ইউল্যাবে টাইম সামিটের বার্ষিক স্ক্রিনিং ও শিল্প প্রদর্শনী

এ এফ এম মনিরুজ্জামান শিপুর ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্র্যাফিতি। ছবি: লেখক
এ এফ এম মনিরুজ্জামান শিপুর ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্র্যাফিতি। ছবি: লেখক

রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্রিয়েটিভ টাইম সামিটের বার্ষিক স্ক্রিনিং ও শিল্প প্রদর্শনী। বিশ্ববিদ্যালয়টির মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট এবং ইউল্যাব আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

ক্রিয়েটিভ টাইম সামিট বর্তমান যুগের চিন্তাবিদ, স্বপ্নদর্শী এবং শিল্প ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য একটি বার্ষিক সম্মেলন। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি বর্তমান সময়ের শিল্পী, কর্মী ও চিন্তাবিদদের জন্য একটি অত্যন্ত কর্মদক্ষ এবং উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। ভিন্ন ধারার দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্মেলনটি স্থানীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক পরিবর্তন আনছে। ক্রিয়েটিভ টাইম সামিট একটি বৈশ্বিক সম্মেলন। এটি প্রথম সংঘটিত হয় নিউইয়র্কে। এরপর তারা সুইডেন, ইতালি ও কানাডার সঙ্গে অংশীদারত্বে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এটি বর্তমান সময়ের মুক্তমনা শিল্পী ও সংগঠন, যারা শিল্প ও সংলাপের মাধ্যমে তাদের চিন্তাধারা ফুটিয়ে তুলতে ভালোবাসে, তাদের জন্য অন্যতম উপযুক্ত মাধ্যম।

ক্রিয়েটিভ টাইম সামিটের এবারের আয়োজনের থিম ছিল ‘স্পিকিং ট্রুথ’। অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক ও মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী এ এফ এম মনিরুজ্জামান শিপু ‘স্টেট অব দ্য ওভারঅল গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ’ অবলম্বনে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্রাফিতি শিল্পকর্ম তৈরি করেছিলেন। ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্রাফিতি’ শিল্পী মনিরুজ্জামানের সৃষ্ট একটি বিশেষ ধরনের শিল্পকর্ম। ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি এ ধরনের শিল্পকর্ম করে আসছেন। এই শিল্পকর্ম তৈরির জন্য প্রথমে তিনি একটি নির্ধারিত থিমের ওপরে সাদা-কালো রঙে একটি মিনিয়েচার ছবি আঁকেন। তারপরে তাঁর সহকারী শিল্পীরা প্রজেক্টরের সাহায্যে ওই মিনিয়েচার ছবিটি বড় ক্যানভাসে ট্রেস করে ছবির সাদা অংশগুলো টেপের মাধ্যমে আবৃত করে পুরো ক্যানভাসটি কোনো একটি বিশেষ রঙে রঙিন করে রাস্তায় নিয়ে যান। সেখানে শিল্পী মনিরুজ্জামান ও তাঁর সহকারী শিল্পীরা রাস্তার সাধারণ মানুষদের পূর্বনির্ধারিত থিমের ওপর ভিত্তি করে তাঁদের চিন্তাভাবনাকে আঁকা বা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে আহ্বান জানান। অতঃপর ক্যানভাসের টেপগুলো খুলে নিয়ে শিল্পী মনিরুজ্জামানের আঁকা ভেতরের ছবিটি অনাবৃত করা হয়। আবার সাধারণ মানুষের আঁকা লেখাগুলোও ক্যানভাসে থেকে যায়। এভাবে মূল থিমকে নিয়ে শিল্পী মনিরুজ্জামান নিজের এবং সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনার প্রতিফলনের চিত্রকর্মগুলো মিলেমিশে একটি অপূর্ব শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়। এবারের ক্রিয়েটিভ টাইম সামিট উপলক্ষে শিল্পী এ এফ এম মনিরুজ্জামানের ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্রাফিতির ক্যানভাসটি ইউল্যাব ক্যাম্পাসের সামনে রাখা হয়েছিল। সেখানে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ইউল্যাবের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা ‘স্টেট অব দ্য ওভারঅল গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ’ কিংবা বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রশাসন সম্পর্কে ছবি ও লেখার মধ্য দিয়ে তাঁদের মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সহকারী শিল্পী হিসেবে ইউল্যাব আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের সদস্যরা শিল্পী মনিরুজ্জামানের এই ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্রাফিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।

সম্মেলনে নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া সামিটের আলোচনা সভার ভিডিও ও ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্র্যাফিতি এবং তার ওপর তৈরি করা একটি শর্ট ফিল্ম প্রদর্শন করা হয়েছে। এরপর অনুষ্ঠানটির সহ-আহ্বায়ক ও ইউল্যাবে প্রভাষক ওয়াফি আজিজ সাত্তারে সঙ্গে আলোচনা সভায় বসেন শিল্পী এ এফ এম মনিরুজ্জামান এবং সাংবাদিক, একাডেমিক, প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি এবং ‘এডিটর গিল্ড’-এর সদস্য কাজী রওনাক হোসেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভাটি শেষ হয়। শিল্পকর্ম তৈরিতে অংশগ্রহণকারী ইউল্যাব আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের সদস্যদের সনদ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এবারের আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।

ইউল্যাব এবার ষষ্ঠবারের মতো ক্রিয়েটিভ টাইম সামিটের বার্ষিক স্ক্রিনিং ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ইউল্যাবের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এবারের এই আয়োজন শেষ হয়।  বিজ্ঞপ্তি।