গদখালীর ফুলের রাজ্য যেন এক স্বর্গ উদ্যান

যশোরের গদখালীতে ফুল চাষ দেখতে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন। ছবি: লেখক
যশোরের গদখালীতে ফুল চাষ দেখতে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন। ছবি: লেখক

মন ভালো রাখতে হলে প্রকৃতির বিকল্প নেই। জীবনকে উপভোগ করতে অনেকেই ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন। আমাদের দেশের সব থেকে বড় ফুলের বাগান যশোরের গদখালীতে ভ্রমণ করলে মনে হবে, সৃষ্টিকর্তা মনে হয় নিজ হাতে তৈরি করে দিয়েছেন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য।

ব্যস্ততম এই জীবনযাত্রার মাঝে হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দিতে, অপরূপ ফুলের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে এবং তা থেকে শিক্ষালাভের জন্য ভ্রমণের অন্যতম স্থান হতে পারে ফুলের রাজ্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী।

হঠাৎ করেই পরিকল্পনা, ঘুরতে যেতে হবে যশোরের গদখালী। যে ভাবনা সেই কাজ। রওনা হলাম ৩১ আগস্ট বিকেলে। সঙ্গে মর্তুজা হাসান নাহিদ, রাফিজ, আদনান আর আমি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যশোরের উদ্দেশে গড়াই বাস ধরি আমরা। যাব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যশোরের জীমের বাসায়। প্রায় তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমরা পৌঁছালাম যশোরে।

গদখালী বাজারে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ফুলের বেচাকেনা চলে। ছবি: লেখক
গদখালী বাজারে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ফুলের বেচাকেনা চলে। ছবি: লেখক

যশোর নেমে প্রথমেই গেলাম বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যশোর বিমানবন্দরে। সেখানে সন্ধ্যার পর অপরূপ দৃশ্য দেখা শেষে গেলাম জীমের বাসা যশোর মণিহারে। রাতের ভোজ শেষে দ্রুত ঘুমের রাজ্য। কারণ, সকাল সকাল উঠতে হবে, যেতে হবে ফুলের রাজ্যে গদখালীতে।

সকালে উঠে হালকা নাশতা পেটে পুরেই আমাদের যাত্রা শুরু হলো ফুলের রাজ্য গদখালীর উদ্দেশে। যাত্রাপথেই শাঁ শাঁ করে চলতে থাকা বাস যখন ঝিকরগাছা বাজারের রাস্তা অতিক্রম করে এগিয়ে যায়, তখন থেকেই প্রকৃতপক্ষে অপরূপতার আভাস মেলে। বাসের ভেতর থেকেই তাকিয়ে দেখতে থাকলাম শতবর্ষী পুরোনো সেই বেনাপোল মহাসড়কের শিশুগাছগুলো। যাওয়ার পথের প্রকৃতির এই দৃশ্য কোনোভাবেই ভোলার নয়। চারদিকে অপরূপ দৃশ্য, সারি সারি শিশুগাছ তো আছেই। দেখে মন ভরে যায়।

দেশের ফুলের মোট চাহিদার বড় অংশের জোগান দেন ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ফুলচাষিরা। ছবি: লেখক
দেশের ফুলের মোট চাহিদার বড় অংশের জোগান দেন ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ফুলচাষিরা। ছবি: লেখক

প্রায় এক ঘণ্টা পর স্বপ্নময় গদখালীতে। সেখান থেকে ভ্যানে রওনা হলাম পানিসারা বাজারের উদ্দেশে। বড় রাস্তা পেরিয়ে গ্রামের পথে ঢোকার কিছু পরেই ফুলের রাজ্যের দেখা পেলাম। দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যেন বিখ্যাত কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। পানিসারা বাজারের বেশ কিছুটা পথ আগেই নেমে পড়লাম ভ্যান থেকে। হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম পুরো এলাকা। তখন মনে হচ্ছিল, কোথা থেকে কোথায় আসা। সব দিকে ফুল আর ফুল। পথে পথে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিউলাসসহ বিভিন্ন ফুলের মাঠের দেখা পেলাম। কোথাও খোলা মাঠে, আবার কোথাও ছাউনি দিয়ে সারি বেঁধে চলছে নানান রঙের ফুলের চাষ। পাশের এক গোলাপ বাগানে বেশ কয়েকজন কৃষককে ব্যস্ত দেখলাম ফুল কাটতে। স্তূপ করে রাখা এই ফুল ছড়িয়ে পড়বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশের ফুলের মোট চাহিদার একটা বড় অংশের জোগান দিয়ে থাকেন ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার এই ফুলচাষিরা। ১৯৮৪ সালের দিকে এখানে ফুলের চাষ শুরু হয়। পরে কয়েক দশকে ফুল চাষে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে কয়েক গুণ।

ফুলের মধ্য গোলাপের চাহিদা বেশি। ছবি: লেখক
ফুলের মধ্য গোলাপের চাহিদা বেশি। ছবি: লেখক

বর্তমানে ওই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক জড়িত ফুল চাষে। শুধু গদখালী বাজারেই প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ফুলের বেচাকেনা চলে। যা নীরবে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল করছে। এখন ঝিকরগাছা, শার্শা ছাড়াও যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুরেও বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে, বিদেশি সিনেমায় ইউরোপের ফুল বাগানের ছবি দেখেছি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ রকম ফুলের বাগান আমাদের দেশেও আছে, তা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেন না। এ যেন পৃথিবীর মাঝে এক স্বর্গ উদ্যান। বিমোহিত হয়েই কাটল পুরোটা বিকেল। ফুল কিনে ফেরার পথ ধরলাম।