হাঁটুব্যথার সাতকাহন
এসকেএফ নিবেদিত ‘ব্যথার সাতকাহন’ আয়োজনের প্রথম পর্বের বিষয় ছিল হাঁটুর ব্যথা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মো. রাশেদুল হোসাইন ডি. অর্থো. (নিটোর), এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারি)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অমৃতা তালুকদার।
বিশ্বে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের হাঁটুর ব্যথা হয়। বাংলাদেশে এটা একটা বড় সমস্যা। নানা কারণে হাঁটুব্যথা হতে পারে। আঘাত, ইনফেকশন, যক্ষ্মা ও বাতের সমস্যা থেকেও হাঁটুব্যথা হতে পারে। কিছু মেটাবলিক কারণও থাকে। যেমন ভিটামিন ডির অভাব বা স্কার্ভি হলেও হাঁটুব্যথা হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার কারণে হাড়ের ক্ষয় হওয়ায় হাঁটুব্যথা হয়।
যেকোনো আঘাতে হাঁটুতে ব্যথা হলে অর্থোপেডিক কনসালট্যান্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা, এমন আঘাতও হতে পারে, যা সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে না দেখালে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। যাঁদের দীর্ঘদিনের ব্যথা, অর্থাৎ ক্রনিক পেইন রয়েছে, তাঁদের কিছু ডায়েট, সাপ্লিমেন্ট, ফিজিওথেরাপি আর ওষুধ দিয়ে হাঁটুর ব্যথা অনেক দিন ভালো রাখা যেতে পারে। এসব ওষুধের মধে৵ রয়েছে ইটোরিক্স, ক্যারিডল, নাবুমেট, নাপরক্স প্লাস ইত্যাদি।
একসঙ্গে দুই হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। রিকেটস, ডিটামিন ডির অভাব এবং বয়স বাড়ার কারণে হাড়ের ক্ষয় হলে হাঁটুব্যথা হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশনের সঙ্গে চোখের সমস্যা থাকলে রি–অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস হলে দুই হাঁটুতে একসঙ্গে ব্যথা হতে পারে। কারও কিডনির সমস্যা থাকলে ক্রিয়েটিনিন বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে হাঁটুতে ইউরিক অ্যাসিড জমে দুই হাঁটুতেই ব্যথা হতে পারে। যেসব বাচ্চার বয়স ৪ থেকে ১০ বছর, তাদেরও হাঁটুতে ইনফেকশন ও ব্যথা হতে পারে। হাঁটুর যক্ষ্মা থেকেও বাচ্চাদের হাঁটুব্যথা হতে পারে।
হাঁটুব্যথা নিয়ে কেউ এলে প্রথমে এক্স–রে দেওয়া হয়। এক্স–রে রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে এবং রোগের ইতিহাস জেনে আরও পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর হাঁটুব্যথার কারণ খুঁজে বের করা হয়। তারপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না নিলে হাঁটু বাঁকা হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন থাকলে সেপসিস হতে পারে। পরে সারা শরীরে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং পুঁজ অন্য জায়গায় জমা হতে পারে। বাতের সমস্যা থেকে হাঁটুব্যথার চিকিৎসা না করালে রোগী পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
যেকোনো বয়সে হাঁটুব্যথা হতে পারে। হাঁটুব্যথা হলে দেরি না করে চিকিৎসা করাতে হবে। না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। নিয়মিত হাঁটা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারসহ ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশযুক্ত খাবার খেলে এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে হাঁটু ভালো থাকবে। সারা জীবনেও হাঁটুব্যথায় ভুগতে হবে না।