পথের ধারে 'দাদমর্দন'

নরসিংদীর মনোহরদি উপজেলায় দেখা মিলল ‘দাদমর্দন’–এর। ছবি: লেখক
নরসিংদীর মনোহরদি উপজেলায় দেখা মিলল ‘দাদমর্দন’–এর। ছবি: লেখক

নরসিংদীর মনোহরদি উপজেলায় সদর রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই দৃষ্টি কাড়ে লম্বাটে একধরনের হলুদ রঙের ফুল। মনে হচ্ছিল যেন আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ঝোপের মাঝে এই সম্মিলিত ফুলগুলোর সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতোই। সুবিন্যস্ত পাতাও চোখ এড়ানোর নয়। ক্যামেরবন্দী করতে ভুল হলো না। পাশে থাকা উদ্ভিদতত্ত্ববিদ শারমিন জাহানকে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল এর জন্মবৃত্তান্ত। ‘দাদমর্দন’ নামেই এই গাছ সর্বাধিক পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Senna alata। ইংরেজি নাম Candle Bush।

পথের ধারে, পরিত্যক্ত জমিতে, খেতের মধ্যবর্তী এবং অনাবাদি স্থানে ‘দাদমর্দন’ গাছ আপনা থেকেই জন্মায়। এটি মূলত গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। দ্রুত বর্ধনশীল। সাধারণত এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ফুল ফোটার মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি। ডালের আগায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার খাড়া ডাঁটায় হলুদ রঙের ফুল নিচ থেকে ওপরের দিকে ফোটে। ফুলের পর ফল আসে। চিকন লম্বাটে ফল হয়। একটি ফলে প্রচুর বীজ থাকে। ফল পুষ্ট হয়ে ফেটে ঝরে পড়ে। সেখান থেকে সহজেই চারা জন্মে। এর আদি নিবাস মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা।

ঔষধি গাছ হিসেবে ‘দাদমর্দন’ সুপরিচিত। উদ্ভিদটির নামের মাঝেই এর মাহাত্ম লুকিয়ে আছে। দাদ ও পাঁচড়া তথা চর্মরোগে এই গাছের পাতার রস বেশ কার্যকরী। মেছতার দাগ নির্মূলে দাদমর্দনের সুফল পাওয়া যায়। একটা সময় গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের নিকট কবিরাজই ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক। চারপাশে ছিল নানা জাতের ঔষধি গাছের সমারোহ। ভরাট হচ্ছে জলাশয়। অবরুদ্ধ হচ্ছে বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের পথ। বাড়ছে জনসংখ্যা। কমছে জমি, জলাশয়। প্রকৃতি হারাতে বসেছে ভারসাম্য। উজাড় হয়েছে বন। দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি গুণে ভরা গাছ। গাছগাছড়ার এই আকাল কবিরাজদের পেশা ত্যাগে অনেকটাই বাধ্য করেছে।