অধ্যাপক মো. আফজালুর রহমান

খাবারের ট্রান্সফ্যাট হলো ক্ষতিকর চর্বিজাতীয় খাবার। এটি রক্তের ‘ভালো’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ‘খারাপ’ কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনি যত বেশি ট্রান্সফ্যাট খাবেন, আপনার হার্ট ও রক্তনালি রোগের ঝুঁকিও তত বাড়বে। ট্রান্সফ্যাট এত অস্বাস্থ্যকর যে আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সংস্থা এফডিএ সম্প্রতি খাদ্য প্রস্তুতকারীদের খাবার ও পানীয়গুলোয় কৃত্রিম ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস যোগ করতে নিষেধ করেছে। সংস্থাটি আশা করে, এ পদক্ষেপ প্রতিবছর হাজার হাজার হার্ট অ্যাটাক এবং মৃত্যু প্রতিরোধ করবে।

ট্রান্সফ্যাট কী

বেশির ভাগ ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয় শিল্পপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিজ্জ তেল তৈরির সময় তাতে হাইড্রোজেন যুক্ত হয়। এই আংশিক হাইড্রোজেনযুক্ত উদ্ভিজ্জ তেল, যা স্বাভাবিক কম তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে যায়, সেটিই হলো ট্রান্সফ্যাট। এটি খুব বেশি ক্ষতিকর না হলেও খাবার তৈরির সময় উদ্ভিজ্জ তেল পরিবর্তন না করে ভাজার জন্য বারবার ব্যবহার করলে তা বেশি বেশি ট্রান্সফ্যাটে পরিণত হয়, যা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর।

আপনার খাবারে ট্রান্সফ্যাট

নানা রকম বেকারিপণ্য, যেমন: কেক, কুকিজ ট্রান্সফ্যাট–সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অন্যতম। প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন রকমের খাবার, ফ্রোজেন খাবার এবং নানা ভাজাপোড়া খাবার, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও ট্রান্সফ্যাটের অন্যতম উৎস।

ট্রান্সফ্যাট কীভাবে আপনার ক্ষতি করে

রক্তে যেসব কোলেস্টেরল থাকে, সেগুলোর মধ্যে দুই ধরনের কোলেস্টেরল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • কম ঘনত্বের কোলেস্টেরলের বা এলডিএল, যা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল হিসেবে গণ্য। এ ধরনের কোলেস্টেরল হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির দেয়ালে চর্বি জমাট বাঁধতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং রক্তনালিগুলো সরু হয়ে রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে। তাতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

  • উচ্চ ঘনত্বের কোলেস্টেরলের বা এইচডিএল, যা ‘ভালো’ কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরল রক্তের ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলকে রক্ত থেকে যকৃতে বয়ে নিয়ে যায় এবং রক্তনালির দেওয়ালে চর্বি জমতে দেয় না।

ট্রান্সফ্যাট আপনার রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং ‘ভালো কোলেস্টেরল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এভাবে ট্রান্সফ্যাট রক্তের স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রায় অস্বাস্থ্যকর প্রভাব ফেলে এবং ট্রান্সফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কের স্ট্রোক, রক্তনালির অসুখ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

খাবারের লেবেল দেখুন

আমেরিকায় কোনো খাবারের লেবেলে যদি ০.৫ গ্রামের চেয়ে কম ট্রান্সফ্যাট থাকে তবে, তাকে শূন্য গ্রাম ট্রান্সফ্যাট হিসেবে ধরা হয়। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সংস্থা এফডিএ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার আগে তৈরি খাবারগুলো এখনো বাজারে থাকতে পারবে বলেও সংস্থাটি ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং আপনি নিজেই খাবারের লেবেল চেক করতে পারেন। কোন খাবারের উপাদান তালিকায় দেখুন, সেখানে ট্রান্সফ্যাট আছে কি না। থাকলে তা ০.৫ গ্রামের চেয়ে কম কি না।

আপনার কী খাওয়া উচিত

ট্রান্সফ্যাট ছাড়া সব খাবারই যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তাও না। খাদ্য নির্মাতারা ট্রান্সফ্যাটের পরিবর্তে যেসব উপাদান বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, সেগুলো স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটও অস্বাস্থ্যকর। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তেল: যেমন: নারকেল এবং পাম তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরল বাড়ায়। আপনার মোট দৈনিক ক্যালরির প্রায় ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে। আপনি চেষ্টা করুন, আপনার মোট দৈনিক ক্যালরির ১০ শতাংশেরও কম যেন থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। জলপাই ও বাদাম তেলে পাওয়া যায় মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এগুলো হতে পারে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বিকল্প। বাদাম ও বাদামজাতীয় খাবার এবং মাছ ও মাছের তেলে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ এসব খাবারও স্বাস্থ্যকর।

ডা. মো. আফজালুর রহমান: হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ