবেন না। একবার তা হয়েছে তো রাতের ঘুম গড়বড় হয়ে যাবে। আগে যে সময়ে বিছানায় যেতেন, এখনো সেই সময় মেনে চলুন। আগে ঘুমানোর আগে যা যা করতেন, এখনো সেগুলোই করুন।
আপনার বেডরুম রাতে ঘুমানোর সময় স্বাভাবিকভাবে যতটা ঠান্ডা রাখা যায়, রাখবেন। দিনের বেলা পর্দা দিয়ে রোদের তাপকে আটকান। নতুবা সারা দিনের তাপ ঘরে জমে যাবে। আর রাতের বেলা বাইরের তাপমাত্রা যখন অনেকটা শীতল হয়ে এসেছে, মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে, এমন সময় পর্দা সরিয়ে দিন। তাতে বাইরের বাতাস ঘরের ভেতরেও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে।
প্রচুর পানি খান
সূর্য ডোবার আগপর্যন্ত প্রচুর পানি খান। শরীরের ভেতরের পানি বাইরের তাপের সঙ্গে আপনার শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য করবে। কেননা পানি অনেক তাপ শোষণ করে আর খুব সামান্য নিজের তাপমাত্রা বাড়ায়। আর রাতে নিশ্চয়ই বারবার বাথরুমে যেতে চান না! সেটিও ঘুমের জন্য অসুবিধাজনক। এই দুটি কারণে সন্ধ্যা নামার আগে প্রচুর পানি পান করুন। পানির বদলে আপনি যদি অন্য কিছু খান, তাহলে কিন্তু হবে না। যেমন চা, কফি, জুস বা সফট ড্রিংকস—এর ভেতরকার ক্যাফেইন আপনাকে ঘুমাতে দেবে না।
কীভাবে বাইরের তাপমাত্রা আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করে?
ঘাম ও প্রস্রাব বেশি হয়। ফলে শরীর অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পানিশূন্যতায় ভোগে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। হৃদ্যন্ত্রের ওপরেও চাপ পড়ে। চামড়ায় জ্বালাপোড়া করতে পারে। মাথাব্যথা, অস্বস্তি আর বমি বমি ভাবও হতে পারে। অবসাদ আপনাকে চেপে ধরতে পারে। কেননা অতিরিক্ত ঘামে শরীরের সোডিয়াম তখন কমে যায়। এতে অতিরিক্ত তাপে কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। এ সময় ক্লান্ত, দুর্বল লাগা স্বাভাবিক। অনেকের মাংসপেশিতেও ব্যথা হয়।
তাপমাত্রা যদি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যায়, তখন হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। হিটস্ট্রোকের আগে ওপরের একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
শান্ত থাকুন
রাতে অনেকেরই গরমে ঘুম আসে রা। এপাশ–ওপাশ করছেন, তবু ঘুমাতে পারছেন না, এমন হলে অস্থির হবেন না। শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। কিছু পড়ুন বা লেখুন। এমনি কাপড়ও ভাঁজ করে রাখতে পারেন। মোদ্দাকথা, শরীর বা মনে চাপ পড়ে না, এমন হালকা কাজ করুন। ঘুম পেলে আবার বিছানায় চলে আসুন। রাতে ভালো ঘুমের জন্য একটা উপদেশ আপনাকে মানতেই হবে, ঘুমানোর বিছানায় ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না। ফোনের নীল আলো আমাদের ঘুমাতে দেয় না। নিউরনের যে সেলগুলো আমাদের জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করে, সেগুলোকে জাগিয়ে রাখে।
শিশুদের দিকে আলাদা নজর রাখুন
গরমের আগে শিশুদের যেমন ‘বেডটাইমে বাথটাইম রুটিন’ ছিল, সেটি মেনে চলতে হবে। শিশুরা খুবই অনুকরণপ্রিয়। বাড়ির যেকোনো একজন সদস্যের রুটিন এলোমেলো হলে সেটি শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে। গরমে শিশুকে বাইরে যেতে দেবেন না। বিকেলে রোদ কমলে একটু হাঁটাতে নিয়ে যেতে পারেন। দ্য এনএইচএস ওয়েবসাইট ইউকের মতে, বিছানায় যাওয়ার আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজার রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত সেটা সুন্দর ঘুমের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। গরমে রাতে আপনার শিশুকে নিয়ে এ রকম একটি উষ্ণ পানির গোসল করতেই পারেন। শিশুরা ১৬ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভেতর ভালো ঘুমায়।