বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন অনেক মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন, মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দিনের পর দিন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, হাঁপানি, স্থূলতার সমস্যা রয়েছে যাঁদের, করোনার সংক্রমণে তাঁদের জটিলতার ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি।
ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। যেকোনো সংক্রমণই প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় এসব রোগীর কম। ডায়াবেটিস রোগীদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত বেশি। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, তাঁরা করোনাভাইরাসের সহজ শিকার। আগে ভাবা হয়েছিল, শিশু-কিশোরেরা করোনায় খুব একটা আক্রান্ত হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শিশুরাও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি নির্ভরতার আশ্বাস দিচ্ছে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই বলে করোনার টিকা নিলেই সংক্রমণমুক্ত থাকা যাবে, এমন নয়। টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবে করোনার টিকা নিলে সংক্রমিত হলেও জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে অনেক ডায়াবেটিস রোগী করোনার টিকা নেবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, টিকা নিয়ে আবার কোনো সমস্যা হবে না তো? করোনার টিকা কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ?
এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, বিশ্বজুড়ে করোনার যে টিকা কর্মসূচি চলছে, তাতে এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে তেমন কোনো ঝুঁকি দেখা যায়নি। দুই–একটা ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়লেও তা অত্যন্ত নগণ্য। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও এমন কোনো ঝুঁকি সেভাবে দেখা যায়নি বরং ডায়াবেটিসের রোগী করোনায় সংক্রমিত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব রোগীর টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে যাঁদের রক্তের গ্লুকোজ অনেক বেশি বা খুব বেশি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, তাঁদের দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে এনে তারপর টিকা নেওয়া দরকার। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় (৭–১০ মিলিমোল/লিটার) নামিয়ে এনে টিকা দিতে হবে।
বাংলাদেশে করোনার যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তা দুই ডোজের। আট সপ্তাহ অন্তর নিতে হবে এ টিকা। যেসব ডায়াবেটিস রোগী এখনো টিকা নিতে পারেননি বা নেননি, তাঁরা দ্রুত টিকা নিয়ে নিন।
তবে টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন (স্ট্রেইন) ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণের এবারের এই মারাত্মক ঢেউ না কমা পর্যন্ত ডায়াবেটিসের রোগীরা ঘরেই থাকুন। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। বারবার সাবানপানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন। বাড়িতে কোনো করোনা রোগী থাকলে তাঁর থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে এ সময় কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন।
আগামীকাল পড়ুন: প্রসবপরবর্তী থাইরয়েড জটিলতা