একদিন ওস্তাদের সিটে বসমু, ডাইবর অমু

আপন মিয়া, বয়স ১২ বছর। ছবি: লেখক
আপন মিয়া, বয়স ১২ বছর। ছবি: লেখক

আপন মিয়া, বয়স ১২ বছর। এ বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে ও মাঠে খেলার কথা। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে এখন বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে। তার ইচ্ছে একদিন বাসের চালক হবে। এ জন্য সে এখন কষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছে।

ফুলবাড়িয়া টু ময়মনসিংহ রোডের ম্যাজিক নামক গাড়ির সহকারী আপন মিয়া। চরম দারিদ্র্যে বেড়ে ওঠা আপন মিয়াকে আট বছর বয়সে তার এক দূর সম্পর্কের মামা গাড়িতে তুলে দেন বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতে। দিনে ২০ টাকা আর দুবেলা খাবার পেয়ে কর্মজীবন শুরু করে আপন। পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এ গাড়ির চালকের সহকারীর কাজ করতে গিয়ে ছোট–বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। হাসপাতালেও কয়েকবার যেতে হয়েছে তাকে। তবু হাল ছাড়েনি। একদিন চালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে আপন মিয়া। বর্তমানে তার বেতন দিনে ১৫০ টাকা।

৬ ফেব্রুয়ারি কথা হয় আপন মিয়ার সঙ্গে। কষ্টকর আর ঝুঁকিপূর্ণ এ বাসচালকের সহকারীর কাজটি করতে কেমন লাগে আপন মিয়ার? শুনে মৃদু হাসে সে। আপন মিয়া বলে, ‘কোনো কামই আরামের না, সব কামই কষ্টের। আমারটা বেশি কষ্টের, সেই আট বছর বয়স থেইকা এ দরজায় দাঁড়াইয়া লোক তুলি। গাড়ির ভেতরে ভাড়া তুলি, ভাড়া লইয়া প্যাসেঞ্জার গো লগে ক্যাচক্যাচ লাগলে বাপ–মা তুইলা গাইল দেয়। চলন্ত গাড়ি থেইকা লাত্তি (লাথি) দিয়া ফালায়াও দেয়, মাইরধর করে। গাড়ি আইসা চাপা দেয়। তবু এইনই দাঁড়ায়া আছি, একদিন ওস্তাদের সিটে আমি বসমু, ডাইবর অমু। কষ্ট তো করণ লাগবই!’

আপন মিয়ার স্বপ্নটা বেঁচে থাক। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে আপন মিয়া নিয়ম মেনেই গাড়ির চালক হতে চায় বলেও জানাল।