আসছে বসন্ত সাজছে রাবির চারুকলা
আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে। বসন্ত রাঙা ফাগুনের কোনো একদিনে হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানটি লিখেছিলেন।
বসন্ত আসতে বাকি আর মাত্র এক দিন। ওই দিন গাইবে সবাই বসন্তের গান ‘বসন্ত এসে গেছে’। সাজবে সবাই নতুন সাজে। বসন্তের এই আগমনে শীতকালে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার গজাবে নতুন পাতা। প্রকৃতি ছেয়ে যাবে সবুজ পাতায়।
বসন্তে পাতার ফাঁকে বসে কু-হু-কু-হু গান ধরবে কোকিল। ফুলে ফুলে ভরে যাবে গাছগাছালি। ফুটবে লাল টুকটুকে পলাশ। বসন্তকে সামনে রেখে দেশের নানা পেশাজীবী মানুষ মাতবেন বসন্তবরণ উৎসবে।
ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চারুকলা অনুষদ সাজছে বর্ণিল সাজে। অনুষদের শিক্ষার্থীরা তুলি দিয়ে রং মেখে রাঙাচ্ছেন কিছু হাঁড়ি। যা শখের হাঁড়ি বলেই পরিচিত। এসব হাঁড়িতে ফুটে উঠছে বিভিন্ন ফুল-ফলের চিত্রসহ গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি। আবার বাঁশ, বেত, খড়, বাঁশের চাটাই দিয়ে গ্রামীণ সংস্কৃতির আদলে মঞ্চ ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে।
কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে বসন্তের আমেজকে বৃদ্ধি করতে কোকিলের ডামি। কেউ পেপারে আঠা লাগিয়ে নিচ্ছেন আবার কেউ সেটা লাগিয়ে দিচ্ছেন বাঁশের তৈরি কোকিলের ডামির উপরিভাগে। কয়েকজন শিক্ষার্থী অনুষদের একাডেমিক ভবনের পূর্ব পাশের দেয়াল বেয়ে বাঁশের তৈরি মাচার ওপর উঠে দেয়ালজুড়ে করছেন শিল্পী বনিজুল হকের মুখচ্ছবির দেয়ালচিত্র। আবার বসন্ত বরণে প্রথম যাত্রা ‘আনারকলি’র অনুশীলন করছেন একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলার বেলকনিতে বেশ কয়েকজন।
ভবনের পূর্ব দেয়ালের পাশে বসে দেয়ালচিত্র অঙ্কন দেখছেন অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ সুমন। তিনি জানালেন, প্রতিবারের মতো এবারও বসন্তকে বরণ করে নিতে রাবির চারুকলায় দুই দিনব্যাপী বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের আয়োজনের শোভাযাত্রায় থাকবে পলাশ ফুল ও কোকিলের ডামি, যা মানুষকে বসন্তের কোকিল ডাকা ও লাল টুকটুকে পলাশ ফুলকে মনে করিয়ে দেবে।
শখের হাঁড়ির নকশা করছেন অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রমা নওশিন। তিনি বলছিলেন, বসন্তকে ঘিরে এবারে অনেক দেয়ালচিত্র করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আরও একটি দেয়ালচিত্র করা হচ্ছে শিল্পী বনিজুল হকের। তিনি রাবি চারুকলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এবারে চারুকলা মঞ্চ একটু আলাদাভাবে সাজানো হবে। মঞ্চের সামনে শখের হাঁড়ি দিয়ে সাজানো হবে, যা রাজশাহীর বিখ্যাত শখের হাঁড়ির ঐতিহ্যকে সামনে নিয়ে আসবে। আর মঞ্চের ওপর খড়ের ছাউনি দেওয়া হবে, যা দেশের গ্রাম-বাংলার লোক সংস্কৃতিকে ধারণ করবে।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী