রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের যেমন সেবা চান তরুণেরা

ব্যাংকের গ্রাহকসেবা গ্রহণের জন্য লম্বা লাইন ধরতে হয়। ছবি: সংগৃহীত
ব্যাংকের গ্রাহকসেবা গ্রহণের জন্য লম্বা লাইন ধরতে হয়। ছবি: সংগৃহীত

পরিবর্তনের সঙ্গে সব থেকে বেশি তাল মিলিয়ে চলে প্রতিটি দেশের তরুণ প্রজন্ম। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সুযোগটা কম। পৃথিবীর উন্নত দেশে তরুণ প্রজন্মের কথা ভেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়। কারণ পরিবর্তনটা তরুণ প্রজন্ম সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

আমাদের দেশ প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক এগিয়েছে। অ্যানড্রয়েড ফোনের সুলভ মূল্যের কারণে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ তরুণ এই অপারেটিং সিস্টেমের মোবাইল ব্যবহার করেন। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ ব্যবহার করেন। কেউ কেউ অ্যাপলের ফোন ব্যবহার করেন। সুতরাং দেখা যায়, তরুণেরা প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে আছে আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি ব্যাংকগুলো।

কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলো ব্যাংকিং জগৎটা তরুণদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সেখানে আমাদের দেশের সরকারি ব্যাংকগুলো প্রযুক্তি থেকে অনেক দূরে।

যেমন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য উন্নত বিশ্বে অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। সেখানে আমাদের দেশে তরুণদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা খুবই কষ্টের ব্যাপার। প্রথমত, তাঁদের জানতে হয় কী কী কাগজ লাগবে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে। দ্বিতীয়ত, এটি ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে ব্রাঞ্চে গিয়ে ফরম পূরণ করতে হয়। তৃতীয়ত, পরিচিত অ্যাকাউন্ট হোল্ডার লাগবে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য। চতুর্থত, একজন নমিনি লাগবে। এসব কাজ শেষে এমআইসিআর চেক পেতে কয়েক কর্মদিবস লেগে যায়।

উন্নত বিশ্বের ব্যাংক গ্রাহকসেবা এখন ঘরে বসেই মেলে। ছবি: সংগৃহীত
উন্নত বিশ্বের ব্যাংক গ্রাহকসেবা এখন ঘরে বসেই মেলে। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের চাওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ব্যাংক ব্যালান্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিম, সঞ্চয়পত্রসহ সাধারণ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ঘরে বসেই যেন মেলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেনি কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি ব্যাংকগুলো। কারণ ব্যাংকগুলোর অনলাইনভিত্তিক ঘরে বসে সেবা প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। তাই তরুণ প্রজন্ম ব্যাংকিং থেকে দূরে গিয়ে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে নিচ্ছে।

অনলাইনভিত্তিক ঘরে বসে সেবা না থাকার কারণে ব্যাংকগুলো সাধারণ গ্রাহকের কর্মঘণ্টা নষ্ট করছে। সেই সঙ্গে ছোটখাটো সেবাগুলো পেতে শাখায় আসার জন্য সময় ও অর্থ কেড়ে নিচ্ছে গ্রাহকের।

তরুণ প্রজন্ম অনলাইনভিত্তিক সেবাগুলো পেতে চায়। এ সেবাগুলোর জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় চার্জ প্রদান করতেও চান। তার পরও তারা নিজেদের সময় বাঁচানোর জন্যও সহজভাবে সেবা পেতে চান রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে।

তরুণ প্রজন্মের সেবা প্রদান কবে থেকে আমাদের এই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি ব্যাংকগুলো শুরু করবে, সেটাই দেখার বিষয়।

লেখক: সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা