আড্ডায় মুখরিত চিরযৌবনা ইবির ডায়না চত্বর

আড্ডাবাজদের ভোজন পর্ব চলছে ডায়না চত্বরে। ছবি: সংগৃহীত
আড্ডাবাজদের ভোজন পর্ব চলছে ডায়না চত্বরে। ছবি: সংগৃহীত

সমগ্র জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন আড্ডার দেখা মেলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে। আড্ডা থেকে শুরু হয় বন্ধুত্ব, শুরু হয় স্বপ্নদেখা, শুরু হয় পথচলা।

দিনভর ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনসহ সব ‘প্যারাময়’ শব্দগুচ্ছকে সরিয়ে নিয়ে মনকে চাঙা করে তোলার জন্য অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন শব্দের নাম আড্ডা। সব সময় ক্লাস, পরীক্ষা আর লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালো লাগে না শিক্ষার্থীদের। এসবের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা চান আড্ডাবাজি করতে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আড্ডাবাজদের জন্য অন্যতম আদর্শ জায়গা হিসেবে পরিচিত ডায়না চত্বর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের সামনেই এ ডায়না চত্বর। এ চত্বরের বিশালত্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুবিশাল আলবেজিয়াছগাছ ও গয়নার মতো চত্বরটাকে ঘিরে আছে সোনালুগাছ। ডায়না চত্বর যেন প্রকৃতিকে সাজিয়ে এক নতুন রূপে।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাবাজদের জন্য অন্যতম আদর্শ জায়গা ডায়না চত্বর। ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাবাজদের জন্য অন্যতম আদর্শ জায়গা ডায়না চত্বর। ছবি: সংগৃহীত

প্রিন্সেস ডায়না যে বছর মারা যান, তখন থেকেই চত্বরটির নাম হয় ডায়না চত্বর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ডায়না চত্বর মুখরিত থাকে শিক্ষার্থীদের আড্ডায়। অনেকগুলো আড্ডার জায়গা থাকলেও এটাই যেন তাঁদের কাছে আড্ডার প্রাণকেন্দ্র—আড্ডায়, হাসিতে মুখর ডায়না চত্বর। এখানে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন শিক্ষার্থীরা। কেউ বন্ধুদের জন্মদিন উদ্‌যান করছেন আবার কেউ গিটার হাতে গানের ভুবনে মগ্ন। কেউ দলবদ্ধ হয়ে সেলফি তুলছেন আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্পে আর খুনসুটিতে মেতে উঠেছেন। খুনসুটিতে থাকে ঝগড়া, রাগ, অভিমান, কিন্তু পরক্ষণেই সব ভুলে যান। তাই তো কবিতার ছন্দে বলতে হয়, ‘খুনসুটি আড্ডাবাজি কতশত হয়, মুখের কথা হাবিজাবি, মনে কি গো রয়।’ অনেকেই গোল হয়ে নিজেদের স্কুল-কলেজজীবনের স্মৃতিচারণা করেন এখানে। কেউ এককভাবে আবার কেউ দলবদ্ধভাবে সময় পার করেন। ক্লাসের ফাঁকে গাড়ির অপেক্ষায় আড্ডা জমে ডায়না চত্বরে। এ প্রাঙ্গণ সব সময় মুখরিত থাকে গল্প, গান আর আড্ডায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের সামনেই এ ডায়না চত্বর। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের সামনেই এ ডায়না চত্বর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের অনেকটা সময় কাটে এ ডায়না চত্বরে। কত শত গল্পের ফ্রেম এখান থেকে শুরু হয়, তা বলে শেষ করা যাবে না। এ ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত বলে আমাদের কাছে মর্যাদা বেশি না। তবে যারা ক্যাম্পাসের পুরোনো শিক্ষার্থী, তারা হয়তো খুব মিস করেন আড্ডাটাকে এবং এ আড্ডার চত্বরকে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পায় এ চত্বর। ক্লাসের ফাঁকে অথবা ক্লাস শেষ করেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসে যায়। তা কখন শেষ হবে বলা দুষ্কর। সারা দিন ক্যাম্পাসে থাকার সুবাদে ক্লাস বাদে বেশির ভাগ সময় কাটে এ ডায়না চত্বরে।’

ডায়না চত্বরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরাই আড্ডা দেন, তা কিন্তু নয়; প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ও সময় পেলে চলে আসেন তাঁদের স্মৃতি জড়ানো প্রিয় স্থানটিতে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আবার আসছেন, কিন্তু ইবির ডায়না চত্বরের আড্ডা চিরযৌবনা হয়ে আছে।

কফি হাউসের আড্ডার গানের মতো করে বলতে হয়, কতজন এল গেল, কতজনই আসবে, ডায়না চত্বরই শুধু থেকে যায় স্বমহিমায় তার চিরচেনা রূপে হাজারো স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়