রস+আলো ও ভালোবাসার শৈশবের গল্প

খুব সম্ভবত ২০০৭–এর কোনো এক সোমবার বাবা অফিস থেকে একটা ম্যাগাজিন বাসায় নিয়ে আসেন। আমরা তখন রংপুরে থাকি। ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে দেখি রস+আলো। প্রথম আলোর নতুন ম্যাগাজিন। ওই দিনে আমি যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম, সেটা এখনো অনুভব করি। ‘আলপিন’ বন্ধ হওয়ার অনেক দিন পর এ রকম কিছু পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। প্রথম সংখ্যার হেডিং ছিল ‘টক শো আসলে কতটা টক’। মলাট রস, বিজ্ঞাপন রস, যাপিত রস—আরও কত রসে পরিপূর্ণ থাকত মাত্র ৮ পৃষ্ঠার ম্যাগাজিনটি। পরের সপ্তাহে সোমবার আসার আগে কতশতবার ওইটা পড়ে শেষ করতাম, তার ইয়ত্তা ছিল না।

ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রর একটা লেখা ছিল প্রথম সংখ্যায়, তখন তাঁকে চিনতাম না। লেখাটা এতটাই ভালো লেগেছিল যে আমার স্কুলে কখনো কোনো গল্প বলতে ডাকলে ওই গল্পটাই বলতাম, যা আমাকে রীতিমতো বিখ্যাত করে তুলেছিল।

এরপর থেকে শুরু হলো রস+আলো সংগ্রহ করা। মাঝেমধ্যে বিশেষ দিবসের ক্রোড়পত্র আসত সোমাবার, ওই দিন রস+আলো প্রকাশ হতো না। সারা সপ্তাহের অপেক্ষা জলাঞ্জলি দিতে হতো সেদিন।

সাদা কাগজে মাঝেমধ্যে গল্প লেখার চেষ্টা করতাম। রস+আলোর ধাঁধাগুলো মিলাতাম, কমিক্স আঁকাতাম। কিন্তু পোস্ট অফিস দূরে থাকার কারণে তা আর পোস্ট করা হয়নি। মনে হতো, কোনো একটা লেখার নিচে নিজের নামটা থাকলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত।

রস+আলোর মোটামুটি প্রথম শ–খানেক সংখ্যা সংগ্রহ করেছিলাম তখন। ২০১৩ সাল থেকে বাড়ির বাইরে থাকার দরুন সংগ্রহ বাড়তে পারেনি। পুরোনোগুলোও গ্রামের বাড়িতে বুকশেলফে রাখা আছে অযত্নে। ছোট বোনটা মাঝেমধ্যে পড়ে, আবার রেখেও দেয়।

তবে আমার মতো যাদের কৈশোর কেটেছে রস+আলো, আলপিন ইত্যাদি পড়ে তাদের কাছে এটা শুধু একটা ম্যাগাজিন না, একটা ভালোবাসা, একটা ইমোশন। ফেসবুকে এখন মিম দেখে হাসি, পরক্ষণে সেটা ভুলেও যাই। কিন্তু ১০ বছর আগে রস+আলোর শিখা বা কে মাহমুদ ভাইয়ের কার্টুনগুলো এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে, ভুলে যাওয়া তো সেখানে নস্যি।

*লেখক: সাধারণ সম্পাদক, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা