মাথাব্যথা তাড়াতে যোগব্যায়াম
অনেকে বলে, মাথা থাকলে ব্যথা হবেই। মাথাব্যথা নেই বা জীবনে কখনোই হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ১১ আগস্ট এসকেএফ আয়োজিত এক অনলাইন অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয় ছিল ‘স্বাস্থ্যের জন্য ও মাথাব্যথা নিরাময়ে যোগ ও ব্যায়ামের ভূমিকা’। প্রচারিত হয়েছে প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে।
এই আলোচনায় তিনজন অতিথি মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা হলেন ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হেড অব ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট ডা. সাকলাইন রাসেল, সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালট্যান্ট ও আনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জন ডা. আফরিন সুলতানা এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ প্রশিক্ষক, বাংলাদেশ যোগ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ইন্ডিয়ান যোগ অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য আশীষ অধিকারী। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরি।
কেন করব যোগব্যায়াম
ফিটনেস ধরে রাখতে যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই। আমরা যখন যোগব্যায়াম করি, এটা একধরনের স্ট্রেচিং। আমাদের শরীরের যে মাসলগুলো আছে, এগুলোকে আমরা এত আরামে রাখি যে এরা এদের কার্যকারিতা ভুলে যায়। এদের যখন আমরা জাগিয়ে তুলি, তখন এরা আবার সক্রিয় হয়ে যায়। সকালে ২০ থেকে ৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করলে দিনটা খুবই এনার্জিটিক যায়। আমাদের শরীরের প্রতিটা অঙ্গ ভালো থাকে। যোগব্যায়াম শরীর ও মনের সমন্বয় ঘটায়। যোগের আসন দেখে বাইরে থেকে মনে হবে যে কিছুই হচ্ছে না। যিনি এগুলো করছেন, তিনি বোঝেন যে তাঁর শরীরের বিভিন্ন পেশিকে এগুলো কীভাবে প্রভাবিত করছে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কোনায় কোনায় রক্ত সঞ্চালন করে। যোগব্যায়াম ছাড়া অন্য কোনো ব্যায়ামে একজন শারীরিক, মানসিক আর আত্মিকভাবে এতটা ফিট থাকে না। ফিট থাকার জন্য কী খাচ্ছি, কতটুকু পানি পানি, কখন, কতটুকু ঘুমাচ্ছি আর ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করছি কি না, এই চারটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক পরিশ্রম করা খুবই জরুরি। সপ্তাহে ৫ দিন হলেও প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা জরুরি। আর যদি সম্ভব হয়, তবে সপ্তাহে তিন দিন জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা।
কারা করবে, কখন কীভাবে করবে
তবে শরীরে যদি কোনো ব্যথা থাকে, সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যোগব্যায়াম করা উচিত। তা ছাড়া সব বয়সের সবাই যোগব্যায়াম করতে পারবেন। এতে মানসিক প্রশান্তি বাড়ে। মনোযোগ বাড়ে। ইমিউনিটিও বাড়ে। টেনশন কমে। যে সময় খুশি, যেখানে সুবিধাজনক, সেখানেই আপনি যোগব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি ভাত খাওয়ার পর বা বাসে বসেও আপনি যোগব্যায়াম করতে পারেন।
ইউটিউব দেখে যোগব্যায়ামের ঝুঁকি
একেক যোগব্যায়াম, একেক আসন একেক ব্যক্তির জন্য। ইউটিউবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ চিত্র থাকে না। যেমন একজনের হয়তো কোমরে ব্যথা। তিনি ওজন কমানোর জন্য ইয়োগা করলেন। ফলে তাঁর কোমরব্যথা বেড়ে যেতে পারে। কেননা, ওজন কমানোর জন্য যেসব ব্যায়াম আছে, সেগুলোর জন্য কোমরব্যথা থাকলে তা বেড়ে যেতে পারে। একমুখী কোনো মাধ্যম দেখে ব্যায়াম করা ঠিক হবে না। কেননা, কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়। আর যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে নিজের শরীরের কন্ডিশন বুঝে বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু করা উচিত। তা না হলে নানা ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।
যোগব্যায়ামের কোনো লিঙ্গ বা বয়স নেই। তবে যদি নারী আর পুরুষের ক্ষেত্রে আলাদা করে বলা হয়, সে ক্ষেত্রে বলতে হবে, পুরুষের চেয়ে নারীর ফিটনেস বেশি জরুরি। কেননা, একজন নারী সন্তান জন্ম দেন। তাঁর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। তা ছাড়া হরমোনজনিত বা অন্য কিছু রোগ নারীর বেশি হয়। ফিট থাকলে সেসব ঝুঁকি থাকে না। শারীরিক পরিশ্রম করলে যে গুড হরমোনের নিঃসরণ হয়, সেটা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
মাথাব্যথা দূর করবে যোগব্যায়াম
বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, মাথাব্যথার কারণ হলো দুশ্চিন্তা। আর যোগব্যায়ামে দুশ্চিন্তা কমে যায়। যোগব্যায়ামে শরীর আর মন একটা জায়গায় মিলে যায়। ফলে মাথাব্যথা ধীরে ধীরে কমে যায়। ঘামলেও কিন্তু মাথাব্যথা কমে। কেননা, এর ফলে এন্ডোরফিন নামের হরমোনের নিঃসরণ হয়। আমাদের যে ভালো লাগে, সেটা এ অনুভূতির জন্য। ইয়োগা কেবল মাথাব্যথা নয়, মনের ব্যথাও সারাবে।
বি.দ্র: মাথাব্যথা নিরাময়ে কীভাবে যোগব্যায়াম করতে হবে, তা দেখতে ভিডিওটির ৩০ মিনিট থেকে আশীষ অধিকারীর মুদ্রা আর আসনগুলো দেখুন।