ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো স্থানান্তরে কি যানজট কমবে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকা শহর যেন অর্ধেক নগরী, অর্ধেক যানজট। ঢাকা শহরে যানজটের তীব্রতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই শহরের প্রতিটি মানুষ এর ভুক্তভোগী। যানজট কমাতে চলছে একের পর এক পরিকল্পনা, কিন্তু আশানুরূপ ফল আমাদের চোখে পড়ার মতো অবস্থায় এখনো পৌঁছাতে পারেনি! এ কারণে সীমাহীন যানজটের যন্ত্রণা নিয়ে চলতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। এ যানজট কমানোর একটি ভালো ও কার্যকর প্রস্তাবনা ছিল ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত বাস টার্মিনালগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ। অর্থাৎ এগুলোকে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও ব্যস্ত স্থান থেকে কিছুটা বাইরের দিকে সরিয়ে নেওয়া।

রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোর অবস্থান একটু লক্ষ করলে দেখা যায়, এর প্রায় সব কটিই ঢাকার প্রাণকেন্দ্র, জনবহুল এবং মূল শহরের মধ্যে। ঢাকার অন্যতম চারটি বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী ও গুলিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা অঞ্চলে, অর্থাৎ দেশের দক্ষিণ অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল এলাকায় গাড়ি চলাচল করে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকে যদি সায়েদাবাদ থেকে স্থানান্তর করে চিটাগং রোডের শনির আখড়া এবং পোস্তাগোলার পরে কোনো জায়গায় দুটি আলাদা বাসস্ট্যান্ড করে দেওয়া সম্ভব হয়, তবে গাড়িগুলোকে আর মূল ঢাকায় ঢুকতে হবে না। ফলে, যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তা এবং আশপাশের রাস্তায় এই টার্মিনালটির কারণে সৃষ্ট যানজটের তীব্রতা হ্রাস পাবে অনেকাংশে।

গাবতলীতে অবস্থিত গাবতলী বাস টার্মিনালও একটি জনাকীর্ণ এবং আন্তজেলা যাত্রী পরিবহন বাসে পরিপূর্ণ একটি টার্মিনাল। রংপুর, পাবনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, অর্থাৎ দেশের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতকারী পরিবহনগুলোর বাস টার্মিনাল এটি। সুতরাং গাবতলী বাস টার্মিনালকে যদি এখান থেকে স্থানান্তর করে আমিন বাজারের কাছে নেওয়া যেতে পারে, তবে বাসগুলোকে গাবতলী-শ্যামলী এলাকায় ঢুকতে হবে না। ফলে মিরপুর, গাবতলীসহ আশপাশের রুটে যানজট বহুলাংশে হ্রাস পাবে।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত একটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল হচ্ছে মহাখালী টার্মিনাল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা অঞ্চলে বাস যাতায়াত করে। এ বাস টার্মিনালকে যদি এখান থেকে স্থানান্তর করে বিশ্বরোড বাস স্ট্যান্ডের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে মহাখালী, বনানী রুটসহ সংযোগকারী অনেক রাস্তায় যানজট কমে আসবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও সম্প্রতি এ টার্মিনাল নিয়ে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালটি থেকে প্রায় দেশের সব জায়গায় গাড়ি যাতায়াত করে। তাই বলতে গেলে এটি সারা ঢাকার শহরেই যানজট সৃষ্টিতে কমবেশি ভূমিকা রাখে। এ কারণে টার্মিনালটির বিকেন্দ্রীকরণ বেশি জরুরি। এটি ঢাকার মূল অঞ্চল থেকে সরিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ পেরিয়ে কেরানীগঞ্জের কোনো অঞ্চলে একটি জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে এবং দেশের যেসব অঞ্চলে এখান থেকে বাসগুলো চলাচল করে, তার জন্য মূল ঢাকার বাইরে ভিন্ন ভিন্ন ছোট বাসস্ট্যান্ড নির্ধারণ করে দিতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে গুলিস্থান, পল্টন, শাহবাগসহ আশপাশের দীর্ঘ যানজট বেশ কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়।

সুতরাং এসব বাস টার্মিনাল বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারলে আন্তজেলা বাস সার্ভিসগুলো ঢাকার মধ্যে ঢুকতে হবে না। ফলে, এসব টার্মিনালের বাসের কারণে সৃষ্ট যানজট কমে আসবে অনেকটাই। ঢাকার ভেতরে বাস সার্ভিসের গতি বেড়ে যাবে, নতুন বাস টার্মিনালগুলোয় যাত্রীদের পৌঁছাতেও বেগ পেতে হবে না। তবে এ কাজ করতে গেলে বাস মালিক সমিতি বা শ্রমিকশ্রেণি থেকে বিরোধিতা আসতে পারে। আর এটা স্বাভাবিকও। তবে তাদের আশ্বস্ত করতে হবে, এটি কোনো উচ্ছেদ অভিযান নয়, বরং যানজট কমাতে বাস টার্মিনালগুলো স্থানান্তরমাত্র। বাস টার্মিনালগুলো রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে ভেবে দেখার এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।

*সাকিব জামাল: ব্যাংকার