ফ্রেশ বাংলাদেশ গ্লানি মোছার শপথে

স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা

স্তন ক্যানসারের কবলে পড়ে সারা বিশ্বে মরণকাফেলায় প্রতিবছর যোগ হচ্ছে ছয় লাখের বেশি মানুষ। ডব্লিউএইচওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ২৩ লাখ নারী ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও সমান ভয়াল।

ডব্লিউএইচওর পরিসংখ্যান বলে, এ দেশে প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি স্তন ক্যানসারের রোগী শনাক্ত হয়। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, দেশে নারীদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা অত্যন্ত কম এবং সংকোচ ও অবহেলার কারণে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রায়ই গাফিলতি হয়ে থাকে। এর ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়ায় জটিলতা বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে বাড়ে মৃত্যুহার।

আরও পড়ুন

এ জন্যই দেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে তাদের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ফ্রেশ টিস্যুর ব্যানারে কয়েক বছর ধরেই আয়োজিত হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যানসার–বিষয়ক বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম। এ বছরও চলমান ‘ফ্রেশ বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন ইতিমধ্যেই যাত্রা করে পরিভ্রমণ করে চলেছে দেশের নানা স্থানে ফ্রি স্ক্রিনিং সুবিধা নিয়ে। প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে যাঁদের অস্বাভাবিক রিপোর্ট এসেছে এবং সাধারণভাবেই নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাঁদের টেস্ট রিপোর্টে ব্রেস্ট ক্যানসারের আলামত দেখা যায়, তাঁদের অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্রুততম নিশ্চিতকরণ নিরীক্ষার পরে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। এ ব্যাপারে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ও আউটডোর সার্ভিসের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. মাহফুজা খাতুনের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের পর নিশ্চিত হতে এবং ক্যানসারের গতিপ্রকৃতি, ধরন ও স্টেজ নির্ণয়ের জন্য এফএনএসি, কোর বায়োপসি, ট্রুকাট বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি প্রয়োজন পড়ে। এ পর্যায়ে যদি শল্যচিকিৎসাযোগ্য ক্যানসার হয়, তবে সার্জারি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অংশ ফেলে দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ বায়োপসি করে দেখতে হয়, ক্যানসারাস অংশের যাতে পরবর্তী চিকিৎসার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। এবার ক্যানসারের ধরন ও পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বা অনকোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে এক বা একাধিক চিকিৎসা দেওয়া হয়; যেমন কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি।

প্রাথমিক স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ। টিউমারের আকৃতির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সার্জারির মাধ্যমে টিউমার ও তার আশপাশের কিছু সুস্থ টিস্যু অপসারণ করেন।

আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় সাম্প্রতিকতম আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী কেমোথেরাপি ও হরমোনাল থেরাপি ছাড়াও স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে নতুন ও অধিকতর কার্যকর চিকিৎসা হলো টার্গেটেড থেরাপি

অপারেশনের ধরন অনুযায়ী স্তন ক্যানসারের অপারেশন দুই রকমের হতে পারে। স্তনে ক্যানসারের অংশটুকু অপসারণ করলে তাকে বলা হয় লাম্পেকটমি। সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ করলে তাকে বলে মাস্টেকটমি। অপারেশনের সময় যদি কোনো লসিকাগ্রন্থিতে বা লিম্ফ নোডে ক্যানসার থেকে থাকে, তাহলে সার্জন সাধারণত সেটিও অপসারণ করে থাকেন।

কেমোথেরাপিতে ক্যানসারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ক্যানসারবিরোধী (সাইটোটক্সিক) ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে ক্যানসারের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকেরা কেমোথেরাপির ওষুধ নির্বাচন করেন। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় সাম্প্রতিকতম আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী কেমোথেরাপি ও হরমোনাল থেরাপি ছাড়াও স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে নতুন ও অধিকতর কার্যকর চিকিৎসা হলো টার্গেটেড থেরাপি, যা মোটা দাগে একটি অংশের স্বাভাবিক কোষগুলোর ক্ষতি না করে নির্দিষ্ট কোষ ধ্বংস করতে পারে। এ ছাড়া ক্যানসারের বৃদ্ধি বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতেও এ পদ্ধতিতে ভালো ফল পাওয়া যায়।

দেশে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের সচেতনতা অত্যন্ত কম এবং সংকোচ ও অবহেলার কারণে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রায়ই গাফিলতি হয়ে থাকে।

কখনো কখনো টার্গেটেড থেরাপি সেসব জায়গায় কাজ করে, যেখানে কেমোথেরাপি কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। টার্গেটেড থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির তুলনায় কম।

কেমোথেরাপির পর প্রয়োজন অনুযায়ী রেডিওথেরাপিতে উচ্চশক্তির এক্স-রে ব্যবহার করে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই অপারেশনের পর ক্ষত শুকিয়ে গেলে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এটি ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমায়।

এই সর্বজনীন সাধারণ গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হলেও ক্যানসার চিকিৎসা আসলে প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা। সঠিক সময়ে উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা কম ব্যয়বহুল ও জটিল হয়, রোগীর মৃত্যুও প্রতিরোধ করা যায় অনেকাংশে।