চা-কন্যাদের দেখতে শ্রীমঙ্গলে কুসান পরিবার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব নাঙ্গলকোটের শিক্ষার্থীরা সৌন্দর্যের লীলাভূমি চা–বাগান আর ছোটবড় পাহাড়পর্বতের নগরী শ্রীমঙ্গলে। ছবি: লেখক
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব নাঙ্গলকোটের শিক্ষার্থীরা সৌন্দর্যের লীলাভূমি চা–বাগান আর ছোটবড় পাহাড়পর্বতের নগরী শ্রীমঙ্গলে। ছবি: লেখক

বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে শীতকালীন অবকাশ। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন প্যারা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাই অজানাকে জানতে ও আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়ে নিজেদের ফুরফুরে করে নিতে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব নাঙ্গলকোটের (কুসান) শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ফলে সংগঠনটি আয়োজন করল বার্ষিক শিক্ষাসফর।

ভেন্যু নির্ধারণ হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চা–বাগান আর ছোটবড় পাহাড়পর্বতের নগরী শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলীয় পর্যটনবহুল ভূপ্রকৃতির কোল ঘেঁষে মৌলভীবাজারে অবস্থিত। নির্ধারিত দিনে ২০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে আমরা সবাই জড়ো হলাম কুমিল্লা স্টেশনে। রাত ১২টায় উদয়ন এক্সপ্রেস আসার কথা থাকলেও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণ ট্রেন পৌঁছায় রাত তিনটায়। কনকনে শীতের রাতে খানিকটা কষ্ট হলেও সকালে শ্রীমঙ্গলের শ্রী–চোখে অবলোকন করামাত্রই সবার মধ্যে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হলো। সকালের নাশতা করামাত্রই চান্দের গাড়িতে করে আমরা বের হলাম আনারসবাগানের উদ্দেশে। পথিমধ্যে দিগন্তজুড়ে সবুজের গালিচা আর নয়নাভিরাম দৃশ্য যেন মুহূর্তেই দূর করে দিল সবার ভ্রমণক্লান্তি। সমতলভূমি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে দীর্ঘ সারিজুড়ে আনারসের বাগান মুগ্ধ করে সবাইকে।

এরপর আমরা রওনা হলাম শ্রীমঙ্গলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন পাহাড়-টিলাঘেরা সবুজ চা–বাগানের উদ্দেশে। সবুজগালিচার মতো বিস্তৃত মনমাতানো সারিবাঁধা ছোট ছোট চা–গাছের সমাহার অভিভূত করে সবাইকে। কৃষ্ণবর্ণের চা–কন্যাদের পিঠে বিশেষ ধরনের ঝুড়ি বহন করে চা সংগ্রহের ব্যস্ত কর্মতৎপরতার দৃশ্যগুলো অন্য রকম অনুভূতি যোগ করেছে।

বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে কুসানের সদস্যরা। ছবি: লেখক
বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে কুসানের সদস্যরা। ছবি: লেখক

এরপর আমরা রওনা হলাম রাবারবাগানের উদ্দেশে। দীর্ঘ লাইনজুড়ে সুউচ্চ রাবারগাছের চিত্র চোখ জুড়ে যায় সবার। পরপরই আমরা রওনা হলাম মাধবপুর লেকের উদ্দেশে। প্রায় ৫০ একরের লেকটির স্বচ্ছ জলরাশির বুকে ফুটন্ত নীল পদ্ম, দুপাশের সুউচ্চ টিলার ওপর ছোট ছোট চা–গাছের সবুজ সমারোহ বিমোহিত করে উপস্থিত সবাইকে।

অবশেষে আমরা চলে গেলাম লাউয়াছড়া উদ্যানে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের উঁচু–নিচু ছোট ছোট টিলায় বেড়ে ওঠা অসংখ্য বৃক্ষে আচ্ছাদিত পুরো উদ্যানটি। নানান বিরল প্রজাতিসহ প্রায় ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষরাজির উদ্যানটিতে। আমরা আবিষ্কার করলাম নানান না দেখা প্রজাতির বৃক্ষরাজি।

সারা দিনের বিরামহীন চমৎকার ট্যুর শেষে রাত ১২টায় আমরা ফিরে এলাম কুমিল্লায়।

শ্রীমঙ্গল ট্যুরের সার্বিক অভিজ্ঞতা থেকে কুসানের সদস্য অন্তর, মাহিন ও হৃদয় বলেন, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে ট্যুরে সবাই একসঙ্গে গান, হইহুল্লোড়ে ব্যস্ত ছিলাম। ট্রেন জার্নি, চাঁদের গাড়ি এবং বাস এক ট্যুরে ভিন্ন ভিন্ন যানবাহনের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে কুসানের ট্যুরটি স্মৃতির পাতায় যুক্ত করেছে এক নতুন মাত্রা।

তানভীর আহমেদ রাসেল: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুবি