লালগালিচা মাতানো এই তিন ভারতীয় নারী কারা

গত বছর সেই উৎসবস্থল পরিণত হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্রে, করোনায় আক্রান্ত অসহায় মানুষের আর্তনাদে। এ কোণে সে কোণে হয়তো এখনো লেপ্টে রয়েছে সেই সব আর্তনাদ, ওষুধের গন্ধের ছিটেফোটা। গত বছর ফ্রান্সে করোনার প্রকোপ বাড়লে সেখানকার সরকার জায়গাটিকে দরিদ্রদের করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করতে দেয়। এ বছর ক্রান্তিকালের মাঝেও শুরু হয়ে গেছে উৎসবের ডামাডোল। বিশ্বের প্রথম সারির এই চলচ্চিত্র উৎসব সারা বিশ্ব থেকে আমন্ত্রণ জানায় ফ্যাশনিস্তাদের। কয়েক বছর ধরে ভারতীয়রা তাকিয়ে থাকে কানের রেড কার্পেটে। ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনম কাপুর আবার কখনো কঙ্গনা রনৌত বা হিনা খানরা কী পরল চোখ রাখে তা দেখতে। এ বছর তাঁরা কেউ নেই। তবে ভারত থেকে রেড কার্পেটে হেঁটেছেন ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের বেশ কয়েকজন। শোনা যাক তাঁদের কথা।

কোচি থেকে কানে নিধি

এবার কানে নজর কেড়েছেন দক্ষিণ ভারতীয় মডেল, ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার ও অভিনেত্রী নিধি সুনীল। ভারতের কোচিতে বেড়ে ওঠা ৩৪ বছর বয়সী নিধিকে কান আমন্ত্রণ জানিয়েছে ল’রিয়েলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে। এখনো পর্যন্ত দুটি লুকে দেখা দিয়েছেন নিধি। প্রথমটি গাউন। সেটির ডিজাইন করেছেন ৪৭ বছর বয়সী লেবানিজ ফ্যাশন ডিজাইনার রাবিহ কেরুজ। সাদা রঙের বুক খোলা গাউনের সঙ্গে চুলগুলো মুক্ত করে রেখেছিলেন নিধি। মেকআপ ছিল মিনিমাল।
দ্বিতীয়টি ভারতীয় ডিজাইনার রাহুল মিশ্রর ডিজাইন করা। পোশাকটি ঊরু পর্যন্ত লম্বা। সেই অফ হোয়াইট পোশাকটি দেখলে মনে হবে যেন অসংখ্য ফার্ন বেরিয়ে এসেছে পোশাকটি থেকে। চোয়ালে ছিল প্রচুর ব্রোঞ্জের হাইলাইটার। মাশকারা আর গাঢ় খয়েরি লিপস্টিকও ছিল। এই স্টাইলটি করেছে ড্যাং। এককথায় যাকে বলে গ্লামারাস।

রেড কার্পেটে ‘আড়াই মাসের মা’ দীপা

দীপার বয়স ২৫। মা দীপার বয়স আড়াই মাস। দীপা খোসলার মেয়ে ডুয়ার বয়স মাত্র আড়াই মাস। সন্তান জন্ম দেওয়ার আড়াই মাসের মাথায় দীপা কানের রেড কার্পেট মাতাবেন, ভাবেননি। তাই তো প্রথম দিন ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখার সাহস করেছিলাম। সেটা সত্যি হবে কি হবে না, ভাবিনি। কেবল পাগলের মতো পরিশ্রম করে গেছি। দীপা হিসেবে কানের রেড কার্পেটে এটা আমার তৃতীয়বার। কিন্তু একজন মা হিসেবে এই প্রথম। ডুয়া বড় হয়ে দেখবে আর বলবে, ‘আরে, এটা তো মাম্মি।’

দীপা মূলত পাঞ্জাবি। তাঁর পরিবার চেন্নাইতে থিতু হওয়ার আগে প্রথম ছয় মাস কেটেছে দিল্লিতে। তারপর তিনি একটা ব্রিটিশ বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। আর এখন ফুল ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছেন নেদারল্যান্ডসে। পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার দীপার ওজন ৪৯। ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নামডাক আছে তাঁর। প্রশংসা কুড়িয়েছেন সামাজিক কাজ করেও। ২০১৮ সালে দীপা আইনজীবী ও নেদারল্যান্ডসের কূটনীতিক ওলেগ বুলারকে ভারতের উদয়পুরে বিয়ে করেন। সেই বিয়ে আলোড়ন তুলেছিল।

দুটো পোশাকে দেখা দিয়েছেন রেড কার্পেটে। পিকক ইন্ডিয়ার নকশা করা ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী লেহেঙ্গায় দেখা গেছে প্রথমবার। আর পরেরবার নীলচে সাদা রঙের ছড়ানো গাউনে। ল’রিয়েল প্যারিসের হয়ে অংশ নিয়েছেন রেড কার্পেটে।

বিউটি ইনফ্লুয়েন্সার ফারহানা

ফারহানা বদি। তাঁর জন্ম ভারতে। বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। আর এখন তিনি দুবাইয়ের জনপ্রিয় ফ্যাশন ও বিউটি ইনফ্লুয়েন্সার, নানা ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর, মডেল ও ব্লগার। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে তিনি মেকআপ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন; সমান্তরালে চলে মডেলিং। তৃতীয়বারের মতো মাড়ালেন কানের লালগালিচা। দুবাইয়ের নামকরা ডিজাইনার অ্যাটেলিয়ার জোহরার পোশাকে রেড কার্পেটে হাজির হয়েছিলেন ফারহানা। ছড়ানো উজ্জ্বল হলুদরঙা গাউনটি বেশ আলোচিত হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী ফারহানা এক ছেলের মা। দুবাইয়ের ফ্যাশন ও বিউটি ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নাম করেছেন তিনি। কানের লালগালিচায় তাঁর পোশাক, মেকআপ, অলংকার, সাজসজ্জা—সবকিছুই করেছেন নারীরা। বাধা পেরিয়ে জ্বলে ওঠা পৃথিবীর নারীদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন তাঁর এই কান লুক। রেড কার্পেটের ছবি প্রকাশ করে ফারহানা লেখেন, ‘আমি পা থেকে মাথা পর্যন্ত নারীর হাতে তৈরি।’ সবাইকে ট্যাগ করে আলাদা করে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।