চিঠির আবেগ কেড়ে নিয়েছে...

আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম। হৃদয়াবেগের সেই চিঠি এখন যেন শুধুই স্মৃতি হতে যাচ্ছে। একসময় দোয়াত-কলমে সাদা কাগজে লেখা চিঠিতে থাকত মধুময় সুর, ফুটে উঠত ভাষার নান্দনিকতা। কালের স্রোতোধারায় সেই চিঠি লেখার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে। ডাকপিয়নেরও তৎপরতা খুব বেশি লক্ষ করা যায় না।

সম্প্রতি এক পোস্ট অফিসের সামনে ডাক বিভাগের একটি স্লোগান চোখে পড়ল—‘চিঠি লিখুন, ইহা স্থায়ী’। সম্ভবত চিঠি লেখার অভ্যাস ফেরাতে ও মননে সৃষ্টিশীলতা জাগাতে স্লোগানটি লিখেছে ডাক বিভাগ।

দূর অতীতে একেকটি চিঠিতে ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে এলাকার সার্বিক খবরও তুলে ধরা হতো। চিঠিটাই যেন হাতে লেখা ছোট্ট খবরের কাগজ। বনেদি পরিবারের অনেকের বাড়িতে সাইকেলের স্পোক সামান্য ভাঁজ করে চিঠিগুলো গেঁথে সংরক্ষণ করা হতো। এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’-এর লেখাগুলো সেই সময়ের চিত্র তুলে ধরে। সেই চিঠি লেখার অভ্যাস হারিয়ে যাওয়ায় মানবজীবনের ছোট্ট ছোট্ট ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। চিঠি লিখতে সাহিত্য রচনা আর কল্পক্ষমতার যে সূত্রপাত ঘটত, সেটা এখন আর নেই।

‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ’—এ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। চিঠির আবেগ কেড়ে নিয়েছে মোবাইল ফোনের খুদে বার্তা। জীবনের আরও কত কিছু যে বিজ্ঞান কেড়ে নিচ্ছে, তার হিসাব কি আমরা রেখেছি?