বাঙালি মানেই প্রতি বেলায় ভাতের পাতে ডালের উপস্থিতি। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেলায়ও সে কথা শতভাগ খাটে। তাই তো তিনি জানিয়েছেন, যদি তাঁকে একটা নির্জন দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, আর তিনি যদি কেবল একটি খাবার নিতে পারেন, তাহলে সেটি হবে ডাল। মসুর ডাল। নোবেলজয়ী অভিজিতের নোবেলজয়ী স্ত্রী এস্থার দুফলো।
তাঁর ভাই এক বড়দিনের আগে ফোন করলেন অভিজিৎকে। কিসের একটা রেসিপি নিতে। তিনিও সেটি রান্না করে বাঙালি খাবার খাইয়ে তাঁর প্রেমিকাকে খুশি করতে চান, এমন একটা হৃদয়ঘটিত ব্যাপার জড়িত ছিল। তাঁর জন্যই খাবারের রেসিপি টুকে রাখতেন খাতায়। তারপর সেই রেসিপিগুলো নিয়ে নিজের রান্নার অভিজ্ঞতা লিখতে শুরু করলেন। সেই খাতা একদিন গিয়ে পড়ল ‘জাগারনাট বুকস’-এর প্রকাশক শিখি সরকারের হাতে। তারপর ইলাস্ট্রেটর চেয়িনি অলিভারের সঙ্গে বসে শুরু হলো আলগোছে যা কিছু লিখেছিলেন, সেগুলোকে বইয়ের পাতায় রূপান্তরের কাজ।
ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এই অধ্যাপক তাঁর এই বই সম্পর্কে বলেন, ‘আমার মনে হলো, কেবল রেসিপি লিখে যাওয়া খুবই বোরিং একটা কাজ। আমি নিজেই তাই সেখানে কিছু মসলা যোগ করতে চেয়েছিলাম। আরে, সেই মসলা হলো রান্না নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জুড়ে দেওয়া। আমরা কেবল খাওয়ার জন্য রান্না করি না, আমরা কাউকে “ইমপ্রেস” করতে রান্না করি। আবার বিষণ্নতা ভুলে নিজেকে খুশি করতে, অনুপ্রাণিত করতেও রান্না করি। আমি রান্না করে ভীষণ আনন্দ পাই।’
অভিজিৎ এত বড় অর্থনীতিবিদ হলে কী হবে, তিনি একজন সাধারণ বাঙালি মায়ের মতো প্রতিদিন রান্না করেন। সেটিই জানিয়ে বললেন, ‘রান্নার সঙ্গে নোবেলের সম্পর্কটা কী! এটা তো বেঁচে থাকার একটা উপকরণ। আমরা সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরি। তারপরই আমি ফ্রেশ হয়ে রান্না চড়াই। সপ্তাহে তিন দিন ভারতীয় রান্না হয়। সবজি, ডাল, মাছ। আর তিন দিন পাস্তা, স্যুপ, সালাদ—এগুলো।’ এর জন্য যে খুব চাপ নিতে হয়, তা-ও নয়। সাত আর ছয় বছর বয়সী দুই সন্তান নেমি আর মিলানকে গোসল করানোর ফাঁকেই তিনি রান্না করে ফেলেন। আবার ফোনে আলাপ সারতে সারতেও হয়ে যায় দুটো সহজ পদ।
লকডাউনে পুরোটা সময় কাটিয়েছেন স্ত্রী এস্থারের দেশ ফ্রান্সের প্যারিসে। তখনো রান্না করেছেন? উত্তরে অভিজিৎ বলেন, ‘তখন তো সবচেয়ে বেশি রেঁধেছি। আমাদের বাসার পাশেই বাজার। সেখানে সকাল সকাল গিয়ে টাটকা শাকসবজি, মাছ, আম কিনতাম। আর মনভরে রান্না করতাম।’ বইটি সম্পর্ক এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বইটি তিনি লিখেছেন রেসিপি ভাগ করে নিতে নয়, বরং রান্না বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করতে, যাতে রান্নার দায়িত্ব কোনো একজনের ওপর না পড়ে। এর সঙ্গে লিঙ্গ বা শ্রেণির কোনো ব্যাপার জুড়ে নেই। কেউ যদি বলে যে সে রান্না করতে পারেন না, এটা নাকি অভিজিৎ বিশ্বাসই করতে পারেন না। একটা মানুষ কীভাবে রান্না করতে পারে না। তিনি তো জীবনভর হেঁসেলের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে এসেছেন। আর নিজের ঘাড়ে হাসিমুখে চাপিয়েছেন বেশিটুকুই।