সাগরকন্যায় স্বপ্নবাজ তরুণেরা

ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল কিংবা ইনকোর্সে ঘেরা শিক্ষার্থীর গড়পড়তা জীবনে সাময়িক স্বস্তির জন্য সাগরকন্যায় সাংবাদিকেরা। ছবি: সংগৃহীত
ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল কিংবা ইনকোর্সে ঘেরা শিক্ষার্থীর গড়পড়তা জীবনে সাময়িক স্বস্তির জন্য সাগরকন্যায় সাংবাদিকেরা। ছবি: সংগৃহীত

দৃষ্টিসীমায় বিস্তৃত জলরাশি, দিগন্তে উদীয়মান কিংবা অস্তমিতপ্রায় সূর্য লাল আভার মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চারধারে। এমন দৃশ্যই হরহামেশা চোখে পড়বে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং তিন কিলোমিটার প্রস্থের সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র এ পর্যটনকেন্দ্র থেকেই শুধু অবলোকন সম্ভব সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মতো প্রভাত ও সাঁঝের মায়ার দুটি ভিন্ন পটের রূপকথার বাস্তব এই চিত্রগল্প।

নয়টা-চারটা ক্লাস, তার সঙ্গে অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল কিংবা ইনকোর্স—এ যেন এক শিক্ষার্থীর গড়পড়তা জীবনের পরিধি। তাঁর থেকেও আবার ক্যাম্পাস সাংবাদিকের ব্যস্ততা সে যেন আরও একটু প্রকটই বটে। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা এড়িয়ে চলার ফুরসত নেই। দিনের শুরু কিংবা রাতের শেষাংশ কোনো অংশেই সীমাবদ্ধ নেই কর্মঘণ্টা। সংবাদের তাগিদে ছুটছে নিরন্তর।

এর মাঝেই সাময়িক স্বস্তির নেশায় ভিন্নধারার প্রয়াস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির। ব্যস্ততাকে গোচরীভূত করতেই একদল উদ্যমী ক্যাম্পাস সাংবাদিক পাড়ি জমান সাগরকন্যার দেশে স্নিগ্ধতার প্রয়াসে। সাত থেকে আট ঘণ্টা দীর্ঘ যাত্রার শেষে একটি নতুন ভোর, দৃষ্টি প্রান্তরে বঙ্গোপসাগরের ঢেউখেলানো বিশাল জলরাশি, পূর্ব পটে উঁকি দিতে শুরু করেছে ভোরের প্রথম আলো। আর এমন দৃশ্যপটেই কালের সাক্ষী হয়ে যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ও তার একদল স্বপ্নবাজ তরুণ। এ যেন নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা গুছিয়ে পুনরায় নতুন উদ্যমে ছুটে চলার প্রয়াস। চোখে বিস্ময়, মনে প্রশান্তি, মুখে বিশ্বজয়ের অমূল্য হাসি, যাতে ক্লান্তি আর নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ঘুচে যাবে ক্ষণিকেই। যান্ত্রিক নিউরনে অজানা কোনো এক নতুন সতেজতা।

সাগরকন্যার প্রেমে সম্মোহিত হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির তরুণ সাংবাদিক দল। ছবি: সংগৃহীত
সাগরকন্যার প্রেমে সম্মোহিত হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির তরুণ সাংবাদিক দল। ছবি: সংগৃহীত

মানবহৃদয়ে আবেগপ্রবণ আর কাব্যিক সুরের মূর্ছনা ধরাতে প্রকৃতির যে কটি উপাদানের কোনো বিকল্প হয় না কখনো বৃষ্টি, জল, মৃদু হাওয়া তার মধ্যে ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠতম আশীর্বাদ। আর যদি এই তিনটিরই উপস্থিতি থাকে হাতের নাগালে, তবে স্বর্গ ঠাঁই নেয় মর্ত্যলোকে। রসায়নের ভাষায় বিষয়টিকে বলা যেতে পারে দুইয়ের সঙ্গে তিনের সমসত্ত্ব মিশ্রণ, কবির ভাষায় হয়তো সম্মোহন। আর এই তিনের যোগসাজশে সাগরকন্যার প্রেমে সম্মোহিত হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির তরুণ সাংবাদিক দল। একদিকে মেঘমেদুরের খেলার সঙ্গে মৃদু হাওয়া, অন্যদিকে জোয়ারে বাণে নূতনের ছোঁয়া, যেন বসন্তের প্রেমে পড়া নব্য কোনো এক ছান্দসিক কবি মন। আর সেই কবি মনের পূর্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশে অনন্য সাগরকন্যার জলরাশির ঘনিষ্ঠতা। যেখানে প্রকৃতি তার সবটা দিয়েছে উজাড় করে। জল, জলরাশি, ঝাউ, লাল কাঁকড়া কিংবা বিস্তৃত বালু প্রান্তর বিকল্পহীনভাবে গড়েছে নীরব সখ্য।

নিয়মের চর্চায় শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক সেও মাঝেমধ্যে নিয়ম ভাঙে বিমোহিত ভালোবাসায়। তারাও জানে নিয়মের শৃঙ্খলে বন্দী হয় না মুক্ত প্রাণের উচ্ছ্বাস। তাই তো সাগরতীরে তারাও খেলে নিয়মতান্ত্রিক ফুটবলের অনিয়মতান্ত্রিক খেলা। যেখানে বাদ সাধে না বড় কিংবা ছোটর নিয়ম। ভালোবাসার উচ্ছ্বসিত আবেগে মত্ত তাদের অভিলাষী মন। সেই উচ্ছ্বসিত মনে গান ধরে সাংবাদিকের গায়কি সত্তা, ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে! মেলে দিলাম গানের সুরের এই ডানা...।’

আর এই হারিয়ে যাওয়ার মাঝে জল, জলরাশি, ঝাউ কিংবা তিন নদীর মোহনার তৃপ্ত অধ্যায়ের এক গল্প নিয়ে নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় পুনরায় নতুন উদ্যমে মিশে যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ও তার চিরপরিচিত স্বপ্নবাজ তরুণ সাংবাদিকের দল।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়