উৎসবের আগে ঘর সাজানো হোক ছিমছামভাবে
উৎসব হোক অন্দরেই, নিরাপদে-আনন্দে। ঈদে ঘুরতে যাওয়ার দিন যে কবে ফিরবে, জানা নেই। এই লেখা যখন পাঠকের হাতে, তখনো দেশজুড়ে ‘লকডাউন’। স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার খাতিরে বাসাতেই কাটাতে হচ্ছে আসন্ন ঈদটাও। উৎসব উপলক্ষে অন্দর ঢেলে সাজানোর সুযোগ না-ও থাকতে পারে। তাই বলে ঘর সাজানো থমকে থাকবে না।
অন্দর গোছানোর সময়ই এমনভাবে তা করুন, যাতে উৎসব কিংবা নিত্যসময়ের আয়োজন করা যায় তাতেই। যা রয়েছে, তাতে সামান্য যোগ-বিয়োগ করলেও (অনলাইন কেনাকাটায় বা ঘরে তৈরি) আসে চমৎকারিত্ব। আলোছায়া আর দেয়ালসজ্জাতেই যেমন বদলে যায় অন্দর। এমনটাই জানালেন এবং সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্টের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি তাসনিম তুর্যি। নিজের বাড়ির বসার ঘর সাজিয়েছেন বোহিমিয়ান ধাঁচে। জানালেন, ধ্রুপদি, ঐতিহ্যবাহী কিংবা আধুনিক—যেমন ধাঁচেই সাজানো হোক, এক ধাঁচের সঙ্গে অন্য ধাঁচের মিশ্রণ মানানসই নয়।
সবুজের ছোঁয়া
বসার ঘর এবং ঘর লাগোয়া বারান্দাতে হোক সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির পরশ ঘরেই পাবেন বিশুদ্ধ হাওয়া, জুড়াবে চোখ ও মন। পাশ-টেবিল, ক্যাবিনেট, টুলে কিংবা ট্রলির পাশে রাখা যায় মানি প্ল্যান্ট, ড্রাসিনা (লাকি ব্যাম্বু), অ্যালোভেরা। সামান্য যত্নেই এরা দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকে অন্দরে।
উৎসবের অনুষঙ্গ
বসার ঘরে টেবিলের মাঝে মোম রাখুন। চমৎকার পাত্র শোকেসে আছে? নামিয়ে আনুন এই টেবিলে, পানি নিয়ে তাতেও ভাসিয়ে দিন মোম আর সুগন্ধি পাপড়ি।দেয়ালে টাঙানো থাকুক নানা রঙের ছবি।
আলোছায়ার মায়ায়
কিছু স্পটলাইট রাখুন। দেয়ালের ছবির ওপর ‘ফোকাস’ করে দিতে পারেন। ঈদের দিন হইহুল্লোড় শেষে বা আগে-পরে হয়তো বই পড়লেন কেবল স্পটলাইটটায়। উষ্ণ আলো (হালকা সোনালি আভা) দিন ঘরে, বারান্দাতেও। নানান আকৃতির ল্যাম্পশেড, ঝাড়বাতি বেছে নেওয়া যায়। আলোছায়াতেও উৎসবের নান্দনিক আমেজ।
স্নিগ্ধ দেয়াল
সাদা দেয়ালই পছন্দ তাসনিম তুর্যির। সাদার চেয়েও সাদাই থাক দেয়ালে। ময়লা হওয়ার ভয় অন্যান্য হালকা রঙের ক্ষেত্রেও থাকে। কিন্তু সাদা রঙে ঘরটা প্রশস্ত দেখায়। ঘরেই হতে পারে উৎসবের ‘ফটোসেশন’। সাদাসিধে সাদা দেয়ালের সামনে ছবিও হয় দারুণ। জাঁকজমকপূর্ণ ওয়ালপেপার নয়, বরং বিমূর্ত (অ্যাবস্ট্রাক্ট) দেয়ালচিত্র বেছে নিতে পারেন। ধ্রুপদি চিত্র বা হাতে আঁকা ছবি রাখতে পারেন দেয়ালে। দেশীয় ধাঁচের অনুষঙ্গ ঝোলাতে পারেন।
আসবাবে আজকাল
আসবাবের গদিতে ধূসর (গ্রে), চাপা সাদা, হালকা হলুদ, ক্রিম, হালকা কফি বা বিস্কুট রঙের মতো হালকা একটি রং থাকুক হালকা নকশায় কিংবা নকশা ছাড়াই। সঙ্গের বৈচিত্র্যময় আকার-আকৃতির কুশনের কভার রাখা হোক হলুদ, হালকা নীল, সি গ্রিনের মতো নানান রং কিংবা সাদা-কালোর সমন্বয়ে। ফুলেল, জ্যামিতিক বা জামদানি মোটিফ থাকতে পারে কুশন কভারে। ঘরে থাকা কুশন ও কুশন কভার কিন্তু নিজেরাই ‘কাস্টমাইজ’ করে নিতে পারেন ‘গৃহবন্দী’ সময়ে।
পর্দায় স্বাচ্ছন্দ্য, মেঝেটা যেমন
হালকা বা গাঢ় যেমনই হোক পর্দার রং, তা যেন হয় নিউট্রাল (প্রশমিত) রং। একাধিক স্তরের পর্দা হলে নেট বা টিস্যু কাপড়ের পাতলা স্তরটি সাদা হোক, অফুরন্ত দিনের আলো আসুক এই স্তর দিয়ে, বজায় থাকুক অন্দরের গোপনীয়তাও। ভারী স্তরটি হোক আসবাবের গদির রঙে রাঙানো। তবে ভারী স্তরটি চাপা সাদা রঙের হলে অবশ্য পাতলা স্তরটিও চাপা সাদাই ভালো। পাটির বুনট, ক্রুশকাঁটা বা পাটের ম্যাট কিংবা জ্যামিতিক মোটিফের কার্পেট বিছিয়ে দিতে পারেন মেঝেতে।