জাবিতে শহীদ মিনারে জুতা পায়ে বিচরণ, দেখার কেউ নেই

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অবাধে জুতা পায়ে বিচরণ সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: লেখক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অবাধে জুতা পায়ে বিচরণ সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: লেখক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান গেট (ডেইরি গেট) সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে অবাধে জুতা পায়ে বিচরণ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো নজরদারি লক্ষ করা যায়নি।

আজ রোববার দুপুরে এই শহীদ মিনারে সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রীরা জুতো পায়ে শহীদ মিনারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মূলত, বহিরাগতদের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্র জানান, এ ঘটনা সবার কাছেই লজ্জাজনক। এভাবে অযত্ন–অবহেলায় পড়ে থাকবে, সেটা কারও কাছে কাম্য নয়।

আরেক শিক্ষার্থী সায়েম হোসেন (২৪) বলেন, ‘জুতো পায়ে শহীদ মিনারে ওঠার ব্যাপারটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগী বীর শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

জাবির শহীদ মিনারে অবাধে জুতা পায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: লেখক
জাবির শহীদ মিনারে অবাধে জুতা পায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: লেখক

বিশ্ববিদ্যালয়ের আসা সচেতন মহলের কেউ কেউ দাবি জানিয়েছেন যাতে এ জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেন এ শহীদ বেদিটির কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তাঁরা আরও জানান, খুব খারাপ লাগে যখন কেউ জুতো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেন। তবে এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, জাবির শহীদ মিনারের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নেই ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আলবেরুনি হলের (তৎকালীন প্রশাসনিক ভবন ও হল) সামনে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য মফিজউদ্দিন আহমদ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’। আলবেরুনি হলের সামনে এখনো রয়েছে পুরোনো শহীদ মিনারটি। নামফলকে লেখা রয়েছে ‘১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগী বীর শহীদদের স্মৃতির স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’। পরে ১৯৮৫ সালে তৎকালীন উপাচার্য আ ফ ম কামালউদ্দিনের সময় শহীদ মিনারটি¯স্থানান্তর করা হয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। তবে সেটিও খুব একটি বড় আকারে ছিল না। ত্রিকোণ আকৃতির শহীদ মিনারটির মাঝে তিন ফুট উঁচু স্তম্ভ ছিল। এর পর দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তৎকালীন বাম সংগঠনগুলো আন্দোলনও করেছিল পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে। ২০০৪ সালে অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান উপাচার্য হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে তৎপর হন। ২০০৬ সালে লাইব্রেরির সামনে একই স্থানে একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরে ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশের সবচেয়ে উঁচু এ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। মূলত, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়।