মুক্তিযুদ্ধে রেডিওর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়

মুক্তিযুদ্ধে বেতার ছিল অন্যতম অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধে বেতার ছিল অন্যতম অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ত্রৈমাসিক স্বপ্ন’৭১–এর দশম সংখ্যা ‘মুক্তিযুদ্ধে রেডিও’। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণমাধ্যম হিসেবে রেডিওর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। পত্রিকার সম্পাদক আবু সাঈদ তাঁর সম্পাদকীয় লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বেতার ছিল অন্যতম অস্ত্র’।

আবু সাঈদ আরও লিখেছেন, তরুণসমাজের অনেকেই জানে না বাংলাদেশের জন্মের পেছনে বেতারগুলো কী অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছে। সেই সময়ে হতাশগ্রস্ত জাতিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও অস্ট্রেলিয়া, রেডিও জাপানসহ বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র তাদের নিয়মিত খবর, গান, কথিকা, সংবাদ পর্যালোচনা প্রভৃতি প্রচারের মাধ্যমে কীভাবে উজ্জীবিত করেছিল, আবার রেডিও পাকিস্তান এ দেশের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে কীভাবে অপপ্রচার করেছিল, এসব বিষয় রেডিও সংখ্যায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

৪৬৪ পৃষ্ঠার রেডিও সংখ্যাটিতে দেশ-বিদেশের গবেষক, লেখক ও ইতিহাসবিদের প্রবন্ধ; বাংলাদেশ ও ভারতের শব্দসৈনিকদের লেখা ও সাক্ষাৎকার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাদের জবানবন্দি, অর্থ সংগ্রহে ভূমিকা, গান, কবিতা, গল্প, বিশিষ্ট লেখকদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধে রেডিও, শ্রোতা, প্রতিবেদন, দলিলপত্র থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এম আর আখতার মুকুলের চরমপত্র, সীমানা পেরিয়ে বিভাগে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আত্মজীবনীমূলক বই ‘গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন’ থেকে বিদেশের মাটিতে কীভাবে রেডিও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিল, তা পুনর্মুদ্রণ, কিছু লেখা ভিডিও থেকে শ্রুতিলিখন, বইয়ের আলোচনাসহ নানা বিষয় থাকছে।

‘মুক্তিযুদ্ধে রেডিও’–র সূচিপত্র
প্রবন্ধ লিখেছেন আশফাকুর রহমান খান: ‘৭ মার্চ ও বাংলাদেশ বেতার’, শামসুল হুদা চৌধুরী: ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’, প্রিয়জিৎ দেবসরকার ও ইসলাম খান: ‘বেতারে পশ্চিম পাকিস্তানি পাঞ্জাবি সাংবাদিকদের ভূমিকা’, সঞ্জিত দত্ত ‘কৃষ্ণনগরের ওল্ড হিন্দু ছাত্রাবাসে স্বাধীন বাংলা বেতারের ট্রান্সমিটার’, ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ: ‘মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং সংস্কৃতিকর্মীদের ভূমিকা’, ড. মো. এমরান জাহান: ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যম: প্রসঙ্গ বিবিসি রেডিও’, সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকজনের জবানবন্দি’, ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক: ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত’, মুহাম্মদ লুৎফুর হক: ‘রেডিও যখন হাতিয়ার’, সাব্বির হোসেন: ‘ঢাকা বেতারসহ সব আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলীরা একজোট হন’।

‘স্মৃতিতে রেডিও’ বিভাগে লিখেছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন: ‘বাবা রেডিওর খবর শোনার জন্য অপেক্ষা করতেন’, গবেষক ও লেখক পার্থ চট্টোপাধ্যায়: ‘ডেটলাইন ঢাকা’, কবি শামীম আজাদ: ‘শক্তির আকবর: এক অবিস্মরণীয় বেতার কেন্দ্র’, রাশেদা নাসরীন: ‘সে খবরে হৃদয় কেবলি চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে, চোখের জল বাঁধ মানছে না’, দেদারুল আলম মুরাদ: ‘রেডিও সামনে সবাই জয় বাংলা স্লোগানে ফেটে পড়ি’, ফারাহ দিবা আহমেদ: ‘মুক্তিযুদ্ধে রেডিও আমার ছোট জীবনে নানা প্রভার ফেলেছিল’।

যোদ্ধার দৃষ্টিতে লিখেছেন মেজর জেনারেল (অব.) বীর প্রতীক মাসুদুর রহমান: ‘রেডিওতে স্বাধীনতা ঘোষণা শোনার পর উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠি’, মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম এস এ মনসুর আহমেদ: ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় রেডিও’।

সীমানা পেরিয়ে বিভাগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা ‘স্থির করলাম, একটা গাড়ির ওপর রেডিও ট্রান্সমিটার বসাতে হবে...’। শব্দসৈনিক বিভাগে বেলাল মোহাম্মদ: ‘শোনেন বলি নতুন করে পুরান ঘটনা’, আ. ম. শারফুজ্জামান: ‘বিমান হামলা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’, জহির রায়হান: ‘পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, অজিত রায়: ‘একাত্তরে রেডিও বিজয়ের সেই দিনে কেবল চা খেয়েই কাটিয়েছিলাম’, আলী যাকের: ‘যে রেডিও যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন গড়ার দেখিয়েছিল’, ড. নাসরিন আহমেদ: ‘প্রত্যেক মানুষ আত্মনিবেদিত ছিল’, তপন মাহমুদ: ‘যেভাবে যুক্ত হলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে’, আখতার হুসেন: ‘এর চেয়ে গৌরবের আর কী হতে পারে!’ এবং আশরাফ উল্লাহ লিখেছন সুজিত রায়কে নিয়ে ‘কণ্ঠে যাঁর বারুদ ঝরে’, আবদুল্লাহ আল রাফি সরোজ আফরোজা মামুনকে নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাটানো সময়গুলোই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অতিথি শিল্পী হিসেব কাজ করতে নাজমুল হুসাইন। তিনি লিখেছেন, ‘অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করতাম’, জয় বাংলা বেতার কেন্দ্র নিয়ে আনোয়ার হোসের শিকদার, রুবানা শারমীন নিয়েছে অন্যতম শব্দসৈনিক কামাল লোহানীর সাক্ষাৎকার, সোহরাব হাসানের নেওয়ার আকাশবাণী বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শব্দসৈনিক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার, ইতিহাসের সাক্ষী বিভাগে মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ‘ভূঁইয়ার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ৪৮ ঘণ্টা, দলিলপত্র’ বিভাগে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা ঘোষণা, The Government of the Sovereign state of Bangladesh, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বেতার ভাষণ, Alamgir Kabir-Bangladesh Get Ready! কল্যাণ মিত্রের জল্লাদের দরবার।

আকাশবাণী বিভাগে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ‘তোমারই হোক জয়’; উপেন তরফদার–আকাশবাণীর ‘সংবাদ বিচিত্রা’; পঙ্কজ সাহা-অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছিলাম, ‘গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দ’; জগন্নাথ বসু-বেতারকেন্দ্র থেকেই মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছি পুরোদমে; ভবেশ দাস-আকাশবাণী থেকে ভেসে এলো মুক্তির গান; দ্বীপেশচন্দ্র ভৌমিক-যুদ্ধের সেই দিনগুলি; বিবেকানন্দ রায়–আকাশবাণী ও বাংলাদেশের জন্ম; মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়-বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আকাশবাণী কলকাতা এবং রেডিও কার্টুন, শঙ্কর দাশগুপ্ত-মুক্তিযুদ্ধের ‘সঙ্গে’ অবিস্মরণীয় কয়েকটি দিন লিখেছেন।

আত্মজীবনী বিভাগে মনিরউদ্দীন ইউসুফ-আমার জীবন আমার অভিজ্ঞতা, দিনলিপি বিভাগে শফিকুল ইসলাম স্বপন-দিনলিপির পাতা থেকে, বিজয় ঘোষণা বিভাগে সেই সময়ে বিবিসি বাংলায় কর্মরত ছিল কবি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা-সে এক দারুণ সময় ছিল আমার জন্যে

প্রতিবেদন লিখেছেন সাজেদুল আলম-সিরাজগঞ্জের জয়বাংলা বেতার কেন্দ্র, ফারুখ আহমেদ-তিন ব্যান্ড ফিলিপস রেডিওর বিবিসি বাজার, আশফাকুজ্জামান-একজন মোফাজ্জলের রেডিও অতঃপর.., সংগীতা আচার্য্য-স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের অর্থ সংগ্রহ, আবু সাঈদ-পাঁচির চায়ের দোকানে শোনো একটি মুজিবরের থেকে গানটি যেভাবে জন্ম।

গল্প লিখেছেন-বেগম মুশতারী শফী, মনি হায়দার; কবিতা লিখেছেন-শিকদার ইবনে নূর, নাসিম চৌধুরী; আসাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুসা সাদেক, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, সুব্রত বড়ুয়া

মুক্তির গান, কথিকা, পরিক্রমা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত স্লোগান, বিশ্বজুড়ে, শ্রোতা, প্রতিষ্ঠাতাদের পরিচিত, বইয়ের পাতায় রেডিও, হোসাইন মোহাম্মদ জাকির বইয়ে আলোচনা চরমপত্র: ইথারে ইথারে মুক্তির দামামা। মুক্তিযুদ্ধে রেড়িওর প্রচ্ছদ করেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। সংখ্যাটি পাওয়া যাবে বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের স্বপ্ন ’৭১–এর ১৫৮ নম্বর স্টলে। দেশের যেকোনো জায়গায় থেকে ঘরে বসে সংখ্যাটি সংগ্রহ করতে পারবেন Prothoma.com থেকে।