স্মার্ট ফ্রিজে কত কী
প্রতিদিন বাজার বা তিনবেলা রান্না করার সময় এখন সবার হয় না। তাই এক দিন বাজার করে কয়েক দিন চালানো অথবা একবারে একটু বেশি রান্না করে সংরক্ষণ করার দরকার পড়ে। আর খাবার বা বাজার সংরক্ষণের সবচেয়ে জরুরি যন্ত্র রেফ্রিজারেটর। কিন্তু আজকাল অনেকে খাবারের গুণমান নষ্ট হওয়ায় ভয়ে ফ্রিজে বেশি দিন রাখতে চান না। এখন সেই সমস্যার সমাধানেও ফ্রিজে এসেছে নতুন প্রযুক্তি। শাকসবজি যেমন সূর্যের আলোয় সতেজ থাকে, তেমনি ফ্রিজের ভেতরে নতুন যুক্ত হওয়া প্রযুক্তি অতিবেগুনি রশ্মির কল্যাণে শাকসবজি ফ্রেশ থাকবে, দাবি করছেন ফ্রিজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। দিন যাচ্ছে আর ফ্রিজে যুক্ত হচ্ছে এমন আধুনিক সুবিধা।
বর্তমানে বাজারে ওয়ালটন, স্যামসাং, হিটাচি, ওয়ার্লপুল, ট্রান্সটেক, শার্প, এলজি, সিঙ্গার, ওরিয়ন, ভিশন, কনকা, যমুনা, ট্রান্সকমসহ বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্ট ফ্রিজ রয়েছে। স্মার্ট ফ্রিজে থাকে ইনভার্টার প্রযুক্তি। এতে পাঁচটি মোড কাজ করে। বিদ্যুৎ খরচও কম। সাধারণভাবে ওপরে ডিপ আর নিচে ‘নরমাল’ ফ্রিজ থাকে। তবে এখন ধারণা বদলে যাচ্ছে। অনেক রেফ্রিজারেটরে এখন নরমাল ওপরে দিয়ে ডিপ অংশ রাখা হচ্ছে নিচে। নতুন এই প্রযুক্তির যন্ত্রে প্রয়োজনের সময় ডিপ ফ্রিজকে পুরোটাই সাধারণ ফ্রিজে রূপান্তর করে ব্যবহার করা যায়। কেউ বাসার বাইরে গেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য এনার্জি সেভিং মোড চালু করে রাখতে পারেন। স্মার্ট ফ্রিজে যুক্ত হয়েছে টাচ প্রযুক্তি। কাচের দরজাযুক্ত এই ফ্রিজে দুবার নক করলেই আলো জ্বলে উঠবে। বাইরে থেকে দেখা যাবে ফ্রিজের কোন চেম্বারে কী রাখা আছে। ফ্রিজে এখন থাকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রযুক্তি। ফলে খাবার দীর্ঘ সময় তাজা থাকে। স্মার্ট ফ্রিজের আলাদা কম্পার্টমেন্টে চাইলেই খাবারের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন আর্দ্রতায় আলাদাভাবে রাখতে পারবেন, যা খাবারকে সতেজ রাখে দীর্ঘ সময়। এতে এক খাবারের গন্ধ অন্য খাবারে যায় না এবং খাবারের গুণগত মান ঠিক থাকে অনেক বেশি। ফ্রিজে আরও রয়েছে ডুয়েল ফ্যান কুলিং, যা খাবারকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কুলিং সরবরাহ করে। ফলে দীর্ঘদিন খাবার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
ওয়ালটনের অ্যাডিশনাল অপারেটিভ পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওয়ালটনে প্রায় ২০০ মডেলের ফ্রিজ আছে। ঈদ উপলক্ষে এসেছে আরও নতুন বেশ কিছু মডেল। নন-ফ্রস্ট (ফ্রিজের গায়ে বরফ জমবে না এমন) রেফ্রিজারেটরগুলোর দাম ৪৭ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৩১ হাজার পর্যন্ত।’
এদিকে ট্রান্সকম ডিজিটালে ৪৩ হাজার ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকার ফ্রিজও আছে। কী আছে লাখ টাকার ফ্রিজে, জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব হাসান বলেন, ‘এগুলো সরাসরি জাপান থেকে আসে। এটা টাচ কন্ট্রোল। এর ভেতর ন্যানো টাইটেনিয়াম টেকনোলজি আছে। ফলে কোনো খাবার ১৫ দিন রাখলেও সেটা যেভাবে রাখা হয়েছিল সে রকমই থাকে। খাবারের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।’
অনেক প্রতিষ্ঠানের এখন দুই দরজাওয়ালা ফ্রিজ আছে। কেউ কেউ এনেছে চার দরজার ফ্রিজ। শুধু যেটুকু দরকার সেই অংশের দরজা খুললেই চলবে, বাকি অংশে থাকা খাবারের আর্দ্রতা থাকবে ঠিকঠাক। দুই দরজার ফ্রিজে আছে টাচ করে লক করার সুবিধা। শিশুরা যাতে যখন–তখন ফ্রিজ খুলতে না পারে, সে জন্য এই লক। ফলে এটাকে চাইল্ড লক বলা হচ্ছে। ফ্রিজের বাইরের দিক থেকে সরাসরি ঠান্ডা পানি নেওয়ার জন্য অনেক কোম্পানির আছে আলাদা চেম্বার। শুধু ঠান্ডা পানি না, ফ্রিজ না খুলে বরফের টুকরা বা বরফকুচিও নেওয়া যায় স্মার্ট ফ্রিজ থেকে। বাইরে শুধু গ্লাস ধরবেন আর গড়গড় করে বরফ পড়তে থাকবে। স্মার্ট ফ্রিজের কোনো কোনো মডেল পুরোটাই ওয়াই–ফাই সুবিধা থাকায় স্মার্টফোনের মাধ্যমে পরিচালনা করাও সম্ভব। বিদ্যুৎ খরচ কমানো, বরফ না জমাসহ নানা সুবিধা যুক্ত হয়েছে এই সময়ে ফ্রিজে।
খাবার সতেজ রাখার পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ফ্রিজের ভূমিকা রয়েছে। দামি ফ্রিজগুলোতে থাকে মার্বেলের দরজা বা প্রিমিয়াম গ্লাস লুক। আপনি যদি রুচিশীল হন আর সামর্থ্য থাকে, তাহলে প্রয়োজন বুঝে আধুনিক একটা ফ্রিজ পরিবারকে উপহার দিতেই পারেন।