কংলাকে মেঘের রাজ্যে কিছুক্ষণ

মেঘের বিচরণ কংলাক পাহাড়ে। ছবি: সংগৃহীত
মেঘের বিচরণ কংলাক পাহাড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভোর ৫টা বেজে ১০ মিনিট। টুং টাং বেজে উঠল মোবাইল ফোনের অ্যালার্ম। অভ্যাসগতভাবেই অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ঠিক ১৫ মিনিট পর পাপ্পু ভাইয়ের ডাক। আজাহার, তাড়াতাড়ি ওঠ। বাকিদেরও ডাক। সাড়ে ৫টা বাজে। ঘুমিয়েছিলাম রাঙামাটির ছাদ হিসেবে পরিচিত সাজেকের দুটি রিসোর্টে। প্রতি কক্ষে ৪-৫ জন করে।

সবাই দ্রুত উঠে তৈরি হয়ে নিলাম। উদ্দেশ্য, মেঘের বিচরণ দেখতে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া। সকাল ৬টায় চান্দের গাড়িতে (জিপ) করে মেঘের সঙ্গে সখ্য করতে যাব সবাই। আগের দিন বলা হয়েছিল কেউ গাড়ি মিস করলে তাঁকে রেখে যাওয়া হবে।

দল বেঁধে কংলাক পাহাড়ে ঘুরতে যান অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত
দল বেঁধে কংলাক পাহাড়ে ঘুরতে যান অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত

রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় গাড়ির সামনে সবার সমাগম। উদ্দেশ্য, কংলাক পাহাড়। গাড়ির চালক আসছেন না। সবাই অস্থির, কখন যাব মেঘের রাজ্যে বিচরণ করতে।

এদিকে কেউ একজন লক্ষ করল রাস্তার ধার থেকে মেঘমালা দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার কোনোভাবেই বিশ্বাস করছে না। কেউ কেউ কুয়াশা বলে হাসাহাসি করছে। একেকজন একেক ধরনের যুক্তি দিচ্ছেন পক্ষে-বিপক্ষে। পাল্টাপাল্টি যুক্তি দিতে দিতেই চালক চলে এলেন। তখন ৬টা বেজে ১৭ মিনিট। এদিকে কারও আর অপেক্ষা সইছে না। উঠে পড়লাম গাড়িতে, মেঘের সঙ্গে মিতালি করতে।

কংলাক পাহাড়ে সূর্যোদয়। ছবি: সংগৃহীত
কংলাক পাহাড়ে সূর্যোদয়। ছবি: সংগৃহীত

চান্দের গাড়ি (জিপ) চলল কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশে। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। এ পাহাড়ের চূড়া ভূপৃষ্ঠ হতে ১ হাজার ৮০০ ফুট উঁচুতে। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

গাড়ি এসে থামল পাহাড়ের নিচে। বাকি পথ হেঁটে উঠতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ি পথ বেয়ে সবার হাঁটা শুরু হলো। কেউ আবার ভিডিও করছে পাহাড়ি রাস্তা। একপর্যায়ে উঠে পড়লাম কংলাক পাহাড়ের চূড়ায়। যেখান থেকে মেঘমালার ভেসে বেড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

কংলাক পাহাড়ে মেঘের আনাগোনা। ছবি: সংগৃহীত
কংলাক পাহাড়ে মেঘের আনাগোনা। ছবি: সংগৃহীত

কংলাকের চূড়ায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি অনেকে দৃশ্যটিকে ধারণ করতে সেলফি, ছবি, ভিডিও করায় মেতে উঠেছে । মন বলে, ‘আমি যদি পাখি হতাম, তবে মেঘের সঙ্গে উড়ে বেড়াতে পারতাম।’

সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরেক অপরূপ দৃশ্য হাজির। সূর্যের আলোয় মেঘমালা যেন নতুন সাজে সুসজ্জিত হয়ে উঠল। তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। পাহাড়ের গায়ে যেন আটকে যাচ্ছে। মেঘে ঢেকে যাচ্ছে পাহাড়।

কংলাক পাহাড়ে লেখকসহ অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত
কংলাক পাহাড়ে লেখকসহ অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত

আহা! কি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সত্যি সত্যি মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চায়। মন গেয়ে ওঠে, ‘মন চায় মন চায়, যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে যাব হারিয়ে।’ হারানোর স্বপ্ন দেখতে দেখতেই সময় হয়ে এল ফিরে যাওয়ার। কিন্তু ফিরে যেতে মন চায় না। কবির ভাষায়, ‘যেতে নাহি মন চায়, তবু চলে যেতে হয়।’

*লেখক: শিক্ষার্থী, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়