বুড়িতিস্তা ঘিরে গড়ে উঠতে পারে বিনোদন কেন্দ্র

সংসার হওয়ায় বুড়িতিস্তার পাড় ঘিরে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের বড় বিনোদন কেন্দ্র।
সংসার হওয়ায় বুড়িতিস্তার পাড় ঘিরে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের বড় বিনোদন কেন্দ্র।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুড়িতিস্তা নদীর পাড় ঘিরে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের বড় বিনোদন কেন্দ্র। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বুড়িতিস্তা নদী পুনঃখননের পর দুই পাড় সংস্কার করে ফলদ বৃক্ষ রোপণ শুরু করায় এমন সম্ভাবনা দেখছেন বিনোদনপ্রেমী মানুষেরা।

সম্প্রতি নদীর দুই পাড় সংস্কার করে গাছ লাগানোর পরেই যেন এর সৌন্দর্য চোখে পড়ছে মানুষের। এমন সম্ভাবনায় স্থানীয় লোকজনের অভিমত, বুড়িতিস্তা নদীর দুই পাড়ে বসার জায়গাসহ সৌন্দর্যবর্ধন গাছ লাগানো হলে তা হয়ে উঠতে পারে আরও আকর্ষণীয়।

নদীর দুপাশে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। রক্ষা হবে পরিবেশের ভারসাম্য। সব মিলিয়ে উলিপুরের মানুষের কাছে বিনাদনের এ উজ্জ্বল সম্ভাবনা যেন ক্রমেই হাতছানি দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল, নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি বুড়িতিস্তা নদী দখলমুক্তসহ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ বুড়িতিস্তা নদী রক্ষায় মানববন্ধন, ২১ মার্চ বাইসাইকেল র‌্যালি ও ১১ এপ্রিল বুড়িতিস্তা নদী পাড়ে হাজারো মানুষ প্রতীকী পানির ঢল কর্মসূচি পালনসহ সভা-সমাবেশ করেন। উলিপুরের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িতিস্তা নদী খননকাজ শুরু করে পাউবো। চলতি বছর নদীর দুই পাড়ের মাটি সৃজন করে ফলদ বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন শুরু।

সম্প্রতি বুড়িতিস্তা নদীর দলদলিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী নদী পাড় দিয়ে হাঁটছেন। এ সময় মকবুল নামের এক পথচারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, দায়সারাভাবে পাড় সংস্কার করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানোয় এর সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে। সুমনা নামের পথচারী বলেন, পরিকল্পিতভাবে পাড় সংস্কার করে বসার জায়গাসহ সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগালে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বুড়িতিস্তা নদীপাড় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

একসময় বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা চলত বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ শিকার করে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় তিস্তা নদীর ভাঙনে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে গোড়াইপিয়ার গ্রামের স্লুইসগেটটি নদী গর্ভে চলে গেলে পাউবো অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তার উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করে বন্ধ করে দেয়। ফলে বুড়িতিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে ভরাট হতে থাকে। এ কারণে বুড়িতিস্তা পাড়ের শত শত মানুষ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। আর এ সুযোগে কিছু দখলদার ভূমিদস্যু বুড়িতিস্তা দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেন। ধীরে ধীরে বুড়িতিস্তা ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

কুড়িগ্রাম পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, উলিপুরের অর্জুন থেকে চিলমারীর রানীগঞ্জ পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার এলাকায় পাবনার বেড়া উপজেলার তালিম নগরের মতো পাম্পহাউস নির্মাণ করা হলে শুকনো মৌসুমেও পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ফলে বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, বুড়িতিস্তা নদী পাড় সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বসার জায়গা তৈরির পরিকল্পনায় কাজ করছি। তবে পৌর এলাকার প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।