লাল-সবুজের পতাকা বিক্রেতাদের গল্প

সিরাজগঞ্জ থেকে লাল-সবুজ পতাকা বিক্রি করতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এসেছেন শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন। ছবি: লেখক
সিরাজগঞ্জ থেকে লাল-সবুজ পতাকা বিক্রি করতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এসেছেন শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন। ছবি: লেখক

রাত পোহালেই মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। তার আগে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে ঝরেছে ৩০ লাখ প্রাণ। আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সেই মহান শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করছি। সারা দেশে নানা আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপিত হবে বিজয় দিবস।

এই মহান বিজয়ের মাস এলেই দিনাজপুরের ফুলবাড়ী শহরের পথে পথে দেখা মেলে লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করা কয়েকজন তরুণ ও যুবকের। তাঁরা পৌর বাজার, নিমতলা মোড়, ননীগোপাল মোড়, সুজাপুর, বাসস্ট্যান্ড, টিটির মোড়, ঢাকা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় হাতে ও কাঁধে বাঁশে বাঁধা বাংলাদেশের নানা আকারের পতাকা ফেরি করে বিক্রি করেন। আকারে ছোট, বড়, মাঝারি, কিন্তু রং দুটোই—লাল আর সবুজ।

প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুলবাড়ীতে ছুটে আসেন লাল-সবুজ পতাকা বিক্রেতারা। তাঁরা বিজয় দিবসের বার্তা বহন করে আনেন ফুলবাড়ীবাসীর কাছে। তাঁরা শুধু পতাকা বিক্রেতাই নন, দেশপ্রেমিকও। অনেকে শখের বশে লাল-সবুজ পতাকা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।

সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন লাল-সবুজ পতাকা বিক্রেতা ও শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন। ২২ বছর বয়সী মো. আল-আমিন বলেন, তিনি পড়াশোনা করেন। পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে বিজয়ের মাস এলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাল-সবুজ পতাকা বিক্রি করেন।

তবে শুধু অভাব-অনটনই নয়, পতাকা বিক্রি করা মো. আল-আমিনের নেশাও। তিনি দেশের সবার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রতি বিজয়ের মাসে বাঁশে বিভিন্ন আকারের লাল-সবুজ পতাকা বেঁধে কাঁধে নিয়ে ছুটে বেড়ান জেলা-উপজেলায়। তিনি বলেন, বড় পতাকার চেয়ে ছোট পতাকার চাহিদা খুব বেশি। পতাকা ১০ টাকা থেকে শুরু করে মাপানুযায়ী ৩০, ৫০, ৮০, ১০০, ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করা স্থানীয় শাহিন আলম (২৯) বলেন, ‘সারা বছর অন্যের দোকানে কাজ করে জীবন চালাই। কিন্তু বিজয় মাসে পতাকা বিক্রি করি। এই মাসে লাল-সবুজ পতাকার বেশ চাহিদা থাকে।’ তিনি আরও বলেন, বিজয়ের মাসে লাল–সবুজের পতাকা করে বিক্রি করতে তাঁর গর্ববোধ হয়।

পতাকা ক্রেতা হাবিবা সুলতানা (৩৬), হামিদুল আলম (৫৯), নিমাই চন্দ্র (৪২) বলেন, তাঁরা বাসার ছোট শিশুদের জন্য বিজয়ের মাসে পতাকা কিনেছেন। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তাই তাদের মধ্যে বিজয়ের অনুভূতি সম্পর্কে জানতেই এ পতাকা কিনেছেন তাঁরা।