গোলাপগ্রামে একবেলা

মন কাড়ে গোলাপের সৌন্দর্য।
মন কাড়ে গোলাপের সৌন্দর্য।

গ্রামের আঁকাবাঁকা সরু পথ। সেই পথ ঘেঁষে অসংখ্য গোলাপবাগান। যত দূর চোখ যায় শুধু টকটকে লাল গোলাপ। সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সম্প্রতি ঘুরে এলাম গোলাপগ্রামখ্যাত ঢাকার সাভারের সাদুল্লাপুর। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদের তীরে গ্রামটি অবস্থান। এখানে আছে গোলাপের মনমাতানো সুগন্ধ ও চোখজোড়া দৃশ্য।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬ কিলোমিটারের পথ গোলাপগ্রাম। বাইশমাইল থেকে সাভার বাসস্ট্যান্ড নেমে রিকশা বা অটোরিকশায় সহজেই গোলাপগ্রামে যাওয়া যায়। গোলাপগ্রামের আগেই ছোট একটা বাজার। তাই গোলাপের রাজ্যে হারানোর আগে দুপুরের খাবারটা হাতের কাছে হোটেলে খেয়ে নিলাম আমরা।

ভরপেট খাবার ও এক কাপ চা শেষে আমাদের যাত্রা শুরু হয় গোলাপগ্রামের দিকে। আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা ধরে হাঁটলে দেখা যায় রাস্তার দুপাশ পুরোটাই গোলাপবাগানে ঘেরা। কিছুটা কাছে গেলে মনে হয় লাল টকটকে গোলাপগুলো যেন দুলনি খেলায় মশগুল।

যত দূর চোখ যায় শুধু গোলাপ আর গোলাপ।
যত দূর চোখ যায় শুধু গোলাপ আর গোলাপ।

এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পেশা গোলাপ চাষ, যা গ্রামজুড়ে সারা বছর হয়। গোটা গ্রামে বাহারি রঙের গোলাপ ফুল দেখা যায়। এখানে গোলাপ ছাড়াও জারভারা, গ্লাডিওলাস ফুল চাষ হয়। ঢাকার বেশির ভাগ ফুলের চাহিদা মেটানো হয় এখান থেকেই।

বাগানে কাজ করছিলেন কয়েকজন গোলাপচাষি। ফুলের মালা গাঁথতে থাকা এক চাষি বলেন, ‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি গোলাপের মৌসুম। শীতের সময় বাগানগুলো অনেক সুন্দর লাগে। প্রতিটি ফুল দুই থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। বাগানগুলোয় সকালে ও বিকেলে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে।’

স্থানীয় এক গোলাপচাষি বলেন, একেকটি গোলাপগাছের বয়স প্রায় ২০ বছর। ৫০ বছর ধরে গোলাপ চাষ হয় এই গ্রামে। গোলাপ গ্রামে ঘুরতে এলেও ফুল কেনার সুযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের।

বন্ধুরা মিলে গোলাপ গ্রামে।
বন্ধুরা মিলে গোলাপ গ্রামে।

গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে। বিকেল থেকেই শুরু হয় ফুলচাষিদের ফুল তোলা। গোছা বেঁধে ফুল প্রস্তুত করা হয় বিক্রির জন্য।

সাদুল্লাপুর ও এর আশপাশের গ্রামে আছে তিনটি ফুলবাগান। শ্যামপুর নামক স্থানে প্রতিদিনই বসে গোলাপের হাট। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। রাতভর চলে জমজমাট বেচাকেনা। ওই গ্রাম থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে গোলাপের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ আমাদের তাড়া ভীষণ করছিল। আর মনে হলো স্মৃতিতে বন্দী হয়ে থাকল ভালো লাগা ও চমৎকার কিছু মুহূর্ত।

* মো. রাকিবুল হাসান, শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা।