কলকাতার তিনটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ঢাবির গবেষণা সংসদ

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক, গবেষক ও শিক্ষাবিদেরা গবেষণাপত্র উপস্থাপন করছেন, আর তাদের মাঝে স্নাতক পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থীও উপস্থাপন করছেন নিজেদের গবেষণাপত্র এবং উত্তর দিচ্ছেন গবেষণা নিয়ে নানা প্রশ্নের!

উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পড়ুয়াদের গবেষণাকে খুব একটা মূল্যায়ন করা হয় না বা স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। এ পর্যায়ে গবেষণা হয় না বলেই ভাবা হয়। তবে প্রচলিত এ ধারণাকে পাল্টে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন কিছু তরুণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের গবেষকেরা এ ব্যাপারটিকেই বাস্তবতায় রূপ দিয়ে চলেছেন তিন বছর ধরে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের ২০ জন তরুণ গবেষক। সেখানে গবেষণাপত্র উপস্থাপন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে নিজেদের চিন্তা ভাগাভাগি করে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ২০ জন তরুণ গবেষক।

পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ যাদবপুর, বিদ্যাসাগর ও কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের আমন্ত্রণ নিয়ে ৩-১০ সেপ্টেম্বর টানা ৮ দিনের ভারত সফর করেন গবেষক দলের সদস্যরা। এ সময় ২০ তরুণ গবেষক অংশগ্রহণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়োজনে আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্সে। ভ্রমণ করেছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাংলাদেশ ভবনসহ বিভিন্ন স্থান।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক

২ সেপ্টেম্বর রাতে পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষক দল। ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে কলকাতায় পৌঁছে নিজেদের জন্য আয়োজকদের নির্ধারিত সল্ট লেক স্টেডিয়ামের যুবভারতী সরকারি ইয়ুথ হোস্টেলে ওঠেন। পরদিন ভোরে উঠেই মেদেনিপুরে অবস্থিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন ধরেন। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ট্রেন জার্নি শেষে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নেন দিনব্যাপী ‘সম্প্রীতি সংলাপ’-এ। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেকটিভ সেশনের ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার একজন খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রঞ্জন চক্রবর্তী। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত সেমিনার পরিচালনা করেন অধ্যাপক ড. রাজকুমার কুঠারী। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের গবেষকদের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, স্কলার ও শিক্ষার্থীরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার বিভিন্ন শিক্ষণীয় জায়গায় ভ্রমণ করে কাটান তরুণ গবেষক দল। এর মধ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলেজ স্ট্রিট, কফি হাউস, প্রিসেন্স ঘাট প্রভৃতি অন্যতম।

৭ সেপ্টেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ও বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ১০০ বছর’ শীর্ষক দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন তরুণ গবেষক দল। সেখানে টিম ভিত্তিক ৭টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন গবেষণা সংসদের গবেষক দল। এসব গবেষণাপত্রের বিষয়গুলো ছিল দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, সমাজ, তরুণদের অংশগ্রহণ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন ইস্যু, রোহিঙ্গা সমস্যা, ভারত-বাংলাদেশ সংস্কৃতি ইত্যাদি এরিয়া নিয়ে। গবেষণাপত্রের শিরোনামগুলো, Dynamics of Bangladesh-India Relation: A Perspective from the Influence of Geopolitics and Foreign Policy, Contributions of Bangladeshi Diplomats for Reducing Death along the Bangladesh-India Border, Perception of Youth on Influence of Information and Communication Technology in Bilateral Business Relation of Bangladesh and India, Challenges of Bangladeshi Indigenous Youth to Build Up International Relations, Disarmament for a Utopia: A Liberalistic Analysis of the Trends of Global Arms Flow and Disarmament, Do young Generation Positively Accept Change in Social Values? Finding Answer in the Context of Globalization, Influence of Indian Bangla Serials (Star Jolsha) on Lifestyle of Middle-aged people (Age 30-60): A Study on Barisal City.

৯ সেপ্টেম্বর আসানসোলে বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবির নামে প্রতিষ্ঠিত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে অংশগ্রহণ ছিল তরুণ গবেষকদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সোসাইটি ইন সাউথ ইস্ট এশিয়া’-শীর্ষক ‘ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল মিট অ্যান্ড কনফারেন্স’- এ তরুণ গবেষকেরা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এবং গণতন্ত্র এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক
আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক

সেমিনারে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক, স্কলার ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের মধ্যকার প্রাণবন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনার শেষে ১০ সেপ্টেম্বর কলকাতার দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ শেষে ভিন্ন এক অনুভূতি সঙ্গে করে ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ফিরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের গবেষকেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক সফরটি ছিল দুর্দান্ত রকমের শিক্ষণীয় এবং প্রয়োজনীয়। গবেষণা সংসদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও এ সফরের সমন্বয়ক নাসরিন জেবিন এ ব্যাপারে বলেন, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এটিই উত্তম পন্থা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে আমরা সবাই ছিলাম তরুণ। অথচ আমরা লড়াই করেছি আন্তর্জাতিক গবেষক, অধ্যাপক এবং স্কলারদের সঙ্গে। এমনকি আমার ব্যক্তিগত গবেষণাপত্র উপস্থাপনের পর সম্মানিত বিচারকগণ তা ‘অনারেবল মেনশন’ করেছেন যা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের।

নাসরিন জেবিন বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষকেরা তাদের চমৎকার দক্ষতা, নানান বিষয়ে জ্ঞান এবং অসাধারণ বাচনভঙ্গি দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করেছে ও নিজ দেশের জন্য সম্মান কুড়িয়েছে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাংলাদেশ ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাংলাদেশ ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের তরুণ গবেষক দল। ছবি: সাইফুল্লাহ সাদেক

সামগ্রিক সফরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক, স্কলার আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পারস্পরিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের আলোচনায় তরুণ গবেষকদের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। মূলত বিদেশে গিয়ে দেশের পতাকা নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা অনেক বড় গর্বের ব্যাপার বলে মনে করেন তারা।

এবার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সফর। এর আগে ২০১৮ সালে প্রথমবার মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন হিল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ৯ দিনের কর্মশালা এবং আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে গবেষণা সংসদের ১৮ জন তরুণ গবেষক।