স্মৃতির চাদরে ঢাকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় একই বছর ২৫ নভেম্বর ৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে। ছবি: লেখক
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় একই বছর ২৫ নভেম্বর ৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে। ছবি: লেখক

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম ১৯৮৭ সালে শুরু হলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর বিষয় থাকলেও ধীরে ধীরে এটির কলেবর বৃদ্ধি পায়, যোগ হয় মানবিকসহ অন্যান্য বিষয়। বেশ কিছু কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। প্রথম থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত। ই​তিমধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত আছেন।

১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রহমানকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রকল্প পরিচালক এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর হাত ধরেই ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় একই বছর ২৫ নভেম্বর, ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে পেরিয়ে গেছে ২৮ বছর। রয়ে গেছে কতশত স্মৃতি। দেশের একমাত্র রাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে নির্ভরতার প্রতীক এবং জায়গা করে নিয়েছে দেশবাসীর অন্তরে।

চারটি ডিসিপ্লিন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ২৯টি ডিসিপ্লিন। আর এই ২৯ ডিসিপ্লিন নিয়েই আমাদের সুবিশাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, যাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, স্মৃতি-বিস্মৃতি আবর্তিত হয় ১০৬ একরের ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে দুই লেনের রাস্তা, যার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য গাছপালা। রয়েছে গ্রিন লেক, এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে। প্রকৃতির নন্দনকাননের সৌন্দর্যমণ্ডিত এ রূপ যেন চিত্রশিল্পীর রংতুলিতে আঁকা এক নিখুঁত চিত্রকর্ম।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছবি: লেখক
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছবি: লেখক

বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ অদম্য বাংলা, রয়েছে কটকায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্মরণে কটকা স্মৃতিস্তম্ভ এবং বাসচাপায় নিহত হাদীউল ইসলাম স্মরণে হাদী চত্বর। সব মিলিয়ে স্মৃতির চাদরে ঢাকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

সারা দিন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। চলে অবিরাম আড্ডা। সন্ধ্যায় অদ্ভুত এক মায়াবী আবেশ তৈরি হয় ক্যাম্পাসে। রুপালি রাতের আলোয় ‘তপনে’ বসে চায়ের কাপে হাতে নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার, কেউবা হতাশা ঝেড়ে শুরু করতে চায় নতুনভাবে। এখানে প্রতি রাতে তৈরি হওয়া সুখ-দুঃখের গল্প ধারণ করে চায়ের কাপ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাস ছেড়ে যায় অগ্রজেরা, থেকে যায় তাদের স্মৃতি। তাদের নির্দেশনা আর স্মৃতিকে ধারণ করে পথ চলে অনুজেরা। নবীনের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এভাবেই বয়ে যায় সময় থেকে যায় স্মৃতি!

সময়ের বিবর্তনের হাত ধরে এ বছরের ২৫ নভেম্বর এ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করছে ২৯তম বর্ষে। এই দিনে সেশন জট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

*সাইফুল্লাহ আহমাদ, বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়