জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেলে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফে নূর

জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেলে দেশভ্রমণ করেন নূর মোহাম্মদ। তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরুর আগে নূর মোহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত
জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেলে দেশভ্রমণ করেন নূর মোহাম্মদ। তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরুর আগে নূর মোহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের ছেলে নূর মোহাম্মদ। চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলেটি শৈশব থেকেই দুরন্ত। দিনভর ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকা ছেলেটি হঠাৎ সাইকেল চালানো শুরু করেন। সাইকেল চালাতে চালাতে মাথায় ভূত চাপল, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ যাবেন। যে বলা সেই কাজ।

নূর মোহাম্মদ ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তিনি সাইকেল চালিয়ে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফে যাওয়ার উদ্দেশে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বেরিয়ে পড়েন। শুধু সাইকেল চালানোর জন্য নয়, সঙ্গে এক মহৎ উদ্দেশ্য। ‘সাইক্লিং ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’, অর্থাৎ জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে দেশব্যাপী সাইকেল চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

১৮ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় ৯ দিনে (১ দিন বিরতি) সাইকেল চালিয়ে উত্তরের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে টেকনাফ জিরো পয়েন্টে পৌঁছান। পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ। জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেলে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছাও আছে নূর মোহাম্মদের।

নূর মোহাম্মদের যাত্রা
প্রথম দিনে তেঁতুলিয়া থেকে দিনাজপুর পৌঁছান নূর মোহাম্মদ। এ সময় ১৩০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালান। সকাল সাড়ে ৬টায় রওনা হয়ে ১১টার দিকে পঞ্চগড়, দুপুর সাড়ে ১২টায় বোদা উপজেলায় হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছান নূর মোহাম্মদ। ঠাকুরগাঁওয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতে পৌঁছান দিনাজপুর।

দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুর থেকে বগুড়া
১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন এ দিনে। সকাল ৭টায় রওনা দিয়ে ১০টার দিক ফুলবাড়ী পৌঁছান, দুপুর ১২টার দিক ঘোড়ারঘাট উপজেলা এবং রাত ৯টার দিক পৌঁছে যান বগুড়ায়।

তৃতীয় দিন বগুড়া থেকে টাঙ্গাইল
১২০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালান নূর মোহাম্মদ। বেলা ১১টায় শুরু করে ১টার দিক শেরপুর পৌঁছান, ৩টার দিক সিরাজগঞ্জ, সেখানের এক সাইক্লিস্ট বড় ভাইয়ের সঙ্গে ৩০ মিনিট সময় কাটিয়ে যমুনা সেতুতে চলে যান নূর। বিকেল সাড়ে ৪টায় সেখানে পৌঁছান। ১ ঘণ্টা পর ট্রাকে করে সাইকেলসহ সেতু পার হয়ে আবার একটানা সাইকেল চালান নূর মোহাম্মদ। রাতে ৯টার দিক টাঙ্গাইল পৌঁছান।

চতুর্থ দিন টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা প্রায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালান। সকাল ৮টায় শুরু চালানো শুরু করে মির্জাপুরে সাড়ে ১০টায়, সেখান থেকে এক সাইক্লিস্টের সঙ্গে গাজীপুর পৌঁছাতে বেলা প্রায় ৩টা বেজে যায় নূর মোহাম্মদের। সেখানে বিশ্রাম শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল ৫টা গড়িয়ে যায়।

জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেলে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছে আছে নূর মোহাম্মদের। ছবি: সংগৃহীত
জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেলে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছে আছে নূর মোহাম্মদের। ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চম দিন
এদিন শুধু বিশ্রাম নেন নূর মোহাম্মদ। আর আনুষঙ্গিক কিছু কাজও করেন তিনি।

ষষ্ঠ দিন ঢাকা থেকে কুমিল্লা
ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে ১২০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালান। সকাল ৭টায় রওনা হয়ে মেঘনা সেতু, সোনারগাঁ, দাউদকান্দি, গোবিন্দপুর পার করে কুমিল্লা পৌঁছাতে বেলা ৩টা বেজে যায় নূর মোহাম্মদের।

সপ্তম দিন কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম
কুমিল্লা থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় রওনা দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালান নূর মোহাম্মদ। এর মধ্য চৌদ্দগ্রামে বিশ্রাম নেন। ফেনী, সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছান বিকেল ৪টার পরে।

অষ্টম দিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার
নূর মোহাম্মদ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে রওনা হন এদিন। এদিন সকাল ৮টায় রওনা হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্য চাকার পাংচার হয়ে যায়। এরপর ঘণ্টাখানেকের মধ্য সাইকেল সারিয়ে রাইড শুরু করেন নূর। চন্দনাইশ, লোহাগড়া, চকরিয়া উপজেলা পার হতে বিকেল সাড়ে ৪টা বেজে যায়। এরপর বিশ্রাম শেষে কক্সবাজারে পৌঁছাতে রাত ১০টা বেজে যায় নূর মোহাম্মদের।

নবম দিন টেকনাফে
কক্সবাজার থেকে টেকনাফে উদ্দেশে সকাল ৯টায় সাইকেল রাইড শুরু করেন নূর মোহাম্মদ। এরপর মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলা শুরু করে একে একে হিমছড়ি, ইনানী, শমলাপুর পেরিয়ে টেকনাফে পৌঁছায় নূর মোহাম্মদ।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের ফল খুবই মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এখনই আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্লাস্টিক, পলিথিনের ব্যবহার বর্জন করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং শিল্পায়ন দরকার। আর সর্বোপরি নিয়মিত গাছ লাগাতে হবে। ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে। আমি সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশ পাড়ি দিতে পারলে সাধারণ মানুষও ইঞ্জিনচালিত যানবাহন ত্যাগ করে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।’

ফরিদপুর জেলা পরিষদ, ফরিদপুর জেলা প্রশাসন এবং অনুপ্রয়াস সংগঠনকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান নূর মোহাম্মদ।

নূর মোহাম্মদ ফরিদপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনুপ্রয়াসের একজন সদস্য। জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের দাবিতে সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার ইচ্ছায় আছে নূর মোহাম্মদের।