সার্চ করলেই লাগানো হবে গাছ

ইকোশিয়ায় ৪৫ বার কোনো কিছু সার্চ করলে আপনার নামে রোপণ করা হবে একটি গাছ।
ইকোশিয়ায় ৪৫ বার কোনো কিছু সার্চ করলে আপনার নামে রোপণ করা হবে একটি গাছ।

প্রতিনিয়ত আমরা ইন্টারনেটে অনেক কিছুই খুঁজি। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে ব্যয় করেন। এর নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা হরহামেশাই শোনা যায়। কিন্তু এখানেও অনেক ভালো কাজ করেন। তেমনই একটি উদ্যোগ ‘ইকোশিয়া’ (www.ecosia.org)। ইকোশিয়ার মাধ্যমে বৃক্ষরোপণের মহোৎসবে অংশ নিতে পারবেন যেকেউ।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়েই। কিন্তু কমছে গাছপালা। উজাড় হচ্ছে বন। আমাজনের অগ্নিকাণ্ডের খুব বেশি দিন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষাধিক গাছ। ফায়দার লোভে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে একের পর এক যখন বিলীন হয়ে পড়ছে বেঁচে থাকার প্রধান উৎস, তখন স্বস্তির সুবাতাস নিয়ে এগিয়ে এসেছে একদল লোক ও তাদের উদ্যোগ। এই উদ্যোগের নাম ‘ইকোশিয়া’।

ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র জার্মান তরুণ ক্রিশ্চিয়াল ক্রোল পড়াশোনা শেষে কী করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত। চিন্তা করলেন বিশ্বভ্রমণের। ভ্রমণের চিন্তায় মশগুল ক্রোলের সেই ভ্রমণ নিছক আনন্দ–বিলাসের উদ্দেশ্যে নয়, ছিল ব্যবসায়িক ধ্যানধারণায় ভরপুর। অভিনব সব আইডিয়া সংগ্রহের জন্যই তাঁর ঘরছাড়া। ঘুরতে ঘুরতেই উপলব্ধি করেছেন, পৃথিবী প্রযুক্তির দাসত্ব গ্রহণ করছে দ্রুতগতিতেই। আর এর চেয়েও দ্রুততায় যেন কমছে গাছপালা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে এ সমস্যা দূর করা যায়, সেটি ভাবতে ভাবতেই মাথায় আসে অভিনব এক ভাবনা। ২০০৯ সালের ৭ ডিসেম্বর কোপেনহেগেনে জলবায়ু সম্মেলনে পথচলা শুরু হয় নতুন এক সার্চ ইঞ্জিন ‘ইকোশিয়া’র। ক্রোলের এই উদ্যোগ পেয়েছে পৃথিবীব্যাপী পরিচিতি।

শুরুর দিকে কয়েক বছর বিভিন্ন সভা, সেমিনারে গাছের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলে গেছে টিম ইকোশিয়া। শুরু সভা-সেমিনারের জায়গায় গাছ উপহার দিয়ে। ধীরে ধীরে সবকিছু গুছিয়ে নিতে থাকেন ক্রোল। এগিয়ে আসে ইয়াহু, বিং। শুরু হয় এক চ্যালেঞ্জিং যাত্রা! আরেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য টিম শুম্যাচারকে নিয়ে ক্রিশ্চিয়াল ক্রোল নেমে পড়েন বনায়নে। বড় পরিসরে গাছ লাগানো হয় ব্রাজিলের জুরুয়েনা জাতীয় উদ্যান ও আমাজনের একটা ছোট্ট অংশে। তারপর একে একে পেরু, কলম্বিয়া, স্পেন, হাইতি, উগান্ডা, বুরকিনা ফাসো, মরক্কো ও ইন্দোনেশিয়ায়। আকাশ ফোঁড়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়তে থাকে রোপণ করা চারাগাছগুলো। ইকোশিয়ার বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ মিলিয়ন, কয়েক বছর আগেও যা ছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন।

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ! লাভের ৮০ শতাংশ বনায়ন ও চ্যারিটির কাজে ব্যয় করে যেন প্রবাদবাক্যের সার্থকতা প্রমাণ করে যাচ্ছে ইকোশিয়া। প্রচার কেবল বৃক্ষরোপণের জন্যই করছে, নিজেদের জন্য নয়। কারও অধীনস্থ হওয়ার ইচ্ছা নেই তাদের। তাই তো গুগলের সার্চ ইঞ্জিন নিলামে নিজেদের নাম ওঠায়নি তারা।

চাইলে যেকেউ হতে পারেন ইকোশিয়ার মহা বৃক্ষরোপণ উৎসবের অংশ! এ জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশনটি নামিয়ে লগইন করুন। প্রতিনিয়ত কত–কীই তো খোঁজ করি আমরা। সেই হিসেবে ৪৫ সংখ্যাটি আমাদের কাছে অতি তুচ্ছ! ইকোশিয়ায় মাত্র ৪৫ বার কোনো কিছু সার্চ করার পর আপনার নামে রোপণ হয়ে যাবে একটি গাছ! এরপর যতই সার্চ করবেন, বাড়তে থাকবে সংখ্যা।

প্রযুক্তির উৎকর্ষে আমরা আধুনিক হচ্ছি, মিলছে ভোগবিলাসের চূড়ান্ত সুবিধা। তবে সবকিছুই বৃথা, যদি মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাস না নিতে পারি! ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে গাছ লাগানো হয়ে ওঠে না আমাদের। ইকোশিয়া সেই সুযোগই করে দিচ্ছে যেন! আপনার কাজ আপনি করছেন, করতে করতেই করে ফেলছেন অপূর্ণ কাজটাও বৃক্ষরোপণ! সবুজ পৃথিবীর সাক্ষী হতে হাতের মুঠোয় থাকা প্রযুক্তিকে নিয়ে ক্রিশ্চিয়ান ক্রোলের হাত ধরে যে বিপ্লবের শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে, তাতে আজ গাছের সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন, অ্যান্ড স্টিল কাউন্টিং! প্রতি ৮ সেকেন্ডে একটি করে গাছ লাগাচ্ছে ইকোশিয়ার মাধ্যমে।

*জহিরুল কাইউম ফিরোজ, Feroz Quayum <[email protected]