বালি ভ্রমণের ইতিবৃত্ত

ইন্দোনেশিয়ার নুসা লেম্বগান আইসল্যান্ডে সমুদ্রের সৌন্দর্যে ভিড় জমান পর্যটকেরা। ছবি: লেখক
ইন্দোনেশিয়ার নুসা লেম্বগান আইসল্যান্ডে সমুদ্রের সৌন্দর্যে ভিড় জমান পর্যটকেরা। ছবি: লেখক

কোথাও ঘুরতে গেলে মন সতেজ হয়। আর তাই ভ্রমণ ব্যাপারটা বরাবরই আমাকে টানে। প্রতিবছর বিবাহবার্ষিকী ঘিরে একটা ট্যুর প্ল্যান করে থাকি। গত ১৮ অক্টোবর আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল। ঠিক করলাম এবারে আমরা ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে ঘুরতে যাব।

এবারের ট্যুরে ছিলাম চারজন, মেয়ে ও দেবর ছিল। বালিতে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ভিসার ঝামেলা নেই। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় অন অ্যারাইভাল ভিসা। শুধু প্লেনের টিকিট কাটলেই হলো। বালিতে যাওয়ার জন্য মালিন্দো, থাই, সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস ভালো। টিকিট যত আগে কাটা যাবে, দাম তত কম পড়বে। আমরা দেড় মাস আগে টিকিট কেটেছিলাম। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বালিতে কোনো ফ্লাইট নেই, কুয়ালালামপুর অথবা সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট নিয়ে যেতে হয়।

গত বছরের ২১ অক্টোবর রাত একটায় মালিন্দো এয়ারে আমাদের ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার ফ্লাইট ছিল। ঢাকা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে ভোর ৭টার দিকে কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। ১০ ঘণ্টার ট্রানজিট শেষে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ওড়ার পর আমরা বালি এয়ারপোর্ট পৌঁছাই।

বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ এলাকা ও প্রদেশ। জাভা শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ইন্দোনেশিয়ার ৩৩তম প্রদেশ। বালিকে ‘পৃথিবীর অন্তিম স্বর্গোদ্যান’ বা ‘দ্য লাস্ট প্যারাডাইস অন আর্থ’ও বলা হয়। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বালি দ্বীপের প্রতিটি জায়গা অসম্ভব সুন্দর।

বাংলাদেশিদের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় অন অ্যারাইভাল ভিসা, ইমিগ্রেশনে তেমন কোনো ঝামেলা করে না, দু–একটা প্রশ্ন করে, তারপর ৩০ দিনের এন্ট্রি ভিসা দিয়ে দেয়। রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং পেপারস, ডলার এন্ডোর্স সঙ্গে থাকায় আমাদের ইমিগ্রেশন আরও সহজে হয়েছিল। ইমিগ্রেশন পার হয়ে এয়ারপোর্টেই ইন্দোনেশিয়ার সিম পাওয়া যায়। এয়ারপোর্ট থেকেই সিম কিনে নিয়েছিলাম। হোটেল এবং গাইড আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল। হোটেল বুকিংয়ের জন্য বুকিং ডটকম ও ট্রিপঅ্যাডভাইজার ডটকমের মতো ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করা যায়। গাইড এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পৌঁছানো মাত্র অভ্যর্থনা জানিয়ে হোটেলে পৌঁছে দিলেন। হোটেল ছিল উবুদে, এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে। হোটেলে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় ২ ঘণ্টা লেগেছিল। হোটেলের নাম ছিল ‘কেনচানা উবুদ’। হোটেলে ২ দিন, ৩ রাত ছিলাম। হোটেলে চেকইন করে রুমে গিয়ে রেস্ট নিয়ে ডিনার সেরে নিলাম। তারপর রাতে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। যেহেতু সারা দিনে অনেক জার্নি হয়েছে, তাই সবাই অনেক ক্লান্ত ছিলাম।

বালির রেস্তোরাঁর খাবার সুস্বাদু। ছবি: লেখক
বালির রেস্তোরাঁর খাবার সুস্বাদু। ছবি: লেখক


বালিতে ঘোরার প্রথম দিন
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে আমরা রেডি হয়ে বের হলাম উবুদের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার উদ্দেশে। ভ্রমণ প্ল্যান কবে কোথায় থাকব, কোথায় কোথায় ঘুরব, সবই আগে থেকে ঠিক করা ছিল। আমরা পুরো বালি ভ্রমণ একজন গাইড নিয়েই শেষ করেছিলাম। তাই প্রতিদিন নতুন করে ট্যাক্সি ভাড়া করার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। গাইডকে সবকিছু আগে থেকেই বলা ছিল, উনি সে অনুযায়ীই এসে আমাদের হোটেল থেকে নিয়ে যেতেন। প্রথমে আমরা গেলাম বার্ড পার্কে, তারপর সেখান থেকে ঘুরে আমরা সুন্দর একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে লাঞ্চ করলাম, একপাশে ধানখেত আর ভেতরে সুন্দর ফুল ফলের গাছ দিয়ে সুসজ্জিত করা অনেক সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাবার কিছুটা ইন্ডিয়ান টাইপ রেস্তোরাঁর মতো। লাঞ্চ শেষ করে আমরা গেলাম তেগেনানগান জলপ্রপাতে। বালির সুন্দরতম জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে এটি একটি। সুউচ্চ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে স্বচ্ছ পানির ঝরনাধারা, যা সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। সারা দিনের ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যায় আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম।

ইন্দোনেশিয়ার জীবন্ত আগ্নেয়গিরি
পরদিন ছিল আমাদের বালি ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে রেডি হলাম, ততক্ষণে গাইড আমাদের হোটেলের সামনে এসে অপেক্ষা করছিলেন। তারপর আমরা প্রথমেই গেলাম উবুদ মাংকি ফরেস্টে। উবুদের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে এটি একটি। এই ফরেস্ট এলে বানরদের মুক্তাঞ্চল, মোবাইলে পর্যটকদের ছবি তুলতে দেখলে বানরগুলো দূর থেকে দৌড়ে চলে আসে তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে, কখনো কখনো লাফ দিয়ে পর্যটকদের ঘাড়ের ওপর উঠে পড়ে। মাংকি ফরেস্টে বানরের সঙ্গে সেলফি তোলা শেষ করে আমরা গেলাম উবুদ প্যালেসে। উবুদের ঐতিহ্যের প্রতীক উবুদ রাজার ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদ ‘উবুদ প্যালেস’। বালির দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সুন্দর সুন্দর মন্দির রয়েছে। উবুদ প্যালেস থেকে বের হয়ে আমরা আশপাশের কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখলাম।

তারপর আমরা রওনা হলাম কিন্তামানি মাউন্ট বাতুর, জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে চারপাশের দৃশ্য এতটাই সুন্দর দেখলাম যে আমরা বিমোহিত হয়ে গেলাম। জায়গাটি বালির পূর্বে অবস্থিত। ১ হাজার ৭০০ মিটার উঁচু এই পর্বতে একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে, পাহাড় বেয়ে ছড়িয়ে থাকা শীতল লাভা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাউন্ট বাতুরের পাদদেশে আছে বালির সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক লেক বাতুর। পাহাড়ে বসে হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পাহাড়ের ওপর ছোট ছোট রেস্তোরাঁ গড়ে তোলা হয়েছে, আমরা সেখানে বুফে লাঞ্চ করলাম, সেই বুফে খাবারের স্বাদটাও দারুণ ছিল। সুন্দর এই জায়গায় আমরা বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে গেলাম। হোটেলে ফেরার পথে আমরা দেখলাম রাইস ট্যারেস (ধানখেত), কোথাও কোথাও দেখলাম রাস্তার পাশে সুন্দর কমলাবাগান। পর্যটকেরা এখান থেকে খুব সহজেই ফ্রেশ কমলা কিনতে পারেন। হোটেলে পৌঁছতে আমাদের সন্ধ্যা হলো।

সমুদ্রের নীল পানি আর আছড়ে পড়া ঢেউ খুব সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। ছবি: লেখক
সমুদ্রের নীল পানি আর আছড়ে পড়া ঢেউ খুব সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। ছবি: লেখক


নুসা লেম্বগান আইল্যান্ড
পরদিন ছিল আমাদের বালি ভ্রমণের তৃতীয় দিন। আমাদের গন্তব্য নুসা লেম্বগান আইল্যান্ড। এই আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটা ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যায়, রুকি নামক একটা ট্রান্সপোর্ট আছে, কিছুটা স্পিডবোটের মতো দেখতে আকারে একটু বড়। নূসা লেম্বগান আইল্যান্ডে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো ট্রান্সপোর্টের মধ্যে রুকি অন্যতম। এটা অনেক দ্রুতগতিতে চলে, আমরা এটাতেই গিয়েছিলাম। গিলি গেটওয়ে নামক জায়গা থেকে এই রুকি ছেড়ে যায়, নুসা লেম্বগানের উদ্দেশ্যে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নাশতা সেরে রেডি হয়ে সকাল ১০টায় আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করে বের হলাম, গাইড আগে থেকেই ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় আমরা গিলি গেটওয়ে পৌঁছালাম, দুপুর ১২টায় আমাদের বোট ছাড়ল। চারপাশে গাঢ় নীল পানির সমুদ্র মাঝখান দিয়ে আমাদের বোট খুব দ্রুতগতিতে ছুটে চলছিল। মনে হলো যেন উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে আমরাও দুলছিলাম, মাঝেমধ্যে সমুদ্রের পানির ছিটেফোঁটা আমাদের গায়ে এসে লাগছিল। প্রথমে একটু ভয় লাগলেও পরে সমুদ্রের সৌন্দর্যের কাছে সে ভয় ম্লান হয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা সমুদ্রযাত্রার পরে বেলা একটার দিকে আমরা নুসা লেম্বগান আইল্যান্ডে পৌঁছালাম।

দ্বীপটা একটু গ্রাম টাইপ, শান্ত-নিরিবিলি। এখানে থাকার জন্য সুন্দর রিসোর্ট, ভিলা পাওয়া যায়। আমরা ‘হারতা লেম্বগান’ নামক একটা ভিলায় ছিলাম। আমাদের ভিলাটা সমুদ্র থেকে একটু দূরে ছিল, তবে ভিলা থেকে সমুদ্র দেখা না গেলেও প্রাকৃতিক অনেক সুন্দর ভিউ ছিল। এখানে যাওয়ার রাস্তা একটু দুর্গম হলেও আশপাশের ভিউ দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। বেলা দুইটার দিকে ভিলায় পৌঁছালাম। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে গোসল, নামাজ সেরে আমরা গেলাম মাশরুম বিচ। আমাদের ভিলা থেকে সবচেয়ে কাছে ছিল মাশরুম বিচ, এখানে সমুদ্রের পাশে রেস্তোরাঁয় আমরা দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। কিছুক্ষণ বিচে ঘোরাঘুরি করলাম, ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এল। সন্ধ্যার পর আমরা আশপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে দেখলাম, তারপর হোটেলে ফিরে গেলাম। এখানে কয়েকটা গেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ আর কিছু দোকানপাট ছাড়া তেমন কিছুই নেই। নুসা লেম্বগান দ্বীপটা একটু গ্রাম টাইপের, রাস্তাঘাটও তেমন ভালো না, তাই চলাচলের জন্য তেমন যানবাহন পাওয়া যায় না। এখানে সারা দিন ঘোরার জন্য স্কুটি ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়াও খুব বেশি না, হোটেলের রিসেপশনের লোকদের বলে খুব সহজেই স্কুটি ভাড়া পাওয়া যায়।

পরদিন সকালে আমরা একটা স্কুটি ভাড়া নিয়ে প্রথমে গেলাম ডেভিস টিয়ারে, সেখানে যাওয়ার পর মনে হলো এত সুন্দর দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। সমুদ্রের নীল পানি আর আছড়ে পড়া ঢেউ খুব সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। ডেভিস টিয়ারে নীল পানির সমুদ্র দেখার পর আমরা ড্রিম বিচ, ইয়েলো ব্রিজ ঘুরে দেখলাম। তারপর ইয়েলো ব্রিজ পার হয়ে ওপারে গিয়ে কিছুক্ষণ পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় স্কুটি নিয়ে ঘুরে দুপুরে হোটেলে ফিরে গেলাম। গোসল, খাওয়া সেরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বিকেলে আমরা গেলাম সানসেট বে-তে সূর্যাস্ত দেখতে। নুসা লেম্বগানের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা এখানেই দেখেছি। সমুদ্রের নীল পানি সূর্যের আলো পড়ায় চিকচিক করছিল, দেখে মনে হলো সূর্যটা যেন সমুদ্রের মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে, অসম্ভব সুন্দর সে দৃশ্য। এমন মায়াময় সন্ধ্যা আমি আগে দেখিনি। সানসেট বেতে এমন সুন্দর মনমাতানো সন্ধ্যা উপভোগ করার পর রাতে রিসোর্টে ফিরে বিশ্রাম নিলাম। উল্লেখ্য, সময় কম থাকায় আমরা নুসা লেম্বগান আইল্যান্ডে মাত্র দুই দিন ছিলাম। পরদিন আমরা রওনা হলাম কুটা বিচের উদ্দেশ্যে।

বালিতে নুসা লেম্বগান আইসল্যান্ড, ডেভিস টিয়ারে নীল পানির সমুদ্র, ড্রিম বিচ, ইয়েলো ব্রিজ, নুসা দুয়া বিচ, উলুওন্টু টেম্পল, কুটা বিচ—কত কিছু যে আছে দেখার। ছবি: লেখক
বালিতে নুসা লেম্বগান আইসল্যান্ড, ডেভিস টিয়ারে নীল পানির সমুদ্র, ড্রিম বিচ, ইয়েলো ব্রিজ, নুসা দুয়া বিচ, উলুওন্টু টেম্পল, কুটা বিচ—কত কিছু যে আছে দেখার। ছবি: লেখক


অপূর্ব নুসা দুয়া বিচ
কুটাতে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল। কুটাতে হোটেলে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় বেলা তিনটা বেজে গেল। হোটেলে পৌঁছে জোহরের নামাজ, লাঞ্চ শেষ করে আমরা নুসা দুয়া বিচের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এটা বালির সবচেয়ে বড় বিচগুলোর মধ্যে একটি। পুরো নুসা দুয়া এলাকা খুব সুন্দর গোছানো এবং বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি দ্বারা সুসজ্জিত। এখানে সমুদ্রের পাশে অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে, মোটামুটি সব ধরনের খাবারই এখানে পাওয়া যায়, ড্রিংস থেকে শুরু করে রাইস আইটেম। প্রতিটি রেস্টুরেন্টের সঙ্গে মনোরম পরিবেশে বসার ব্যবস্থাও করা আছে, পর্যটকেরা এখানে বিশ্রাম নিতে নিতে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন। যেহেতু নুসা দুয়া বিচ অনেক বড়, তাই এটা পুরাটা ঘুরে দেখতে আমাদের একটু সময় বেশিই লেগেছিল। সন্ধ্যার পর আমরা এখান থেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, তাই আর কোথাও না গিয়ে হোটেলেই ফিরে গেলাম।

শেষ উলুওন্টু টেম্পল আর কুটা বিচে দিয়ে
পরদিন ছিল আমাদের বালি ভ্রমণের শেষ দিন। সকাল ১০টার দিকে আমরা হোটেল থেকে বের হলাম, উলুওন্টু টেম্পলের উদ্দেশ্যে। বালির সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। মন্দিরটি ১১ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়। হিন্দুদের জন্য এটি একটি বড় উপাসনালয়। মন্দিরটা ২৩০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। পাহাড়ের সঙ্গেই রয়েছে সমুদ্র, সমুদ্রের নীল পানির ঢেউ পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ছে, অসম্ভব সুন্দর সে দৃশ্য। সমুদ্রের একেবারেই পাশে অবস্থিত হওয়ায় এখানে হিমশীতল বাতাস প্রবাহিত হয়, মন্দিরের ভেতরে অনেক সুন্দর বসার জায়গা রয়েছে, দর্শনার্থীরা সেখানে বসে নির্মল বাতাসে নিজেদের ক্লান্তি দূর করে থাকে। মন্দিরের গেট দিয়ে ঢোকার পর ভেতরে অনেক সুন্দর ফুলগাছ এবং অন্যান্য গাছপালা দিয়ে সুসজ্জিত মনোরম পরিবেশ, যা খুব সহজেই দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। এই মন্দিরে ঢোকার আগে বেগুনি রঙের লুঙ্গির মতো একটি ড্রেস পরে নিতে হয়। এখানে অনেক বানর আছে, বানরগুলো খুব দুষ্টু প্রকৃতির। পর্যটকদের জুতা, চশমা, মানিব্যাগ সুযোগ পেলেই নিয়ে যায়। আমাদের সামনেই দেখলাম এক ভদ্রমহিলার চশমা নিয়ে গিয়েছে। তিনি চশমা খুলে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন, বানরটা সেই সুযোগে চশমা নিয়ে গিয়েছে। পরে অনেক কৌশলে চশমা ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমরা এখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তারপর গেলাম কুটা বিচে, সেখানে পৌঁছে লাঞ্চ সেরে নিলাম। বিচের আশপাশে রাস্তার পাশ দিয়েই অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা ম্যাকডোনাল্ডে লাঞ্চ করেছিলাম। এরপর বিচে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমরা গেলাম বালি শপিং মলে। পরের দিনই আমাদের ফিরতি ফ্লাইট থাকায় হাতে খুব বেশি সময় ছিল না। আমরা খুব বেশি কেনাকাটা করিনি। কিছু চকলেট, ব্যাগ, ড্রেস, শো পিস আর যেহেতু বালি কফির সুনাম রয়েছে সবার কাছে, তাই বেশ কিছু কফিও নিয়েছিলাম নিজেদের এবং গিফটের জন্য। শপিং মল থেকে কেনাকাটা শেষে আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম।

পরদিন সকালে সবকিছু গোছগাছ করে হোটেলে চেক আউট শেষে সকাল ১০টায় আমরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বেলা ১১টায় আমাদের ফ্লাইট। যেহেতু বেশ কিছুদিন পর দেশে ফিরে আসব, তাই মনের মধ্যে একরকম ভালো লাগা কাজ করছিল। সঙ্গে বালি ছেড়ে আসার জন্য একটু খারাপও লাগছিল। বেলা দুইটার দিকে আমরা মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। এখানে ট্রানজিট ছিল ৫ ঘণ্টা। সন্ধ্যা ৭টায় আমাদের মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার ফ্লাইট ছিল, বাংলাদেশ সময়ের রাত সাড়ে ১২টায় আমরা ঢাকা পৌঁছালাম।

এই অল্প কয়েক দিনের বালি ভ্রমণে এটাই মনে হয়েছে, ট্যুরিস্ট প্লেস হিসেবে বালি বেস্ট। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো অনেক সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সাজানো-গোছানো পরিবেশ, অতিথিপরায়ণতা, নিরাপত্তা—সবই আছে। ট্রাভেলিং আমাদের নতুন দেশ সম্পর্কে জানতে, নতুন কিছু শিখতে এবং নিজের মানসিকতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে—বালি ভ্রমণের এটি আরও বেমি মনে হয়েছে।