ডায়াবেটিসে চোখের সমস্যা

রক্তে উচ্চমাত্রার সুগার রক্তনালির জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললে রক্তনালির গায়ে একধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। বিশেষ করে সূক্ষ্ম রক্তনালি দুর্বল ও সরু হয়ে স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালনের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে কোষে অক্সিজেন–স্বল্পতা দেখা দেয়। এ অবস্থাকে বলে ইস্কেমিয়া।

ইস্কেমিয়ার দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। প্রথমত, অক্সিজেনবঞ্চিত কোষগুলো ক্রমান্বয়ে নিস্তেজ হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোষ রক্ষায় বিকল্প হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন রক্তনালি তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই রক্তনালিগুলো খুবই ভঙ্গুর। ফলে খুব সহজেই এগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এভাবেই আমাদের চোখের পেছনে অবস্থিত রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

যাঁদের ৩০ বছর বয়সের আগেই ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে, তাঁরা রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা ও হাইপার লিপিডেমিয়া বা কোলেস্টেরোলের উচ্চমাত্রা রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়ায়। কিডনি সমস্যায়ও রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বেশি। গর্ভাবস্থার প্রথম চার মাসে এই ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া স্থূলতা, ধূমপান ও রক্তশূন্যতা রেটিনোপ্যাথিকে ত্বরান্বিত করে।

রেটিনোপ্যাথির প্রভাবে কী হয়

রেটিনোপ্যাথির প্রাথমিক অবস্থায় অক্সিজেন–স্বল্পতার কারণে রক্তনালির গায়ে যে ভঙ্গুরতা দেখা দেয়, তার প্রভাবে রক্তনালি থেকে প্লাজমা বের হয়ে রেটিনার কোষে জমতে থাকে। এ ছাড়া ছোট ছোট রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটে। দৃষ্টিশক্তি ক্রমান্বয়ে কমে যায়।

চিকিৎসা

  • রেটিনোপ্যাথি ঠেকানোর প্রধানতম উপায় হলো ডায়াবেটিস ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ব্যায়ামের অভ্যাস করা। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিডনির সমস্যার প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়া। ধূমপান পরিহার করুন।

  • রেটিনোপ্যাথি হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডা. মো. ছায়েদুল হক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল