কুদরাত-ই-খুদা ক্যাম্পে বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট তৈরি শিখল শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির আয়োজনে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী ‘কুদরত-ই-খুদা সায়েন্স ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির আয়োজনে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী ‘কুদরত-ই-খুদা সায়েন্স ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির (এসপিএসবি) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস-২০২০। কংগ্রেসের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে শনি ও রোববার (২২ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি) দুই দিনব্যাপী ‘কুদরত-ই-খুদা সায়েন্স ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গফরগাঁওয়ের স্থানীয় সংগঠন সময়ের স্বপ্নের সহযোগিতায় ক্যাম্পে তিনটি বিদ্যালয়ের ৫৩ শিক্ষার্থী হাতে–কলমে বিজ্ঞান গবেষণা শেখার সুযোগ পায়।

দেশের স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা জনপ্রিয় করে তোলা, শিক্ষার্থীদের সত্যিকার বিজ্ঞানীদের মতো চিন্তা ও গবেষণা করতে শেখানোর লক্ষ্য নিয়ে সপ্তমবারের মতো এ আয়োজন হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি, গ্রাফ, মাপজোখ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। বিভিন্ন মজার মজার সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হয় এদিন। বিজ্ঞানকে কীভাবে খুব সহজে ও আনন্দের সঙ্গে শেখা যায়, শিক্ষার্থীদের তা–ও ধারণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশগ্রহণের নিয়মকানুন সম্পর্কে জানানো হয় শিক্ষার্থীদের। কীভাবে বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট, পেপার ও পোস্টার তৈরি করতে হয় এবং তা উপস্থাপন করতে হয়, সেগুলোও তাদের হাতে–কলমে শেখানো হয়। অবৈজ্ঞানিক যুক্তি বাদ দিয়ে কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণা করতে হয়, সেটিও শিক্ষার্থীদের ব্যাখ্যা করা হয়।

ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের পাঁচটি দলে বিভক্ত করে কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে গবেষণা করে এবং সেই বিষয়টি নিয়ে পোস্টার তৈরি করা ও উপস্থাপন করা যায়, তা হাতে–কলমে শেখানো হয়। পাঁচটি দল আলাদাভাবে তাদের গবেষণার বিষয়টি ঠিক করে নেয় এবং এরপর তারা গবেষণায় যুক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি দলের সব সদস্য সক্রিয়ভাবে গবেষণা করে তাদের নিজস্ব বৈজ্ঞানিক পোস্টার তৈরি করে।

দেশের স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা জনপ্রিয় করে তুলতে এবং শিক্ষার্থীদের সত্যিকার বিজ্ঞানীদের মতো চিন্তা ও গবেষণাকাজ শেখানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
দেশের স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা জনপ্রিয় করে তুলতে এবং শিক্ষার্থীদের সত্যিকার বিজ্ঞানীদের মতো চিন্তা ও গবেষণাকাজ শেখানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি প্রয়োগ করে এক্সপেরিমেন্ট করা এবং অনুকল্প পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা চালিয়েছে এই পোস্টারগুলোতে। বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন চমকপ্রদ অনুকল্প উঠে আসে। বেলা দুইটা থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের বানানো পোস্টার সবার সামনে উপস্থাপন করে।

ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করার পর বিজ্ঞান নিয়ে তাদের ভুল ধারণাগুলো বদলে গেছে এবং ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করেই গবেষণা করবে তারা। এ ছাড়া কংগ্রেসে অংশগ্রহণের আগে এ রকম প্রস্তুতিমূলক কর্মশালা অংশগ্রহণকারীদের জন্য অনেক উপকারে আসবে—যা শুধু কংগ্রেসের জন্যই নয়, ভবিষ্যতেও আরও বিভিন্ন সময়ে কাজে দেবে।

সায়েন্স ক্যাম্পের শেষ দিনে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ব্যক্ত করে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস মারিয়া বলেছে, ‘বিজ্ঞান বিষয়কে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সবাইকে ধন্যবাদ। আমি এখন বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের মতো চিন্তা করার চেষ্টা করব।’

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাপ্পি জানায়, এ আয়োজন তার কাছে নতুন একটি অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করেছে এবং নতুনভাবে তাকে ভাবতে শিখিয়েছে।

দশম শ্রেণির অপর এক শিক্ষার্থী বৃথি আক্তার মীম জানায়, ‘ক্যাম্পে বৈজ্ঞানিক পোস্টার বানানো শিখেছি। বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি শিখতে পেরে আরও ভালোভাবে কাজ করার আগ্রহ পেয়েছি।’

ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি, গ্রাফ, মাপজোখ, মজার মজার সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট ও বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশগ্রহণের নিয়মকানুন সম্পর্কে জানানো হয় শিক্ষার্থীদের। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি, গ্রাফ, মাপজোখ, মজার মজার সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট ও বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশগ্রহণের নিয়মকানুন সম্পর্কে জানানো হয় শিক্ষার্থীদের। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

গফরগাঁওয়ের ক্যাম্পটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির একাডেমিক টিমের সদস্য মুশফিকুর রহমান প্রিয়, মো. সাইম সরকার সিফাত এবং ইউসুফ জামিল।

৩-৪ এপ্রিল শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা জনপ্রিয় করে তোলা, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানীদের মতো করে চিন্তা, গবেষণা করতে শেখানো এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিজ্ঞান আয়োজনগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের লক্ষ্য ৩ থেকে ৪ এপ্রিল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে সপ্তমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০২০।

তৃতীয় থেকে দ্বাদশপড়ুয়া খুদে বিজ্ঞানীরা তিনটি ক্যাটাগরিতে কংগ্রেসে অংশ নিতে পারবে। প্রাইমারি (তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণি), জুনিয়র (ষষ্ঠ-নবম শ্রেণি) এবং সিনিয়র (দশম-দ্বাদশ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা কংগ্রেসে তাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপন করতে পারবে বৈজ্ঞানিক পেপার, বৈজ্ঞানিক পোস্টার ও বিজ্ঞান প্রজেক্টের মাধ্যমে।

রেজিস্ট্রেশন কোথায় করতে হবে
রেজিস্ট্রেশন করতে হবে www.cscongress.net ওয়েবসাইটে গিয়ে। রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি, চলবে এ বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত। রেজিস্ট্রেশনের সময় শিক্ষার্থীকে তার গবেষণার একটি ধারণাপত্র (কনসেপ্ট পেপার) জমা দিতে হবে। নির্বাচিত কনসেপ্ট পেপারের তালিকা প্রতি সপ্তাহে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। শুধু নির্বাচিত গবেষণাগুলো কংগ্রেসে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।

ক্যাম্পে প্রতিটি দলের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে গবেষণা করে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক পোস্টার তৈরি করে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ক্যাম্পে প্রতিটি দলের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে গবেষণা করে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক পোস্টার তৈরি করে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

গত বছরের মতো এই বছরও কংগ্রেসে গবেষণার জন্য মাকসুদুল আলম বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি (ম্যাসল্যাব) থেকে দেওয়া হবে গবেষণাবৃত্তি ‘চিলড্রেন্স সায়েন্স ফান্ড’। গবেষণাবৃত্তির জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রপোজাল জমা দিয়ে আবেদন যাবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। এখানে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত কয়েকজনকে এই ফান্ডের আওতায় রিসার্চ গ্র্যান্ট এবং ট্রাভেল গ্র্যান্ট প্রদান করা হবে। গ্র্যান্টের বিস্তারিত পাওয়া যাবে শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে।

কংগ্রেসের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে সারা দেশে আয়োজিত হচ্ছে অ্যাকটিভেশন কর্মশালা ও কুদরাত-ই-খুদা সায়েন্স ক্যাম্প।