দেশি খাবারগুলোকে কখনো এভাবে দেখা হয়নি
জাপানিজ বা চায়নিজ খাবার খেয়ে আমরা গর্ব করে অন্যকে বলি। ফেসবুকে খাবারের ছবিসহ স্ট্যাটাস দিই। কিন্তু কাউকে কখনো বলতে শুনেছেন, অমুক বিশেষ রেস্তরাঁয় গিয়ে লইট্টা শুঁটকি ভুনা দিয়ে ভাত খেলাম। অথবা অমুক রেস্তরাঁয় মটকা খেতে যাব। অথচ শুঁটকি, ভুঁড়ি, মটকা, হাওয়াই মিঠাই—এসব দেশি খাবার খেতে আমাদেরও বেশ লাগে। তারপরও যে শোনেননি তার কারণ, দেশি এসব মজাদার খাবার নিয়ে দেশে বা আন্তর্জাতিক ‘ফুড চেইন’ হয়নি। এটাকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একটি রূপ বলেই মনে করেন হাবিবা নওরোজ।
দেশি এসব খাবারকেই অন্যভাবে তুলে ধরতে রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে বিশেষ এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন হাবিবা নওরোজ। ‘টাং টাইড’ নামের এই প্রদর্শনীতে দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকেই দেখা হয়েছে ভিন্ন চোখে।
কয়েকটি খাবার পাশাপাশি রেখে এমন কিছু বানানো হয়েছে, দর্শকের কাছে যা ভিন্ন মানে হয়ে ধরা দেবে। কখনো মনে হয় ১৯০০ সালে ল্যাবে তৈরি করা কোনো অদ্ভুত যন্ত্র। কখনো আবার মনে হয়, ছোটবেলায় রূপকথার বইয়ে পড়া রাক্ষসের প্রাণভোমরা লুকিয়ে রাখা এক ডালিম। একটি ছবির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অলৌকিক দীঘিতে সাঁতরে বেড়ানো কাল্পনিক মাছ বলে ভ্রম হতেই পারে।
হাবিবা নওরোজের যা কিছু ভালো লাগে, সবকিছুর কাছে গিয়ে একবার স্পর্শ করে আসতে ইচ্ছা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তারপর পাঠশালা থেকে আলোকচিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর ড্যানিশ স্কুল অব মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজমে ভর্তি হন। সেখান থেকে ফিরে শুরু করলেন ভিজ্যুয়াল অ্যানথ্রোপলজি। লৈঙ্গিক রাজনীতি নিয়ে কাজের এক ফাঁকে শুরু হয়ে গেল করোনার বিধিনিষেধ। তখন ঘরে বসে হাতে তুলে নিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কুটুম কাটাম’ বইটা। সেখান থেকেই এই প্রদর্শনীর সূত্রপাত।
১৯৩০ সালের পর আর ছবি আঁকেননি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কী করেছেন তাহলে? প্রতিদিন নিয়ম করে বাগানে হাঁটতেন। সেখানে পড়ে থাকা কাঠের টুকরা কুড়িয়ে থলেতে ভরতেন। ঘরে ফিরে সেগুলো দিয়ে পুতুল, খেলনাসহ নানাকিছু বানাতেন। সেগুলোর তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘বন্ধু শিল্প’। এখন তো ‘ফাউন্ড অবজেক্ট’ দিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
ঐতিহ্যবাহী দেশি খাবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা হাবিবা নওরোজের বহুদিনের। এই খাবারগুলোকে যদি নতুন আলোকে দেখাতে চাই, তাহলে তার চেহারাটা কেমন হবে? তেমন চিন্তা থেকেই দেশি খাবার আর খাবারের উপাদান সংগ্রহ করা শুরু করেন তিনি। সেগুলো দিয়ে বন্ধু শিল্পের মতো করে টুকরা জুড়ে জুড়ে ভাস্কর্যের মতো করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। তারপর সেগুলোর ছবি তোলা শুরু করেন হাবিবা নওরোজ।
সেগুলো থেকে নির্বাচিত ছবিগুলো ফ্রেমবন্দী করে রাখা হয়েছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি।