লকডাউনে দৃঢ় হোক সম্পর্ক
কঠোর বিধিনিষেধে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সুদৃঢ় করার এর থেকে ভালো সুযোগ আর কী আছে বলুন। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকতে হচ্ছে বেশির ভাগ সময়। আর তাতেই নাকি অবনতি হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। চীনে নাকি ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, এ দেশেও কিছুটা বেড়েছে পারিবারিক কলহ। দৈনন্দিন কাজকর্ম ভাগ করে নিতে হচ্ছে বলে মনোমালিন্য বাড়ছে দাম্পত্যে। কিন্তু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে, কঠোর বিধিনিষেধে অবনতির বদলে সম্পর্কে দৃঢ়তা আনা কিন্তু অনেক বেশি সহজ।
সংসারে একে অপরের ভূমিকা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার স্ত্রী যদি কর্মজীবী হয়ে থাকেন, তাহলে এত দিন যে অফিস আর সংসার একসঙ্গে সামলাচ্ছেন দারুণভাবে, তা উপলব্ধি করুন। একে অপরকে সম্মান করুন। একে অপরের কাজে নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করুন। কঠোর বিধিনিষেধ আমাদের সবাইকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে কমবেশি।
আপনি যদি বাড়ির কোনো কাজে কখনো সাহায্য না–ও করে থাকেন, একবার চেষ্টা করেই দেখুন না। এতটা সময় একসঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাওয়া যাবে, তা হয়তো কেউ কখনোই ভাবেনি। সারা দিন নিজের রুটিন সেট করে নিন। আপনি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকলেও কিছুটা সময় নিজেদের জন্য রাখুন। আর কাজের ভাগ করে নিন। সংসারের কে কোন দায়িত্ব নেবেন, তা যদি আগেই ভাগ করে নেন, তাহলে ঝগড়া হবে কম।
সময়টাকে কাজে লাগান। এত দিন যেসব কাজ লিস্টে রেখেছেন, সেগুলো করে ফেলুন। হ্যাঁ, বাইরে যেতে পারছেন না ঠিকই! কিন্তু বাড়িতে থেকেও তো কোয়ালিটি টাইম কাটানো যায়। ওয়র্কআউট করুন একসঙ্গে, সিনেমা দেখুন একসঙ্গে বা রান্না করুন।
আপনার কাছ থেকে সঙ্গীর যে চাওয়াগুলো পূরণ হচ্ছে না, সে দিকে খেয়াল রাখুন। দুজনেরই উচিত সঙ্গীর চাহিদাগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া, তাঁকে মূল্যায়ন করা।
সম্পর্কের প্রথম দিনগুলোতে নিজেদের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিল, কয়েক বছর পর সেই ভালোবাসার চেহারায় পরিবর্তন আসবে, হয়তো ভালোবাসার মাত্রাও কমবে। তবে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি, শ্রদ্ধা ও যত্নশীল হওয়ার মতো অনুভূতিগুলো কখনোই কমতে দেওয়া যাবে না। একসঙ্গে বেশি সময় কাটানোর মুহূর্তগুলোতে প্রথম দিকে সঙ্গীর যে বিষয়গুলোকে ভালোবেসে তার প্রশংসা করতেন, সে বিষয়গুলো নতুন করে সামনে আনুন।
ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ দুজন মানুষ হবে একে অপরের পরিপূরক। আর একে অপরের খেয়াল রাখাটা যত দিন খুশি মনে করে যাবেন, তত দিন ভালোবাসাও বেঁচে থাকবে। তাই ছোট ছোট যত্নগুলো এ সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে খেয়াল রাখুন।
দুটি মানুষ একত্রে অনেকটা সময় কাটাতে গিয়ে মতবিরোধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই মতবিরোধগুলো চেপে রাখলে নেতিবাচকতা বাড়তে থাকবে। সঙ্গীর কোনো আচরণ যদি সইতে না পারেন, তবে দ্রুত তা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করুন।
আজকাল মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশে যেন বড্ড কৃপণ। সঙ্গীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ কখনোই অবহেলা করা উচিত হবে না। সুযোগ পেলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
আশপাশের মানুষ আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে কী ভাবছে, লোকে কী বলবে—এসব নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত না হয়ে দুজন সম্পর্ক থেকে কী চান, সেদিকেই বরং মনোযোগ দিন।
প্রত্যেক মানুষেরই জীবনের কিছু লক্ষ্য থাকা উচিত। আর যাঁর সঙ্গে সারা জীবন সংসারের কথা ভাবছেন, তাঁর সঙ্গে জীবনের লক্ষ্যগুলোও ভাগাভাগি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ব্যস্ততার কারণে হয়তো ইতিপূর্বে আপনার স্বপ্ন বা লক্ষ্য নিয়ে কখনো সঙ্গীর সঙ্গে বিস্তারিত শেয়ার করেননি। এই কঠোর বিধিনিষেধে অফুরন্ত সময়। নিজের মনের কথাগুলো, লক্ষ্যগুলো নিয়ে অনায়াসে কথা বলে নিতে পারেন।
দাম্পত্য জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে উত্তেজনা, একে অপরের জন্য প্রতীক্ষা, দুষ্টামি, মিষ্টি ঝগড়া, কিছুক্ষণ পর আবার মিল হওয়া, আবেগঘন আলাপ—ভালোবাসার এ পথে এসবের দেখা মেলে। তাই সম্পর্কটা আরেকটু সুদৃঢ় করার সুযোগ হেলায় হারাবেন না যেন।