ডেঙ্গু: বর্তমান পরিস্থিতি এবং করণীয়

এপ্রিল থেকে অক্টোবরকেই সাধারণত ডেঙ্গু মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এ চার মাস খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। অপর দিকে করোনার প্রকোপও বেড়েছে। করোনা আর ডেঙ্গুর উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় জ্বর হলে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ডেঙ্গু রোগীদের নানা ধরনের স্বাস্থ্যজটিলতা এবং এর প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ডেঙ্গু: বর্তমান পরিস্থিতি এবং করণীয়’। ফেডারেশন ফর ডক্টরস রাইটস অ্যান্ড সেফটির উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষারের সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ডিজিএইচএসের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এইচ এ এম নাজমুল আহসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইনফেকশাস অ্যান্ড ট্রপিক্যাল ডিজিজের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটোয়ারী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত। অনুষ্ঠানটি ৬ জুলাই প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আলোচনা হয়, ডেঙ্গু রোগ কী এবং এর সতর্কতা নিয়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। অপর দিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের বর্ধিত সময় চলছে। গত এক মাসে দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৪১ জন। এবং সারা দেশে ৫৩৬ জন। এর মধ্যে ৪১২ জন সুস্থ হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু এখনো প্রাণঘাতী হয়ে ওঠেনি। তবে অনেকে মনে করেন, করোনা ও ডেঙ্গু এর সঙ্গে হয় না। এটি খুবই ভুল ধারণা। এ রোগ একসঙ্গে হতে পারে, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই অমাদের সময় থাকতে সচেতন হতে হবে।

এরপর আলোচনা হয় ডেঙ্গু এবং করোনায় একসঙ্গে আক্রান্ত হলে কী করণীয়। তাঁর মতে, করোনার পাশাপাশি এ সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশ দেখা যাচ্ছে। করোনা এবং ডেঙ্গু দুই রোগেরই সাধারণ উপসর্গ জ্বর। তবে এর মধ্যে পার্থক্য অনেক। অনেকেই মনে করে, জ্বর হলে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। এটি সত্য, কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে জ্বরটি কোন ধরনের। এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চম দিনে অবশ্যই ব্লাড টেস্ট করে দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট ও হেমাটোক্রিট যদি বেড়ে গিয়ে প্লাজমা লিকেজ হয়, আর সেই সঙ্গে যদি প্রেশার কমে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে যায়, মাথা ঘোরার সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই তাঁকে হসপিটালাইজড হতে হবে।

আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। যেকানো ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা শুরু করেন। মনে রাখতে হবে, জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ভূমিকা রাখে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাবও পড়ে। সাধারণভাবে জ্বর হলে প্যারাসিটামল, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ওরাল স্যালাইন খেতে হবে, হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছতে হবে। আর তাতেও যদি জ্বর না যায়, অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।