পরিপাটি ব্যালকনি
শহরের ছোট পরিবারের জন্য ছোট ফ্ল্যাট। এমন বাস্তবতায় ঘরের বারান্দার আয়তনও কমে গেল অনেকটা। সঙ্গে পরিবর্তন হলো এর নাম। এখন ব্যালকনি হিসেবেই এর পরিচিতি। কিন্তু একসময় বাড়ির বারান্দাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সকাল থেকে রাত, নানা কাজ আর আলস্যে পরিবারের সদস্যদের আনাগোনায় মুখর থাকত। মেয়েদের সেলাই করা, চুল বাঁধা, আলতা পরা, রান্নার কাটাকুটি সবই চলত বারন্দায়। পাশাপাশি পারিবারিক আড্ডা, বই পড়া, বিকেলের চা–নাশতায় মুখর থাকত জায়গাটি।
বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে এক টুকরা খোলা আকাশের দেখা পাওয়া যেত এখানেই। ধীরে ধীরে বাড়ির আয়তন ছোট হতে শুরু করল। পরিবারের আয়তনের সঙ্গে ছোট হয়ে এল বাড়ি, পরিণত হলো ক্রংক্রিটের দুই কামরার ফ্ল্যাটে। সঙ্গে বারান্দাও ছোট হয়ে রূপ নিল ব্যালকনিতে। যেখানে দুই থেকে চারজনের বসার ব্যবস্থা হতে পারে বড়জোর। আবার কিছু কিছু ফ্ল্যাটের ব্যালকনি এত ছোট যে দুজন মানুষ বসা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গাও মেলে না। কিন্তু যত ছোটই হোক, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। ব্যালকনির আয়তন বুঝে ঠিক করতে হবে এর সাজ, যাকে বলে স্পেস ম্যানেজমেন্ট।
* ব্যালকনির দেয়াল রঙিন হলে ভালো। কারণ, রং মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। যাঁরা বেশি গাঢ় রং পছন্দ করেন না, তাঁরা চাইলে একটু নিউট্রাল রঙের ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ছোট দেয়ালে টেক্সচার বা প্লাই ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে দেয়ালের পরিসর বড় মনে হবে।
* যদি জায়গা খুব ছোট হয় তাহলে আলাদা করে কোনো আয়োজন না করে ওপেন ব্যালকনি তৈরি করা যায়। আয়রন বা ইস্পাতের রেলিং দিয়ে ঘিরে ক্লিয়ার কাচের স্লাইডিং ডোর যুক্ত করে দেওয়া যায়। এতে বৃষ্টির পানি ব্যালকনি হয়ে ঘরে প্রবেশ করবে না।
* ব্যালকনির যেকোনো একটি দেয়ালে কাঠ বা প্লাই দিয়ে তাক বানিয়ে, তাতে ছোট ছোট গাছ রাখা যেতে পারে। আবার বইও রাখা যেতে পারে। গান ভালোবাসলে মিউজিক কর্নারও তৈরি করে নেওয়া যায়।
* ব্যালকনির আয়তন একটু বড় হলে অবশ্যই বসার ব্যবস্থা করা উচিত। দেয়াল লাগোয়া সোফা বা চেয়ার জায়গা বাঁচাবে। মাটিতে বসার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। আবার ছোট ডিভান বা চেয়ার–টেবিলের ব্যবস্থাও রাখা যায়। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, আসবাব কিনতে হবে জায়গা বুঝে। যদি একান্তই জায়গা না থাকে, সে ক্ষেত্রে ভাঁজ করে রাখা যায়, এমন চেয়ারের ব্যবস্থা করাই ভালো।
* এখন নানা ধরনের এবং রঙের টার্ফ পাওয়া যায়। কিংবা কার্পেটও রাখা যায়। তবে দেয়ালের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্টিং কার্পেট বা টার্ফ বেছে নেওয়া ভালো। এতেও ব্যালকনির চেহারা বদলে যাবে।
* জায়গা থাকলে গ্রিলে কিছু গাছ ঝুলিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে স্পেস ছোট হলে গ্রিল ফাঁকা রাখাই ভালো। ছায়া বা আড়াল চাইলে বাঁশ অথবা বেতের ব্লাইন্ডস ঝুলিয়ে দিতে পারেন।
* রাতেও বারান্দায় সময় কাটাতে আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে বেশি উজ্জ্বল আলো না রাখাই ভালো। নরম, হলুদ, নীল বা বেগুনি আলো প্রশান্তি দেবে। জায়গা থাকলে সুন্দর ল্যাম্পশেড রাখা যায়, যা দেখতে নান্দনিক দেখাবে। ব্যালকনিতে বই পড়ার ব্যবস্থা থাকলে ছোট টেবিল ল্যাম্পও রাখা যেতে পারে।
* বসার জায়গায় কয়েকটা উজ্জ্বল রঙের পিলো বা কুশন রাখা উচিত। ব্যালকনির দেয়ালের রং যদি নিউট্রাল হয়, তবে উজ্জ্বল রঙের কুশন দেখতে ভালো লাগবে। আর যদি দেয়াল উজ্জ্বল হয়, তাহলে নিউট্রাল রঙের কুশন রাখাই ভালো।
* সিলিংয়ে সুন্দর পেনড্যান্ট লাইট বা ব্যালকনি ঘিরে ছোট রাইস লাইটস দিয়েও সাজানো যায়। এতে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এতে আলাদা করে কোনো আলোর ব্যবস্থা না রাখলেও অসুবিধা হবে না।
ছবি: পেকজেলসডটকম