থিয়েটারে চাই পেশাদারির ছোঁয়া

থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রটা দেশে তৈরি হয়নি। ছবি: সংগৃহীত
থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রটা দেশে তৈরি হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

পেশা থিয়েটারকর্মী—এ নামে পরিচয় দেওয়া লোকের সংখ্যা এ দেশে খুবই কম। কেনই–বা দেবে? কারণ, আপনি খোঁজ করলেই দেখতে পাবেন আমাদের বেশির ভাগ থিয়েটারকর্মী রাতদিন পরিশ্রম করে তাঁর মেধা ও শ্রম দিয়ে একটা নাট্য প্রযোজনা তৈরি করে কিন্তু সে পরিবেশনা ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবেশন করার পর থিয়েটারকর্মীর ঝুলিতে হাততালি, প্রশংসা ছাড়া আর কিছু জোটে কি?

হ্যাঁ, আপনি মুখে বলতেই পারেন থিয়েটারটা আমি ভালোবেসেই করি। আমি নিজেও ভালোবেসেই চর্চা করতাম এই শিল্পের, কিন্তু দিনশেষে যখন দেখি এটিকে সর্বোতরূপে আমার পেশা হিসেবে বলতে পারছি না, তখন হয়তো–বা খুব হতাশা জাগে। কারণ, নিজ পেশা হিসেবে আমার লিখতে খুব মন চায় যে আমি একজন থিয়েটারকর্মী।

একজন তরুণ থিয়েটারকর্মী একটা পর্যায়ে যখন দেখেন, থিয়েটারকর্মী হিসেবে তাঁর জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয়, তখন ধীরে ধীরে ছেড়ে দেন এই শিল্পের চর্চা। এ ক্ষেত্রে আমি কিছুটা দোষারোপ করব আমাদের থিয়েটারকর্মীদেরই। কারণ, আমরা থিয়েটারকর্মীরা নিজের মেধা বা শ্রমের মূল্যায়ন হিসেবে কী পাচ্ছি, এটা কখনো চিন্তাই করি না। কিন্তু এই যথাযথ মূল্যায়ন অবশ্যই আমাদের দাবি করা উচিত। কারণ, আমাদের মেধা ও শ্রম এতটা ফেলনা নয়। লক্ষ করলে দেখা যাবে, দেশে প্রতিবছর শত শত শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা/নাট্যতত্ত্ব/থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্ট্যাডিজ নামক বিভাগে বহু স্বপ্নের বাস্তবায়ন করবেন বলে মেধার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু কতজন তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল বলতে পারবেন? থিয়েটার বিভাগে পড়াশোনা করে পরে অন্য পেশায় যুক্ত হন, কেন বলতে পারেন? কারণ, থিয়েটার করে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রটা সেভাবে এখনো তৈরি হয়নি। একজন থিয়েটারকর্মী এবং একজন থিয়েটার বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সেই ভরসার জায়গাটা চাই। এটা আমাদের থিয়েটারকর্মীদের প্রাণের দাবি যে আমি থিয়েটারটাকে ভালোবেসে করব এবং পেশা হিসেবে নির্দ্ধিধায় বলব, আমি একজন থিয়েটারকর্মী। এ জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

‘সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার’ পদ প্রবর্তন করা উচিত। ছবি: সংগৃহীত
‘সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার’ পদ প্রবর্তন করা উচিত। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক, সংগীত, নৃত্য, চারুকলা, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। শিল্পকলার এসব শাখা থেকে প্রতিবছর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বের হয়ে আসছেন। জনপ্রশাসনের অধীনে ‘সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার’ পদ প্রবর্তনের মাধ্যমে ওই বিষয়গুলো থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ করা গেলে তাঁরা অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার আলোকে বাঙালি সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হবেন বলে বিশ্বাস। এ ছাড়া যদি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নাট্যশিক্ষা চালু করা যায়, তাহলে এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা অনেক শিক্ষার্থী ও থিয়েটারকর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে আর সেই শিক্ষার্থী থিয়েটার চর্চা করবেন আরও ভালোবেসে। কারণ, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। তো এটা মাথায় রাখা উচিত পেটে ক্ষুধা রেখে শিল্পচর্চা সম্ভব নয়।

* লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী