বর্ষায় শিশুর রোগব্যাধি

ডায়রিয়ার কারণে শিশু পানিস্বল্পতায় ভোগে। কাজেই ডায়রিয়ার শুরু থেকেই শিশুকে খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে।

বর্ষাকালে খাওয়ার পানি দূষিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এতে শিশুদের ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ হতে পারে। বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অনেক জীবাণু বাতাসে ভেসে থাকে। তাতে শিশু সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া বর্ষায় মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে। ফলে এ সময় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে।

ডায়রিয়া

খাওয়ার পানি, খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত অপরিশোধিত পানি থেকে শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। রোটা ভাইরাস, হেপাটাইটিস ‘এ’ কলেরা, অ্যান্টামোবা পরজীবী, স্যালমোনেলা প্রভৃতি জীবাণুর আক্রমণে ডায়রিয়া হয়। ২৪ ঘণ্টায় শিশুর যদি তিন বা ততোধিকবার পাতলা পায়খানা হয়, তবে তা ডায়রিয়া। ডায়রিয়ার কারণে শিশু পানিস্বল্পতায় ভোগে। কাজেই ডায়রিয়ার শুরু থেকেই শিশুকে খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ পান করানো, খাওয়ার পানি ও খাবার তৈরিতে নিরাপদ পানির ব্যবহার, রোটা ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুকে ডায়রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

ইনফ্লুয়েঞ্জা

আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি থেকে বা রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদির সংস্পর্শ থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়ায়। তাই শিশুকে সর্দি-কাশির রোগী থেকে দূরে রাখা উচিত। শিশু যেন ঘন ঘন চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাওয়ার আগে সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুকে পানীয় বা দুধ পানের আগে হালকা গরম পানিতে পাতলা কাপড় চুবিয়ে তা সরু শলাকার মতো করে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার করে দিলে তার খাবার বা পানীয় গ্রহণে সুবিধা হয়। কাশি কমাতে মধু, তুলসীপাতার রস, লেবুমিশ্রিত কুসুম গরম নিরাপদ পানি খাওয়ানো যায়। জ্বর হলে শিশুর ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ ও বারবার তরল পানীয় পান করানো উচিত। শিশু যদি বেশি জ্বরে ভোগে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা বুকের দুধ পান করতে না পারে, দ্রুত শ্বাস নেয়, বুকের নিচের অংশ দেবে যায়, তবে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর

বর্ষায় এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। ডেঙ্গুর বাহক এই মশা দিনে কামড়ায়। আক্রান্ত শিশু প্রথম কয়েক দিন উচ্চ মাত্রার জ্বরে ভোগে। মেরুদণ্ডের ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, কখনোবা মাড়ি, মলপথে রক্তপাতসহ ডেঙ্গু প্রকাশ পায়। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল দিতে হবে। ঘন ঘন পানীয় ও তরল খাবার খাওয়ানো উচিত। রক্তপাত দেখা দিলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করে। কাজেই কোথাও পানি যাতে জমে না থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশ্বজুড়ে এখনো প্রতিদিন অনেক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। কাজেই শিশুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও আন্ত্রিক সমস্যার মতো উপসর্গ
দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।


অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।