হয়ে গেল 'দ্যা গোল্ডেন লিভস' বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

৩৬ জন অভিবাসী বাঙালি নারী লেখকের ইংরেজি ভাষায় লেখা ও অনুবাদ করা ৩৬টি গল্প নিয়ে গল্প সংকলন ‘দ্য গোল্ডেন লিভস’ বই প্রকাশ হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
৩৬ জন অভিবাসী বাঙালি নারী লেখকের ইংরেজি ভাষায় লেখা ও অনুবাদ করা ৩৬টি গল্প নিয়ে গল্প সংকলন ‘দ্য গোল্ডেন লিভস’ বই প্রকাশ হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

৩৬ জন অভিবাসী বাঙালি নারী লেখকের ইংরেজি ভাষায় লেখা ও অনুবাদ করা ৩৬টি গল্প নিয়ে গল্প সংকলন ‘দ্য গোল্ডেন লিভস’ বই প্রকাশ হয়েছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বইটি যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক ও বিজ্ঞানী পূরবী বসু এবং লেখক-প্রকাশক পপি চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন নেসা, নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ৩৯ এর অ্যাসেম্বলি মেম্বার ক্যাটালিনা ক্রুজ, জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর-এ-ইলাহি মিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা কারেন গোল্ডফ্ল্যাব, মিজ অ্যান্ড্রিয়া, অধ্যাপক আনিটা বাক্স, কবি সাফিয়া জামি, গেরি গ্রেঞ্জার, সিলসিয়া ডি. রোজারিও, ম্যাগডুলিন গোমেজ, আইরিন ডি রোজারিও এবং ইসাবেলা ডিয়াস।

আমেরিকা ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী তাহমিনা শহীদ একটি দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করেন। আমেরিকার বিখ্যাত লেখক মায়া অ্যাঞ্জেলো’এর “স্টিল আই রাইজ” কবিতাটি পাঠ করেন মিজ অ্যান্ড্রিয়া।

সম্মানিত কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন নেসা তার মূল্যবান বক্তব্যে বলেন, শুধু বাংলা বা ইংরেজিতে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের এই ডায়াসপোরা সাহিত্য স্প্যানিশ ভাষাতেও অনূদিত হোক, এটাই আমার প্রত্যাশা। কারণ নিউইয়র্কে ইংরেজির পরে স্প্যানিশ হলো দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা। স্প্যানিশ ভাষায় বাঙালি লেখকদের লেখা অনূদিত হলে বিশাল স্প্যানিশ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাবে আমাদের বাংলা সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের খবর।

‘দ্য গোল্ডেন লিভস’ বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।
‘দ্য গোল্ডেন লিভস’ বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে নারীদের সাফল্য একদিন আসবেই।

জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর-এ-ইলাহি মিনা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় কাজ, এভাবেই একদিন আমেরিকার মেইনস্ট্রীমে পৌঁছে যাবে আমাদের সাহিত্য।’

বইটির অন্যতম সম্পাদক পূরবী বসু বলেন, এই হৃদয়গ্রাহী গল্পগুলো, যার অনেকগুলোই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে লেখা, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে থাকবে। প্রাথমিক অভিবাসী বাঙালি নারীদের চিন্তা-ভাবনা, তাদের জীবনযাপন প্রণালি, কীভাবে তারা তাদের সময় কাটিয়েছিল, তাদের দৈনন্দিন জীবন কেমন ছিল, মানবাধিকার, ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা কীভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল একটি পশ্চিমা দেশে-এসবই জানতে পারবে পরবর্তী প্রজন্ম বইটি থেকে।

সংগঠনের উপদেষ্টা এবং খানস টিউটোরিয়ালের চেয়ারপারসন নাঈমা খান বলেন, ‘এভাবে প্রবাসীরা সম্মিলিতভাবে ভালো কাজ করলে এ দেশে যেমন বাংলাদেশিদের সুনাম বাড়বে সেই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।’

প্রকাশক ও সম্পাদক পপি চৌধুরী বইটির অন্যতম সম্পাদক পূরবী বসুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাঁর সহযোগিতা ছাড়া এমন একটি বই করা সম্ভব হতো না কখনই।

বইটি নিয়ে আলোচনা করেন লেখক-সাংবাদিক বেলাল বেগ এবং লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কারেন গোল্ডফ্ল্যাব। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে সাউথ এশিয়ান ক্রিয়েটিভ উইমেন থেকে প্রকাশিতব্য আগামী বইয়ের ঘোষণা দেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসমিন আরা এবং কমিউনিকেশন ডিরেক্টর নাসরিন চৌধুরী।

অনেক গুণী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল অনুষ্ঠানস্থল। গুণীজনের মধ্যে ছিলেন লেখক-সাংবাদিক বেলাল বেগ, সায়েন্টিস্ট এবং গবেষক ড. ধনঞ্জয় সাহা, খানস টিউটোরিয়ালের চেয়ারপারসন নাঈমা খান, অধ্যাপক তাহমিনা জামান, মূলধারার লিডার মোরশেদুল আলম, ফাদার স্ট্যানলি গোমেজ, রেভারেন্ড জোসেফ বিশ্বাস, লেখক আবেদিন কাদির, উদীচী’এর ইউএসএ প্রেসিডেন্ট জীবন বিশ্বাস, অভিনয়শিল্পী রেখা আহমেদ, লেখক-অভিনয় শিল্পী লুৎফুন্নাহার লতা, অধ্যাপক হুসনে আরা বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদুল ইসলাম, লেখক-সাংবাদিক সামশাদ হুসাম, কন্ঠশিল্পী-লেখক তাহমিনা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদুল ইসলাম, ডা. মনোয়ারা বেগম, কবি-শিক্ষক ও সংগঠক সামস আল মমিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাবিনা হাই উর্বি, লেখক-সাংবাদিক লিজি রহমান, লেখক ওবায়দুল্লাহ মামুন, সাহিত্য একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন, কবি নাহার ফরিদ খান, কবি আলেয়া চৌধুরী, আভা’র প্রেসিডেন্ট মেহের চৌধুরী সহ আরো অনেকে। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে বসবাসরত বইটির সকল লেখকেরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক জয়ীষা দত্ত ভার্জিনিয়া থেকে হঠাৎ করে উপস্থিত হয়ে চমকে দেয় মা পূরবী বসুকে।

অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় লেখক-সাংবাদিক ও নিউইয়র্ক মহিলা পরিষদের সভাপতি সামশাদ হুসাম, এবং আভা’র প্রেসিডেন্ট মেহের চৌধুরীকে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নিউইয়র্কের প্রখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী এবং বাংলাদেশ বেতারের এক সময়কার জনপ্রিয় উপস্থাপক সাবিনা শারমিন নিহার এবং তার কন্যা শায়ান শারমিন। অনুষ্ঠানের শেষ অংশ উপস্থাপনা করেন রুপা খানম।

প্রাণবন্ত এই প্রকাশনা উৎসবে অনেক গুণী মানুষের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক লাভলু আনসার, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ মোহম্মদুল্লাহ, সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান, সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকার সম্পাদক মনজুর আহমেদ, চ্যানেল আই এর নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, ভয়েস অব আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রতিনিধি আকবর হায়দার কিরণ, দৈনিক ইত্তেফাকের ইউএসএ প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম, এটিএন নিউজ এডিটর কানু দত্ত, বাংলাভিষণ-এর নিহার সিদ্দিকী, সাংবাদিক আবি সাঈদ রতন, বাপস নিউজ-এর এডিটর ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, সাংবাদিক শামীম আল আমিনসহ আরো অনেকে।

যাদের লেখা নিয়ে বইটি প্রকাশিত হয়েছে: দিলারা হাশেম, নূরজাহান বোস, পূরবী বসু, পপি চৌধুরী, নাহার মনিকা, সালমা বাণী, অনন্যা দাশ, নাঈমা খান, লিজি রহমান, লুৎফুন নাহার লতা, সামশাদ হুসাম, তাহমিনা জামান, শবনম নাদিয়া, জেসমিন আরা, তাহমিনা শহীদ, কামরুন জিনিয়া, মাকসুদা আইরিন মুকুল, আয়েশা ইকবাল, কাঁকন চক্রবর্তী, তামজিদা খান পিউ, সাদমা খান, নাসরিন চৌধুরী, টিউলিপ চৌধুরী, রওশন হাসান, রিটা রায় মিঠু, রশ্মি ভৌমিক, সুস্মিতা দেবনাথ, শেলী জামান খান, তাছলিমা হাসান, আলেয়া চৌধুরী, ছন্দা বিনতে সুলতান, কবিতা হোসাইন, সিমু আফরোজা, সাকিকুন নাহার, তানজিলা পূর্ণতা, এবং জয়ীষা দত্ত।

৩৩৫ পৃষ্ঠার দৃষ্টিনন্দন এ বইটি নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশ করেছে “ক্রিয়েটিক ডিজাইন অ্যান্ড বুক পাবলিকেশন”, প্রচ্ছদ করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ।