রুহিয়ায় টাঙ্গনে মাছ ধরার উৎসব

ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদে চলছে মাছ ধরা উৎসব।
ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদে চলছে মাছ ধরা উৎসব।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ার টাঙ্গন নদে ১৪ নম্বর রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি নামক এলাকায় (স্লুইসগেট) প্রতিবছর চলে মাছ ধরা উৎসব। গত ২৯ অক্টোবর ভোরে মাছ ধরতে নামেন কয়েক ইউনিয়নের কয়েক শ জেলেসহ সাধারণ মানুষ। মাছ ধরার ধুম চলে ১ নভেম্বর পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাছ ধরার জন্য গ্রাম ও শহরের শত শত মানুষ টাঙ্গন নদে মাছ ধরতে আসেন। নারী, পুরুষ, কিশোরসহ বৃদ্ধরাও রয়েছেন এ দলে। সবাই জাল, পলো, লাফিজাল, ফিকাজাল নিয়ে নেমে পড়েন মাছ ধরতে। এ ছাড়া যাঁদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই, তাঁরাও হাত দিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন কাদা–পানির মধ্যে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুকনো মৌসুমে জমি চাষাবাদের জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪ নম্বর রাজাগাঁও ইউনিয়নে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গন নদে ১৯৮২ সালে স্লুইসগেট নির্মাণ করে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানি আটকে রাখার ফলে এ অঞ্চলের উঁচু জমি চাষাবাদ করার উপযুক্ত হয়। অন্যদিকে, আটকে রাখা পানিতে প্রতিবছর শীতের শুরুতেই স্লুইসগেটের পানি ছাড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর টাঙ্গন নদে মাছ ধরার উৎসব চলে।

পঞ্চগড়ের ফুটকীবাড়ি থেকে এসেছেন মৎস্যশিকারি জুয়েল রানা। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এই স্লুইসগেটে মাছ ধরার জন্য অপেক্ষা করি।’

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন থেকে আসা দুলাল ও আহাম্মদ বলেন, তাঁরা কয়েকজন এসেছেন। তাঁরা শুধু মাছ ধরার জন্য নয়, এই মিলনমেলায় অংশ গ্রহণের জন্য এখানে এসেছেন। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ।’

ঠাকুরগাঁও রোড থেকে আসা আজিজুর রহমান বলেন, ‘সকালে মাছ ধরতে এসেছি। সারা দিন মাছ ধরব। এতে আমার অনেক ভালো লাগে।’

মাছশিকারিদের ভিড়ে অনেক ব্যবসায়ী এসেছেন মাছ কিনতে। শহরের চেয়ে এখানে মাছের দাম অনেক বেশি বলে জানালেন ঠাকুরগাঁও (বিসিক) শিল্প নগরী থেকে আসা ক্রেতা রবিউল ইসলাম। লাহিড়ী থেকে মাছ কিনতে আসা সাদেকুল ইসলাম বলেন, এখানে ট্যাংরা ও টনা মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল ও রুই-কাতল মাছ চাওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রতি কেজি পুঁটি মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার লক্ষ্মীরহাট থেকে আসা ওমর আলী জানান, বর্ষাকালে পানি আটকে রাখার পর কার্তিক মাসের প্রথম দিকে এই গেট খুলে দেওয়া হয়। এতে উজানের পানি কমে যায়। আর শীতের শুরুতেই গেট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় মাছ ধরার জন্য।