বাংলার 'নীল নদে' একদিন

শ্যামল বাংলার অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্ভার আবহমানকাল থেকে তার সন্তানদের শান্ত-স্নিগ্ধ অনুভবে জীবন কাটাতে উদ্বেলিত করে। পাহাড়, বন আর সমুদ্র–পরিবেষ্টিত ছোট্ট এ ভূখণ্ডটি ছায়াঘেরা পরিবেশের এক অনবদ্য রূপসম্ভার। ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপজেলাভিত্তিক সংগঠন ডুসাস পরিবারের ট্যুর ছিল। আর তাতেই রচিত হয় নীল জলরাশির ভালোবাসায় সিক্ত সিলেটের ‘নীল নদখ্যাত’ লালাখালের গল্প।

পূর্বপরিকল্পনা মাফিক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বিকেলে লালাখালে পৌঁছায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শিক্ষার্থীদের পরিবার ডুসাস। এসেই নীল জলরাশি ও ছোট ছোট নৌকার সারি মুগ্ধ করে আমাদের। যে যার মতো ছুটে যায় জলের পানে এবং বন্দী হয় স্থিরচিত্রে। সিদ্ধান্ত হলো নৌকা ভ্রমণ করার। লালাখাল জিরো পয়েন্ট থেকে তিনটি নৌকা ভাড়া করে ছুটে চললাম সারিঘাটের উদ্দেশে। লালাখালের নীল জলরাশির আছড়ে পড়া ঢেউ এবং চারপাশের পরিবেশ মুগ্ধ করে প্রত্যেকেই। মাঝপথে মেহেরুন নেসা প্রীতিয়ার মন্তব্যটি ছিল ঠিক এমন, ‘এই পথ শেষ না হোক, আমি হারাতে চাই এই সৌন্দর্যের মাঝে।’

নদী আর পাহাড়ের মেলবন্ধনে নদীর টলটলে স্রোতস্বিনী জল আর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, এ যেন প্রকৃতির এক মায়াময়ী রূপের বাহানা।

সিলেটের লালাখালে ঘুরতে যান অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের লালাখালে ঘুরতে যান অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত

লালাখালে সন্ধ্যার আগমুহূর্তটা ছিল আরও অবিস্মরণীয়। ওপরে আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। চারপাশে গাছপালার মধ্যে পাখির কিচিরমিচির। এসব দেখলে মনে হয়, পাহাড় থেকে তিরতির সন্ধ্যা নেমে আসছে। ধীরে ধীরে গোধূলিকেও আঁধার ঢেকে দেয়। ক্রমে চারপাশে নেমে আসে আঁধার। সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে লালাখালের স্বচ্ছ নীল জলে। ১টা ৪০ মিনিটের এই নৌকা ভ্রমণ সত্যিই লালাখালের মুগ্ধতা হাজার গুণ বাড়িয়ে দিল। নদী, পাহাড়ি বন, চা-বাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি লালাখালের ভূপ্রকৃতিকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। দীর্ঘ ক্লান্তির অবসানে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল এমন তৃপ্তিময় নৌকা ভ্রমণ।

নীল জলরাশি কার না পছন্দ। এমন একটি নীল জলরাশির লালাখাল মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় অপার সৌন্দর্যময়ী বাংলাদেশের কথা। এই যেন এক টুকরো নীল নদ, যেখানে গা ভাসিয়ে দিয়ে উপভোগ করা যায় জীবনের জীবনের সবচেয়ে মধুর মুহূর্তটি। সময় স্বল্পতার কারণে যখন ফিরে যাচ্ছিলাম, মন বারংবার বলল ‘খুব মিস করব হে নীল জলরাশি’।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাবি