শিশুদের রোগব্যাধি ও করণীয়
করোনা অতিমারির মধ্যেই বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। বড়দের পাশপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে এ জ্বরে। এ ছাড়া এ সময়ে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে আরও কিছু রোগব্যাধিতে। শিশুদের এমন নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা ও এর প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘শিশুদের রোগব্যাধি ও করণীয়’।
মীর আর্সিয়া জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোমা হালদার। অনুষ্ঠানটি ১১ আগস্ট প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সহকারী অধ্যাপক সোমা হালদার আলোচনা করেন বর্তমান সময়ে শিশুদের রোগব্যাধি নিয়ে। তাঁর মতে, বর্ষার এ সময়ে সবচেয়ে বেশি মশা ও পানিবাহিত রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি। কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু জ্বরেই শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটি মূলত ভাইরাসজনিত একটি অসুখ। তাই এর প্রাথমিক লক্ষণ অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই। তবে এ জ্বরে যেটা হয়, হঠাৎ অনেক বেশি জ্বর চলে আসে। এর সঙ্গে বাচ্চাদের মাথা ও পেটে ব্যথা থাকতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা আবার দুই ধরনের—মাঝামাঝি সংকটাপন্ন ও অতি সংকটাপন্ন। বিশেষ করে রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রম। এই ডেঙ্গু শক সিনড্রম শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি মারাত্মক। কারণ, এতে শিশুদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বেড়িয়ে যায় এবং শিশুর রক্তচাপ কমে যায়। এ ধরনের ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। শিশুরা অনেক লক্ষণ সঠিকভাবে বোঝাতে পারে না। আর তাই মা–বাবারা বুঝতে পারেন না যে শিশুর রক্তচাপ কমে সে শকে চলে যাচ্ছে।
করোনা ও ডেঙ্গু উভয়েরই প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। কিন্তু কখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে আর কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, এ বিষয়ে চিকিৎসক সোমা হালদার জানান, করোনা কিংবা ডেঙ্গু উভয় ক্ষেত্রেই জ্বর যদি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, তবে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু মা–বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর অন্য কোনো পার্শ্ব লক্ষণ আছে কি না। যেমন শিশু ঠিকমতো পানি খেতে পারছে কি না, তার রক্তচাপ ঠিক আছে কি না, কোনো ধরনের রক্তক্ষরণ আছে কি না।
এমন কোনো লক্ষণ থাকলে দ্রুত শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু যেকোনো বয়সের মানুষের বা শিশুদের হতে পারে। তাই বর্ষার সময়টা শিশুদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে মনে করে, একবার ডেঙ্গু হয়ে গেলে তার আর কখনোই ডেঙ্গু হবে না। এ ধারনা ভুল।
ডেঙ্গুর মূলত চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এর যেকোনো একটিতে কেউ আক্রান্ত হলে, পরবর্তী তিন মাস একই সেরাটাইপে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে অন্য সেরোটাইপে আক্রান্ত হতে পারেন যেকোনো সময়। ডেঙ্গুর একটি খুবই খারাপ দিক হচ্ছে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হলে প্রথমবারে তুলনায় লক্ষণগুলো অনেক বেশি প্রকোপ হয়।
আমাদের দেশে অনেকেই যেকোনো অসুখে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করে, যা একেবারেই উচিত নয়। শিশু কিংবা পূর্ণ বয়স্ক মানুষ—সবার ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয় এবং এর পরিমাণ কী হবে, সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।