শিশুদের নিয়ে নবান্ন উৎসব

শিশুদের নিয়ে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করলেন আনন্দ মোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ছবি: লেখক
শিশুদের নিয়ে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করলেন আনন্দ মোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ছবি: লেখক

‘আশ্বিন গেল, কার্তিক মাসে পাকিল খেতের ধান,
সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হল্‌দি-কোটার গান।
ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়,
কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কুল নাহি পায়।’

পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’-এ এমন বর্ণনা থাকলেও ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন এখন তেমন একটা লক্ষ করা যায় না। তবে ফসলের মাঠে শিশুদের নিয়ে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করলেন একজন সহযোগী অধ্যাপক। একদিকে কৃষকেরা সোনার ফসল ফলান, অন্যদিকে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে সারি বেঁধে ফসলের মাঠে কলা পাতায় খেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা চড়পাড়া গ্রামের আকবর আলী আহসান সম্প্রতি শিশুদের নিয়ে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করলেন। তিনি আনন্দ মোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

দেশের আদিমতম উৎসবগুলোর একটি ‘নবান্ন উৎসব’। বাংলার মাস কার্তিক পেরিয়ে অগ্রহায়ণ। নীরবে আবির্ভাব ঘটে এই অগ্রহায়ণের। এ মাসেই ফসলের খেতে সোনালি হাসি ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাতাসে উড়ে বেড়ায় নবান্নের ঘ্রাণ আর ফুলের সৌরভ। এর সঙ্গে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় হিমেলের ছোঁয়া। সকাল-সন্ধ্যায় দেখা মেলে হেমন্তের মৃদু কুয়াশার।
বাংলার কৃষক সমাজ সেই প্রাচীনকাল থেকে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও কৃষকেরা নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করতে ভুলে যায়নি আজও। নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করার জন্য মেয়েজামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নতুন চালের পোলাও, পিঠা ও পায়েস রান্না করে ধুমধামে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গ্রামের বধূরা অপেক্ষা করে বাপের বাড়িতে গিয়ে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপনের জন্য। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় গড়ে ওঠা শস্যভিত্তিক এই লোকজ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় বাংলার গ্রামগঞ্জে কৃষকের ঘরে। নবান্ন শব্দটি শুনলেই পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মনটা। অন্ন বা আহার নিয়ে এই উৎসবের জন্ম। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। অগ্রহায়ণে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে ধান-চালে। যার ফলে কৃষিনির্ভর বাংলায় পিঠা-পুলি, চিড়া-মুড়ি নিয়ে উৎসব করার সময় এটাই। এ সময়ে কোনো বাড়িতে দেখা যায় চাল কোটা হচ্ছে পিঠার জন্য, কোনো বাড়িতে তৈরি হচ্ছে পায়েস। বাড়ি বাড়ি নানা রকম পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়।