উদ্যোক্তা হওয়া নিয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন

বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক
বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক

দেশে বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী তৈরি হওয়ার পেছনে মূল কারণগুলোর অন্যতম একটি হলো উদ্যোক্তার অভাব। এই অভাবটি মূলত সৃষ্টি হয়েছে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে না পারার ভীতির কারণে। আমরা অনেকেই ভাবি যে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে হয়তো বা প্রচণ্ড রকমের সৃজনশীল হতে হবে কিংবা যুগান্তকারী একটি আইডিয়া থাকতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে সম্পূর্ণরূপে ও রকম নয়। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কাজ করে আরও অনেকগুলো বিষয়। এর মধ্যে একটি হলো কর্মপরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন। তারই উৎকৃষ্ট উদহারণ রেখেছেন বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া সুলতানার কাছে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট গ্রুপ ও স্বল্প পুঁজি নিয়ে নতুন নতুন ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সততার দোকান
মানুষকে সদা সর্বদা কথা ও কাজে সততা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে এবং মিথ্যার অভিশাপ ও গ্লানি থেকে বাঁচতে হবে। যাঁর মধ্যে এ গুণের সমাহার থাকবে, সমাজের সব ধরনের মানুষ তাঁকে ভক্তি–শ্রদ্ধা করবেন। সম্মানের চোখে দেখবেন, পরম মায়ায় জড়িয়ে রাখবেন। সব ধর্মেও বলা হয়েছে সততার গুণে গুণান্বিত হওয়া কথা।

এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘সততার আলো’ ছড়িয়ে দিতে একটি গ্রুপ উদ্যোগ নেয় ‘সততা স্টোর’ চালু করার। ক্যাম্পাসের সেমিনারকক্ষে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শিঙাড়া, সমুচা, কেক বিক্রি শুরু করেন তাঁরা। অন্য দোকানের চেয়ে এর ব্যতিক্রম ছিল কোনো দোকানি ছিলেন না টাকা নেওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শিঙাড়া, সমুচা ও কেক দিয়ে সকালের নাশতা করেন। নাশতা শেষে নির্দিষ্ট বক্সে টাকা রেখে যান তাঁরা।

সততা স্টোরে খাদ্যপণ্য আছে। কিন্তু কেউ নেই। খাওয়া শেষে নির্দিষ্ট বক্সে টাকা রেখে যান সবাই। ছবি: লেখক
সততা স্টোরে খাদ্যপণ্য আছে। কিন্তু কেউ নেই। খাওয়া শেষে নির্দিষ্ট বক্সে টাকা রেখে যান সবাই। ছবি: লেখক

সততা স্টোরের উদ্যোক্তারা বলেন, তাঁরা চিন্তায় ছিলেন কী নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন। পরে এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে এ নামের সন্ধান পান। কিন্তু কী বিক্রি হবে সেখানে, এ রকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মাথায় আসে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সকালের নাশতা না করে আসেন। এ জন্য স্বল্প খরচে তাঁদের নাশতার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ব্যবসায় মুনাফা পাওয়া যাবে। সেই চিন্তা থেকে পণ্য বাছাই করা হয়।
এই গ্রুপের সদস্যরা হলেন সুমাইয়া রিমি, সাঈদ মোল্যা ও মিশুক হাওলাদার।

জ্ঞান বিতান
জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে বেশ কিছু গুণাবলি বা দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে, হোক সেটি ব্যক্তিগত জীবন কিংবা চাকরি জীবন। এমন অনেক সফল ব্যক্তিত্বের উদাহরণ রয়েছে, যাঁরা নিজের চেষ্টায় বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন। ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস, এলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গদের কে না চেনেন! তাঁরা পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে। এখন প্রশ্ন হলো তাঁদের সফলতার মূলমন্ত্র কী ছিল? উত্তর তাঁরা সবাই নিয়মিত বই পড়েন। তাঁদের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে, তা মেটানোর জন্যই পড়া হয় বই।

জ্ঞানের তৃষ্ণাকে লাঘব করতে ৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে বই বিক্রির জন্য ক্যাম্পাসের এক কোণে খুলে বসে জ্ঞান বিতান। নীলক্ষেত থেকে বিভিন্ন ধরনের বই স্বল্পমূল্যে কিনে স্টলে রাখেন তাঁরা। পাঠকেরা তাঁর পছন্দমতো বই কেনেন। দিন শেষে জ্ঞান বিতানের লাভের ঘরে যুক্ত হয় ১৫০ টাকা। এই গ্রুপের সদস্য ছিলেন তামান্না নাজনিন, নিরব দাশ, অঙ্কন বিশ্বাস ও দ্বীন ইসলাম।

জ্ঞান বিতরণে বই কেনেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক
জ্ঞান বিতরণে বই কেনেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক


মেসেঞ্জার
মেসেঞ্জার, বাংলা আভিধানিক অর্থ বার্তাবাহক। প্রথমে নামটা শুনে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। এই গ্রুপের কাজটা ছিল একটু ব্যতিক্রমধর্মী। তারা বার্তাবাহক হয়ে জনে জনে পৌঁছে দিতে চায় বিভিন্ন মেসেজ। কিন্তু এটা দ্বারা মুনাফা অর্জন কীভাবে সম্ভব? তাই তাঁরা বাছাই করেন ফুল বিক্রির। প্রতিটি ফুলের সঙ্গে একটি চমকপ্রদ প্ল্যাকার্ড যুক্ত করে জনে জনে পৌঁছে দিচ্ছেন জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের মেসেজ।

‘সবুজ নগর সবুজ দেশ গড়ব টেকসই বাংলাদেশ’—এ স্লোগানকে মূলমন্ত্র করে ৫০০ টাকার ফুল কিনে বিক্রি শুরু করেন উদ্যোক্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও তাঁদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। দিন শেষে তাঁদের লাভের খাতায় যোগ হয় ২২০ টাকা।

প্রতিটি ফুলের সঙ্গে চমকপ্রদ প্ল্যাকার্ডে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের বার্তা। ছবি: লেখক
প্রতিটি ফুলের সঙ্গে চমকপ্রদ প্ল্যাকার্ডে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের বার্তা। ছবি: লেখক

এই তরুণ উদ্যোক্তরা বলেন, আমরা চেয়েছি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাতে। আমরা স্বপ্ন দেখি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার। জলবায়ুর ক্ষতিকর পদার্থগুলো বর্জন শুরু হোক আমাদের নিজেদের ঘর থেকে। তাই আমাদের এই স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায়ের পাশাপাশি মানুষকে একটি করে বার্তা দিতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন। এ গ্রুপের সদস্য ছিলেন মেসবাহ হাসান, ইসরাত আহমেদ অদিতি, তানজিনা তাসনিম আশা ও তানভীর আহমেদ।